পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহের মতো বিষয়গুলো পরিবার ভাঙতে বড় ভূমিকা রাখছে। ইসলাম ও শরিয়াহর আলোকে পারিবারিক বন্ধন সুসংহত করতে ও আইনগত পরামর্শের জন্য চালু হয়েছে ‘ফ্যামিলি এইড’। পারিবারিক, মানসিক ও আইনগত যেকোনো বিষয়ে ভুক্তভোগীদের সহায়তা দেবে এই প্রকল্প।

আজ শনিবার পল্টনে নোয়াখালী টাওয়ারে বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের (বিআইএলআরসি) সামাজিক প্রকল্প ‘ফ্যামিলি এইডের’ আত্মপ্রকাশ হয়েছে।

ফ্যামিলি এইড প্রকল্প পরিচালক এবং বিআইএলআরসির নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমা সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন প্রভাবে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে। এতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সর্বোপরি ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসলামের আলোকে পরিবার গঠন নিয়ে সে রকম কাজ হয় না। সে জায়গা থেকেই ২০২৩ সাল থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

বিআইএলআরসির কর্মকর্তারা জানান, পারিবারিক  সমস্যা পাওয়ার পর বিশেষজ্ঞ দল যাচাই বাছাইয় শেষে তা নির্দিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। তারপর সেবা দেওয়া শুরু হয়। ‘ফ্যামিলি এইড’–এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট মনোবিদ, আইনজীবীসহ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে পাওয়া যাবে নানা সুবিধা। দুস্থ পরিবার হলে বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যেও সেবা দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৪ জন বিশেষজ্ঞ এই দলে কাজ করছেন।

মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান একাডেমি টোয়েন্টি ওয়ানের চেয়ারম্যান ও লেখক জিয়াউল হক বলেন, চার বছর আগে প্রতি ঘণ্টায় একটির বেশি তালাক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানেও সামাজিক অস্থিরতা চলছে। এতে পারিবারিক ভাঙন আরও বাড়বে। ৯০ ভাগ মানুষের যে দর্শন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সেটি একীভূত করে তাদের সহযোগিতা করার কাজ করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা মানজুর বলেন, বাংলাদেশে অধিকার নিয়ে কাজ করে যেসব সংগঠন, সেগুলো মূলত নারী ও শিশুকেন্দ্রিক। এ প্রকল্পের নামই ‘ফ্যামিলি এইড’। এখানে পরিবার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবারের একটি অংশকে কেন্দ্র করে কাজ করলে হবে না। কারণ, পুরুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এ বিষয়টিকে শরিয়াহর মধ্যে আনতে হবে। কারণ, শরিয়াহ পুরো বিষয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে দেখে।

সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা মানজুর আরও বলেন, ‘শরিয়াহর বিশেষত্ব হচ্ছে উভয় পক্ষকে সম্মান দিয়ে সমানভাবে দেখা হয়। যদিও আমাদের সমাজে অনেক সময় একে নারী-শিশুর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়, যা সঠিক নয়। বরং মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির সঙ্গেও শরিয়াহ বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ রুহুল আমীন রাব্বানী বলেন, ইসলাম সব সময় পরিবারকে টেকসই হিসেবে দেখতে চায়। আর এই দর্শনকে সামনে রেখেই ‘ফ্যামিলি এইড’ গঠিত হয়েছে।

মনোবিদ সুমাইয়া তাসনিম বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা যখন রোগী নিয়ে কাজ করি, একসময় সেটা পরিবার পর্যন্ত চলে যায়। সমস্যার গোড়া নিয়ে কাজ করতে চাইলে কাজ করতে হবে পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। মুসলিম এইড প্রকল্পে একই ছাদের নিচে প্রয়োজনীয় সব বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা পাওয়া যাবে, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ফ্যামিলি এইডের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মারদিয়া মমতাজ, অ্যাডমিন ও লিগ্যাল কনসালট্যান্ট ফাইজা তাবাসসুম প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প ইসল ম ক পর ব র ক জ কর সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।

মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।

আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ