পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় ও অধিকার রক্ষায় কাজ করবে ‘ফ্যামিলি এইড’
Published: 10th, May 2025 GMT
পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহের মতো বিষয়গুলো পরিবার ভাঙতে বড় ভূমিকা রাখছে। ইসলাম ও শরিয়াহর আলোকে পারিবারিক বন্ধন সুসংহত করতে ও আইনগত পরামর্শের জন্য চালু হয়েছে ‘ফ্যামিলি এইড’। পারিবারিক, মানসিক ও আইনগত যেকোনো বিষয়ে ভুক্তভোগীদের সহায়তা দেবে এই প্রকল্প।
আজ শনিবার পল্টনে নোয়াখালী টাওয়ারে বাংলাদেশ ইসলামিক ল রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের (বিআইএলআরসি) সামাজিক প্রকল্প ‘ফ্যামিলি এইডের’ আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
ফ্যামিলি এইড প্রকল্প পরিচালক এবং বিআইএলআরসির নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমা সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন প্রভাবে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হচ্ছে। এতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সর্বোপরি ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসলামের আলোকে পরিবার গঠন নিয়ে সে রকম কাজ হয় না। সে জায়গা থেকেই ২০২৩ সাল থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
বিআইএলআরসির কর্মকর্তারা জানান, পারিবারিক সমস্যা পাওয়ার পর বিশেষজ্ঞ দল যাচাই বাছাইয় শেষে তা নির্দিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। তারপর সেবা দেওয়া শুরু হয়। ‘ফ্যামিলি এইড’–এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট মনোবিদ, আইনজীবীসহ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে পাওয়া যাবে নানা সুবিধা। দুস্থ পরিবার হলে বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যেও সেবা দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৪ জন বিশেষজ্ঞ এই দলে কাজ করছেন।
মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান একাডেমি টোয়েন্টি ওয়ানের চেয়ারম্যান ও লেখক জিয়াউল হক বলেন, চার বছর আগে প্রতি ঘণ্টায় একটির বেশি তালাক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানেও সামাজিক অস্থিরতা চলছে। এতে পারিবারিক ভাঙন আরও বাড়বে। ৯০ ভাগ মানুষের যে দর্শন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সেটি একীভূত করে তাদের সহযোগিতা করার কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা মানজুর বলেন, বাংলাদেশে অধিকার নিয়ে কাজ করে যেসব সংগঠন, সেগুলো মূলত নারী ও শিশুকেন্দ্রিক। এ প্রকল্পের নামই ‘ফ্যামিলি এইড’। এখানে পরিবার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবারের একটি অংশকে কেন্দ্র করে কাজ করলে হবে না। কারণ, পুরুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এ বিষয়টিকে শরিয়াহর মধ্যে আনতে হবে। কারণ, শরিয়াহ পুরো বিষয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে দেখে।
সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা মানজুর আরও বলেন, ‘শরিয়াহর বিশেষত্ব হচ্ছে উভয় পক্ষকে সম্মান দিয়ে সমানভাবে দেখা হয়। যদিও আমাদের সমাজে অনেক সময় একে নারী-শিশুর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়, যা সঠিক নয়। বরং মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির সঙ্গেও শরিয়াহ বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড.
মনোবিদ সুমাইয়া তাসনিম বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা যখন রোগী নিয়ে কাজ করি, একসময় সেটা পরিবার পর্যন্ত চলে যায়। সমস্যার গোড়া নিয়ে কাজ করতে চাইলে কাজ করতে হবে পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। মুসলিম এইড প্রকল্পে একই ছাদের নিচে প্রয়োজনীয় সব বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা পাওয়া যাবে, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ফ্যামিলি এইডের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মারদিয়া মমতাজ, অ্যাডমিন ও লিগ্যাল কনসালট্যান্ট ফাইজা তাবাসসুম প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প ইসল ম ক পর ব র ক জ কর সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনাইদহে ১৫ মাসে বিজিবির অভিযানে জব্দ শতকোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস
ঝিনাইদহে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জব্দ করা শতকোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মহেশপুরে ৫৮ বিজিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়। মাদকগুলো গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে জব্দ করা হয়।
বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মহেশপুর ও জীবননগর সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫ হাজার ৮১৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩৮ হাজার ৯৮০ বোতল ভারতীয় মদ, ২৯ বোতল এলএসডি, ৯০ কেজি কোকেন, ৩৬ কেজি হেরোইন, ৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১৩০ কেজি গাজা, ৬৬ হাজার ইয়াবা বড়ি, ২১ হাজার ভায়াগ্রা এবং ২০ হাজার বাংলাদেশি ও ভারতীয় ওষুধ ধ্বংস করা হয়। ধ্বংস করা মাদকের বাজারমূল্য ১১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার ২০২ টাকা।
মাদকদ্রব্য ধ্বংস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজিবির যশোর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির। এ সময় অন্যদের মধ্যে কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার আহসান হাবিব, ঝিনাইদহ ৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল রফিকুল আলমসহ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির বলেন, মাদক থেকে দেশকে রক্ষা করতে সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজরদারি রেখেছে। পাশাপাশি মাদকের বিস্তার রোধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের সন্তানের চলাফেরার গতিবিধিতে খেয়াল রাখতে হবে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি মাদক চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। প্রতিদিনই সীমান্তে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির হাতে মাদকের চালান ধরা পড়ছে। তবে যা আটক হচ্ছে, তার কয়েক গুণ ঢুকছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশপুরে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত আছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ কিলোমিটারে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। এলাকাজুড়ে আছে কোদলা নদী। এসব এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে মাদকদ্রব্য আসছে। বিভিন্ন সময় এসব সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে পারাপার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও স্বর্ণও আটক হচ্ছে।
ঝিনাইদহ ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, মাদক পাচার রোধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে বিজিবি। সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।