বগুড়ার আদমদীঘিতে পূর্বশত্রুতার জেরে মোবাইল ফোনচোর আখ্যা দিয়ে মতিউর রহমান নামে এক আদম ব্যবসায়ীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

সোমবার রাতে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে একজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের হাবিবুর রহমানে ছেলে মতিউর মাছ ব্যবসার পাশাপাশি গত দেড় বছর ধরে বৈধভাবে বিদেশে মানুষ পাঠিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে ৩-৪ জনকে সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। ১৫ দিন আগে আদমদীঘির তালশন গ্রামের হেলাল প্রমানিকের ছেলে সজিব হোসেনকে পাঠান। এ বাবদ সজিবের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু সৌদি আরবে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সজিব তার বাবাকে পাঠিয়ে হুমকি দেন।

মতিউর বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকায় মেয়ে মনিকার বাসায় বেড়াতে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে রোববার দুপুরে সান্তাহারগামী দোলনচাঁপা কমিউটার ট্রেনে ওঠেন। বগুড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠার পর থেকে একই বগিতে থাকা সজিবের ভাই রাকিব ও ডহরপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সুমনের নেতৃত্বে ৬-৭ জন মাস্ক পরিহিত ব্যক্তি মতিউরকে নজরদারি করছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ট্রেন আদমদীঘির নসরতপুর স্টেশন এলাকায় পৌঁছলে তারা তাকে মোবাইল চোর আখ্যায়িত করে মারধর ও ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তিনি ৪-৫ মিনিট ট্রেনের সঙ্গে ঝুলতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা মতিউরের কাছে থাকা ব্যবসার ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে হাত ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন। ট্রেন নসরতপুর স্টেশনে পৌঁছলে প্লাটফরমের ধাক্কা খেয়ে তিনি নিচে পড়ে যান। এ সময় উৎসুখ জনতা চোর ভেবে তাকে মারধর করেন। তার পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। অল্পের জন্য তিনি ট্রেনে কাটা পড়েননি। পরে মতিউরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। 

এরপর সোমবার রাতে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে উপজেলার ডহরপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সুমনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

সান্তাহার রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, নসরতপুর রেলস্টেশনের ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নওগ

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, আসলে ঘটনা কী    

চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলছেন এক ব্যক্তি। কিন্তু ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ তার হাত ধরে রেখেছেন। একপর্যায়ে ভেতর থেকে হাত ছেড়ে দিলে লোকটিকে রেললাইনে পড়ে যেতে দেখা যায়। এ ঘটনার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশন এলাকায়। 

ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তারর বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে অনেকেই মতিউরকে চোর এবং ছিনতাইকারী বলে দাবি করা হয়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, মতিউর অটোরিকশাচালক ছিলেন। দুই বছর ধরে দূতাবাস এবং এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন তিনি। ১৫ দিন আগে বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন তিনি। সৌদি আরবে যাওয়ার পর বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা সপ্তাহখানেক আগে মতিউরের বাড়ি যান এবং কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তারই জেরে বগুড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেন। এবং তার কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ মতিউরের পরিবারের।  

মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার বাবা অটোরিকশাচালক ছিলেন। গত দেড় বছর ধরে সৌদি আরবের লোক পাঠানোর কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ৩-৪ জনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন, তারা সেদেশে ভালোই আছে। ১৫ দিন আগে আমার বাবা বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার তালশন গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠান। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীব তার বাবাকে আমাদের বাড়িতে পাঠান। তার বাবা বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে যান। আর বগুড়া থেকে ট্রেনে বাড়িতে ফেরার পথে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং তার শ্যালকরা আমার বাবাকে মোবাইল চোর বলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং প্রায় ৪-৫ মিনিট ট্রেনে ঝুলিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে ট্রেনটি আদমদিঘী উপজেলার নশরতপুর স্টেশনে পৌঁছালে সেখানকার প্লাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আমার বাবা ট্রেনের নিচে পড়ে যান। ট্রেনের নিচে পড়লেও বাবা কোনোরকম প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু সেখানকার উৎসুক জনতা বাবাকে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী ভেবে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন।’ 

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘বাবাকে কোনোরকম সেখান থেকে উদ্ধার করে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আদমদীঘি থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারা আমার অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এবং আদমদিঘী থানার ওসি আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। তিনি আমাকে বলেন, এটি রেলওয়ের বিষয়, এই অভিযোগ সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গিয়ে করুন। আদমদিঘী থানা পুলিশের কথা শুনে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে যাই। তবে সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশ জানায়, আপনার বাবা জীবিত। মারা গেলে মামলা নেওয়া যেত। আমরা এখন কোথায় অভিযোগ করব? আমার বাবা তো ছিনতাইকারী না। তিনি বৈধ পথে ব্যবসা করছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারের বাসিন্দা নেহাল আহমেদ বলেন, ‘মতিউরকে দীর্ঘদিন থেকে চিনি। তার মাধ্যমে আমার দুই আত্মীয়কে বিদেশে পাঠিয়েছি। একজন সৌদি আরবে এবং আরেকজন মালয়েশিয়াতে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। মতিউরের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে কখন কারও ঝামেলা হতে দেখিনি।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাকিব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

অভিযোগের বিষয়ে সজীবের বাবা মোহাম্মদ হেলালের যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘৪০ দিন আগে সজীবকে মতিউরের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার ছেলে কাজের সুযোগ পায়নি। এ নিয়ে তার সঙ্গে অনেকবার দেখা করতে চেয়েছি। সে আমার সঙ্গে দেখা না করে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাত থেকে আট দিন আগে তার বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম ছেলের বিষয়ে জানতে, তবে সেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি।’

মতিউরকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে ছেলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বগুড়া থেকে আসার সময় সজীবের শ্যালকরা ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে মতিউরকে ফেলে দেয়। তবে রাকিব সেখানে কিছুই করেনি। ট্রেনে কি হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

অভিযোগের বিষয়ে বগুড়া আদমদিঘী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটি রেলওয়ে পুলিশের বিষয়। তাই আমরা কোনো অভিযোগ নেয়নি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি জিআরপি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তারা প্রথমে আদমদিঘী থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদেরকে জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। তখন তারা আমার থানায় এসেছিলেন। আসার পরে তাদেরকে নাকি আবার আদমদীঘি থানা থেকে ফোন করা হয়। তখন তারা আবারও আদমদিঘী থানায় অভিযোগ জানাতে চলে যান। পরবর্তীতে তারা আর আমার থানায় আসেননি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা সবসময় অভিযোগ এবং তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল: ভুক্তভোগীর পরিবারের মামলা না নেওয়ার অভিযোগ
  • চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, আসলে ঘটনা কী