কুমিল্লা বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা
Published: 19th, May 2025 GMT
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের দায়ী করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন মো.
আরো পড়ুন:
পুলিশের ওপর হামলা: খালাস পেলেন সাবেক এমপিসহ বিএনপির ২৮ নেতাকর্মী
মানিকগঞ্জ জেলা আ. লীগ নেতা কারাগারে
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় নগরীর ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে বিএনপির কার্যালয়ের আশপাশে একদল লোক হঠাৎ করে হামলা চালায়। তারা লাঠি, রড ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। পরে কার্যালয়ের একটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। হামলায় অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাদী ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করি। এরপরই থানায় মামলা করি। দলের কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় দেয়া হবে না—দলীয় ও আইনগত উভয়ভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করেছেন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী। তাদের দাবি, ছাত্রদলের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পদবঞ্চিত নেতাদের একটি অংশ এ হামলায় জড়িত থাকতে পারে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
ঢাকা/রুবেল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রদলের পদধারী ও পদবঞ্চিতরা মুখোমুখি সংঘাতের আশঙ্কা
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণার জেরে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। কয়েক দিন ধরে কমিটির পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়েছে নগরীতে। জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে পদধারী ও পদবঞ্চিত পক্ষ দুটি। যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। গত ১৫ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ৬ ও ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে কাজী জোবায়ের আলম জিলানীকে সভাপতি ও এমদাদুল হক ধীমানকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল এবং নাহিদ রানাকে সভাপতি ও ফায়াজ রশিদ প্রিমুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি দুটি গঠন করা হয়। এই খবর জানাজানি হলে ১৫ মে রাতে পদবঞ্চিতরা বিক্ষুব্ধ হয়ে নেমে পড়েন নগরীর সড়কে। তাদের মুখে মুখে প্রতিবাদী স্লোগান ছিল– ‘অবৈধ পকেট কমিটি মানি না, মানব না।’ এর পর নগরীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিক্ষোভ শেষে নগরীর পূবালী চত্বরের সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এদিকে নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে নগরীতে আনন্দ মিছিল বের করে জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে নগরীতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা ফের বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মহানগর এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা।
মহানগর ছাত্রদলের একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, নির্যাতিত ও ত্যাগী কর্মীদের কাঙ্ক্ষিত পদ দেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, দলের ২৭টি ওয়ার্ড এবং কোনো কলেজ শাখা থেকে নেতাকর্মীকে সদস্য রাখা হয়নি। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন আজমীর হোসেন শরীফ। তাঁকে রাখা হয়েছে ৪ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক পদে। আজমীর বলেন, যারা জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। দলে কোনো অবদান ও পরিচিতি নেই এমন কর্মীদের শীর্ষ পদ দেওয়া হয়েছে। বিতর্কিত এই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।
মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন মো. মহসিন। তাঁকে কোনো পদে রাখা হয়নি। পদবঞ্চিত এই নেতা জানান, গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের আমলে যারা আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ছাত্রদলের নবগঠিত মহানগর ও দক্ষিণ জেলা কমিটিতে তাদের ঠাঁই হয়নি। জেলা কমিটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ জানান, তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তাঁকে কমিটিতে রাখা হয়নি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নবগঠিত মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ রানা। তাঁর ভাষ্য, যারা পদবঞ্চিত দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন, তাদের কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে বিদ্রোহ করছেন। জেলা ও মহানগরে ডজনের অধিক ছাত্রনেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে সবাই যোগ্য, সংগ্রামী ও ত্যাগী। কিন্তু সবাইকে তো আর ওই দুটি পদে রাখা সম্ভব নয়। দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দিয়েই মহানগর এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
মহানগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির কাছে দাবি করেছিলাম নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড এবং ১২টি কলেজের নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সম্মেলন করে মহানগরের কমিটি ঘোষণা করার। কিন্তু তা করা হয়নি। এতে বিগত সরকারের সময়ে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা দলে কাঙ্ক্ষিত পদ পেলেন না। আশা করি, কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।’
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুর ভাষ্য, বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা। এটি নিঃসন্দেহে বিএনপির ভেতরে অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্রের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, বরং দলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী সুযোগসন্ধানী চক্রের আসল পরিচয় তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, এই অপশক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।