রাজবাড়ীতে চুরির অভিযোগে তরুণকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪
Published: 17th, May 2025 GMT
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুরে মোটর পাম্প চুরির অভিযোগে শাহিন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামের এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাঁকে মারধর করা হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত শাহিন শেখ সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর মধ্যপাড়া গ্রামের জিন্নাহ শেখের ছেলে। এ ঘটনায় নিহত তরুণের মামা কালাম মোল্লা আজ শনিবার ভোরে রাজবাড়ী সদর থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
রাজবাড়ী সদর থানার পুলিশ গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে সদর হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে। আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন রাজাপুর মধ্যপাড়া গ্রামের জহির উদ্দিন বিশ্বাস (৬৫), মৈজদ্দিন বিশ্বাস (৫৫), ফরহাদ বিশ্বাস (৪৫) ও মুন্নু মোল্লা (৫০)।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কয়েক দিন আগে রাজাপুর মধ্যপাড়া গ্রামের শামসুদ্দিন ওরফে শাম বিশ্বাসের বাড়ি থেকে একটি মোটর পাম্প চুরি হয়। এতে শাহিন শেখকে সন্দেহ করা হয়। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সালিসের কথা বলে শাহিন শেখকে শামসুদ্দিন বিশ্বাসের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে জহির উদ্দিন বিশ্বাস ও শামসুদ্দিন বিশ্বাসের নির্দেশে এজাহারভুক্ত আসামিরা তাঁকে বাঁশের লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন।
নিহত তরুণের মামা কালাম মোল্লা বলেন, পিটুনিতে শাহিনের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত জখম হয়। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সবাই তাঁকে ফেলে পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, চুরির অভিযোগে শাহিন শেখকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনার পর রাতেই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চুরির অপবাদ দিয়ে যুবককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা
রাজবাড়ীতে চুরি ও ভিডিও করার অপবাদ দিয়ে এক যুবককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও বাদী জানেন না বলে দাবি করেছেন।
শুক্রবার রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে সামসুদ্দিন বিশ্বাস ওরফে সাম বিশ্বাসের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহীন শেখ (২৭) একই গ্রামের জিন্নাহ শেখের ছেলে। প্রতিবেশী সামসুদ্দিন ও তার স্বজনরা শাহীনকে হত্যা করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের। সামসুদ্দিন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক রাজবাড়ী শাখায় অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা হয়। বাদী নিহত শাহীনের মামা কালাম মোল্লা মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। এতে মামলার এজাহার নিয়ে ধোঁয়শার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ রাতেই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা একই গ্রামের জহিরুদ্দিন বিশ্বাস, মৈজদ্দি বিশ্বাস, ফরহাদ বিশ্বাস ও মুন্নু মোল্লা।
শুক্রবার দুপুরে অভিযুক্ত সামসুদ্দিনের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী রাহেলা পারভীন দাবি করেন, তাদের বাড়ির মোটর চুরি করেছেন শাহীন। এ ছাড়া পরিবারের এক সদস্যের ভিডিও করেছেন। এ জন্য তার ছেলে ও অন্যরা শাহীনকে মারধর করে। বাড়ির ভেতরে তখন অনেক লোক ছিল। শাহীন গণপিটুনিতে মারা গেছেন বলে দাবি তার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শাহীনের দূরসম্পর্কের নানি আমেনা খাতুন বসন্তপুর ইউনিয়নের একজন গ্রামপুলিশ। তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সালিশ বসার আগেই সামসুদ্দিনের স্বজনরা বাড়ি থেকে শাহীনকে ধরে নিয়ে যান। শাহীনকে সামসুদ্দিনের বাড়িতে আটকে রেখে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় তিনি (আমেনা) এর প্রতিবাদ করে বলেন, দেশে আইন-কানুন আছে। সামসুদ্দিনের ভাই মুক্তার বিশ্বাস জবাব দেন, আইন-কানুন পরে দেখা যাবে। এর কিছুক্ষণ পর শাহীনকে ঘর থেকে অচেতন অবস্থায় বের করা হয়। তারা একজন গ্রাম্য চিকিৎসককে ডেকে শাহীনকে দেখায়। পরে তারাই শাহীনকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহত শাহীনের ভগ্নিপতি আবু তাহের জানান, শাহীনের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। বাটন ফোন আছে। তা দিয়ে ভিডিও করা যায় না। অথচ তারা ভিডিওর অপবাদ দিয়েছে। শাহীনের দুটি মেয়ে আছে। ওদের এখন কী হবে?
নিহত শাহীনের বাবা জিন্নাহ শেখ জানান, তিন মাস আগে সামসুদ্দিনের একটি মোটর হারিয়ে যায়। তিনি এতদিন পর ভিডিওর কথা বলে তার ছেলেকে ধরেছেন। এ হত্যার সঙ্গে সামসুদ্দিন, তার ভাই মুক্তার, রাসেল, কচি, রাফিজুল ও সৌরভ জড়িত। যে চারজনকে পুলিশ ধরেছে, তারা সালিশ করতে গিয়েছিলেন। রাতে পুলিশ তার শ্যালক কালামকে নিয়ে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়। পরে শোনেন মামলা হয়েছে। তিনি কালামকে মামলা করতে বলেননি।
মামলার বাদী কালাম মোল্লা সমকালকে জানান, মামলার বিষয়টি তিনি জানেন না। পুলিশ তাকে স্বাক্ষর করতে বলায় তিনি করেছেন।
সামসুদ্দিনের কর্মস্থলে গিয়ে জানা যায়, অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
মামলার বিষয়টি বাদীর না জানা প্রসঙ্গে রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, এটি হয়তো ভয়ে বলছেন। শাহীনের বাবার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজন রয়েছে। চারজনকে ধরা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।