পাঁচ বছরের মেয়ে উম্মে তুরাইফাকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন জাহেদুল ইসলাম শান্ত (২৭)। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জেসমিন আক্তার। পথিমধ্যে বাসচাপায় পিষ্ট হয়ে বাবা-মেয়ের একটি করে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাতের হাড় ভেঙে যায় জেসমিনের। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সোমবার মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী বাঘা উপজেলার বানিয়াপাড়ায়। শান্ত পাশের জেলা নাটোরের লালপুর উপজেলার জামতলা গ্রামের প্রবাসী এজাহার আলীর ছেলে। তিনি হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর মেয়ে তুরাইফা বাঘার গ্রিন হ্যাভেন স্কুলের প্লে শ্রেণিতে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে মোটরসাইকেলে মেয়েকে স্কুলে রাখতে যাচ্ছিলেন শান্ত। সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে ছিলেন তাঁর স্ত্রী জেসমিন। পথে বাঘা পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকায় ঢাকাগামী সুপারসনি নামে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় তুরাইফা ও শান্তর ডান পা হাঁটুর ওপরের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছিটকে সড়কে পড়ে ডান হাতের হাড় ভেঙে আহত হন জেসমিন। তিনজনকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হলে শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।  বাঘা থানার ওসি আ ফ ম আছাদুজ্জামান জানান, বাস জব্দ করা হয়েছে। চালক পলাতক।
এদিকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন অডিট কর্মকর্তাসহ ৪ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল ভোরে ঠাকুরগাঁও-রংপুর মহাসড়কের ২৬ মাইল নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন– ঠাকুরগাঁও জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসের অডিটর জুলফিকার আলী (৪৬), সহকারী অডিটর ইমরুল হোসেন (৪৫), দিনাজপুর হিসাবরক্ষণ অফিসের সুপার দেলোয়ার হোসেন (৫০) ও গাড়িচালক মানিক হোসেন (৩২)। আহতরা হলেন– বালিয়াডাঙ্গি হিসাবরক্ষণ অফিসের সহকারী অডিটর মিজানুর রহমান সরকার, একই অফিসের সুপার আল মামুন ও দিনাজপুর জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সুপার নাহিদ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে অডিট বিভাগের বেশ কয়েকজন রংপুরে একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। পথে বীরগঞ্জের ২৬ মাইল নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টভর্তি ট্রাকের সঙ্গে তাদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই দু’জন মারা যান। আহত হন ৫ জন। আহতদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে আরও দু’জন মারা যান। 

এদিকে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় দুই বাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চারগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– বাসচালক আবুল কালাম ও যাত্রী তৌকির আহমেদ। নিহত আরেক বাসচালকের নাম জানা যায়নি।
পুলিশ জানায়, বিকেলে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া কুমিল্লাগামী একটি বাস উপজেলার মিরপুর চারগাঁও এলাকায় পৌঁছলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আরেক বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই কুমিল্লাগামী বাসচালকসহ দু’জন প্রাণ হারান। আহত ২০ যাত্রীকে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে তৌকির মারা যান।
মাগুরায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। সদর উপজেলার ইছাখাদা ও কেচুয়াডুবি এলাকায় গতকাল এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাগুরা হাইওয়ে পুলিশের এসআই মাহাবুবুর রহমান জানান, সকালে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের ইছাখাদা এলাকায় মাহিন্দ্রার সঙ্গে বাস ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মাহিন্দ্রায় থাকা আব্দুস সালাম খান (৬০) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। দুপুরে মাগুরা-যশোর মহাসড়কের কেচুয়াডুবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় মারা গেছে মারিয়া নামে এক শিশু।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাস, মোটরসাইকেল ও ট্রাক্টরের সংঘর্ষে সুরুজ আলী (২২) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। দুপুরে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় হাতেম আলী (৫৩) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার তাড়াশ- মহিষলুটি আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে। চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মতলব-বাবুরহাট পেন্নাই সড়কের বরদিয়া আড়ং বাজার এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় জীবন দালাল (৬৫) নামের এক মুদি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর বিমানবন্দরের কাওলা মহাসড়কে গতকাল দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় রাজন মোল্লা (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ফাহিম ও মামুন নামে দু’জন। গতকাল ভোর রাতে কাওলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাজনের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদেরপাড়া গ্রামে। তিনি স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে মিরপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে তাঁর গার্মেন্ট যন্ত্রাংশের ব্যবসা ছিল। রাতে মালপত্র ডেলিভারি দিয়ে ভোরে দুই বন্ধুকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। পুলিশ জানায়, ঘাতক ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। চালক পলাতক। তাঁকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। 
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন এ দ র ঘটন অফ স র স উপজ ল র এল ক য় ঠ ক রগ এ ঘটন গতক ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের আমদানি বিধিনিষেধ: বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারা

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে দেড় বছর ধরে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের বিএসপি ফুড প্রোডাক্টস। স্থলপথে ভারতে রপ্তানির ওপর ভর করেই ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। গত শনিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাস গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব। আবার রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’

অজিত কুমার দাস আরও জানান, ভারতের বিধিনিষেধের আগে ৪২ হাজার কার্টনের খাদ্যপণ্যের একটি চালানের কার্যাদেশ ছিল। এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদনও হয়েছে। তবে এখন এসব পণ্যের রপ্তানি আটকে গেছে।

আমাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রায় পুরোটাই রপ্তানি হয়। আমাদের উৎপাদিত কুকিজ, টোস্ট ও সল্টেড বিস্কুটের বড় বাজার আসাম, ত্রিপুরা ও কলকাতা। এখন আসাম ও ত্রিপুরায় যদি কলকাতা হয়ে ঘুরপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তাহলে পরিবহন খরচই বাড়বে এক লাখ টাকা। বাড়তি এ খরচ বহন করা ক্রেতার পক্ষে অসম্ভব।বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অজিত কুমার দাস

ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বিএসপি ফুড প্রোডাক্টসের মতো অনেক ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্য খাতের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেশি, যারা সেভেন সিস্টার হিসেবে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে। তার বাইরে তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।

কয়েকজন রপ্তানিকারক জানান, ভারতে কয়েকটি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা–সক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। এই ধাক্কা বড় প্রতিষ্ঠান সামলাতে পারলেও ছোটরা পারবে না। হাতে থাকা ক্রয়াদেশের পণ্য রপ্তানি না করতে পারলে বড় লোকসান গুনতে হবে। তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্রুত আলোচনা শুরু করে এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান তাঁদের।

এদিকে ভারতের বিধিনিষেধ পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান। পররাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

অন্য খাতের চেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য খাতের কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেশি, যারা সেভেন সিস্টার হিসেবে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে।

ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ হলো স্থলপথ। এই পথে দ্রুত পণ্য পাঠানো যায়। খরচও কম। তবে গত শনিবার দেশটি স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশটি বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ১৬ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। এসব পণ্যের বড় অংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব

গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাব, সুতার উপজাত, ফল-ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য রপ্তানি করে ১৬৬ প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান।

ফেনীর স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টস গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেভেন সিস্টারে পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতি মাসে ২৫-৩০ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে তারা। ভারত ছাড়াও লন্ডন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে গড়ে ২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে।

স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পথে পণ্য নেবেন কি না, কিংবা ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ দেবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক

পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বিক্রমপুর প্লাস্টিক চার-পাঁচ বছর ধরে ভারতের সেভেন সিস্টারে গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্য ও প্লাস্টিকের আসবাব রপ্তানি করে। বর্তমানে তাদের কাছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলারের রপ্তানি ক্রয়াদেশ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিক্রমপুর প্লাস্টিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পণ্য রপ্তানির বড় বাজার ভারত। বিধিনিষেধের কারণে এখন রপ্তানিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত অর্থবছর গ্রুপটি ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য পাঠানো হয়েছে স্থলপথ দিয়ে। বিধিনিষেধের কারণে গত রোববার বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে ১৭ ও সিলেটের শেওলা স্থলবন্দরে ২ ট্রাক পণ্যের চালান আটকে যায় তাদের। এসব ট্রাক ঢাকায় ফিরিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে গ্রুপটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে ৬০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এসব পণ্য উৎপাদনের গতি আমরা কমিয়ে দিয়েছি।’

বর্তমানে আমাদের কাছে ভারতের ৩০-৩৫ লাখ টাকার প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ক্রয়াদেশ রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভারতীয় ক্রেতারা বিকল্প পথে পণ্য নেবেন কি না, কিংবা ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ দেবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।স্টারলাইন ফুড প্রোডাক্টসের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিনপোশাক রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পড়বে

বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানির ৭৬ শতাংশই স্থলবন্দর দিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশি ৫৩০টি প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে বড় শিল্পগোষ্ঠী ছাড়া ছোট-মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। দেশটিতে শার্ট, প্যান্ট, টি–শার্টের পাশাপাশি শাড়ি-লুঙ্গিও রপ্তানি হয়।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেসার্স জামদানি ট্রেন্ডস নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর স্থলবন্দর দিয়ে তাঁতের লুঙ্গি-শাড়ি রপ্তানি করে ভারতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শহীদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে এ সপ্তাহে শাড়ি-লুঙ্গির চালান রপ্তানির কথা ছিল। কিন্তু এখন তা আটকে গেছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের নানা জায়গায় তাঁতবস্ত্রের ছোট ছোট কারখানা থেকে লুঙ্গি, শাড়ি তৈরি করিয়ে নেয়। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ তাঁতপণ্য প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এসব তাঁতবস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী। ভারতের সিদ্ধান্তে এখন ছোট ছোট তাঁতের কারখানা বিপদে পড়বে। কম দামের কারণে ভারতের বাজারে বেশ ভালো অবস্থান ছিল বাংলাদেশের তাঁতবস্ত্রের।

সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের বিষয়টি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানেই গুরুত্ব দিতে হবে। উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ