বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সরবরাহে অনেক বছর ধরে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইউরোপের ‘লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি’ বা এলডিসি। ২০২২ সালে বাংলাদেশে কার্যালয় খোলে কোম্পানিটি। তিন বছরের মাথায় এখন বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে নিজস্ব উৎস থেকে পণ্য আমদানি করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা করছে তারা। সিঙ্গাপুরে অবস্থিত এলডিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

এলডিসির তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭৪ বছরের পুরোনো এই বহুজাতিক কোম্পানির বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ব্যবসা রয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ‘লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে। কৃষিপণ্য সরবরাহে ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম তারা এ দেশে কোম্পানি খুলে কার্যক্রম শুরু করে।

বাংলাদেশে বছরে এখন দেড় হাজার কোটি ডলার বা ১৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি হয়। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে মানুষের খাদ্য, প্রাণিখাদ্য ও রপ্তানিপণ্যের কাঁচামাল। এই তিন খাতে চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বাড়ছে। বাজার বড় হতে থাকায় এর আগে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাগ্রোকর্প, সুইস সিঙ্গাপুর ও ইটিজি এ দেশে কার্যালয় খুলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এলডিসিও বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে এলডিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের প্রধান রুবেন্স মার্কেস প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বড় পরিসরে আমদানি করতে পারে না। তাদের জন্য এলডিসির বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বিতরণপ্রক্রিয়া সহজ করাই আমাদের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে বছরজুড়ে ভোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে কৃষিপণ্য হাতে পাবেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য আমদানি করে মূলত সাড়ে পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান। বড় শিল্পগ্রুপগুলো জাহাজ ভাড়া করে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে। আবার সক্ষমতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারে না। মূলত ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে স্থানীয়ভাবে সরবরাহের পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।

লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি মূলত বিশ্বের কৃষি উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলো থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। উৎপাদন থেকে প্রক্রিয়াজাত, পরিবহন ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত কোম্পানিটি বিশ্বজুড়ে সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেমন ভারতে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে এলডিসি। ভারতে কোম্পানিটির একটি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা ও একটি কফি প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। বাজার বড় হচ্ছে, বড় পরিকল্পনা এলডিসির এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে প্রায় ১৩৩ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য সরবরাহ করেছে এলডিসি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, সয়াবিন বীজ, ক্যানোলা বীজ, অপরিশোধিত চিনি, সয়াবিন তেল, ভুট্টা, সয়া কেক, তুলা ইত্যাদি। এলডিসি এসব পণ্য সরবরাহ করেছে বিশ্বের ১৯টি দেশ থেকে। এর মধ্যে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ হয়েছে মোট পণ্যের ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, বাদশা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান এলডিসি থেকে নিয়মিত পণ্য আমদানি করে।

বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে এলডিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে রুবেন্স মার্কেস জানান, বাংলাদেশের বাজারে পণ্যভিত্তিক সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এলডিসি। এ জন্য শুরুতে খাদ্যশস্য, তেলবীজ ও ডালের সরবরাহ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কৃষিপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এনবিআরের হিসাবে, গত বছর ৩৭৪ কোটি ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে তুলা আমদানিতে এক থেকে দুই মাস লাগে। তাই তুলার সরবরাহব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে এলডিসির।

এ বিষয়ে রুবেন্স মার্কেস জানান, বাংলাদেশে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা সরবরাহে অবকাঠামো উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে এলডিসি। কাঁচামাল আমদানিতে বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোর মূলধন যাতে দীর্ঘ সময় আটকে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে চায় এলডিসি। শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক সম্ভাবনা হিসেবে বাংলাদেশকে দেখছে এলডিসি। কারণ, বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাজার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক র য় জ ত এলড স র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কোথাও পানিতে ময়লা-পোকা কোথাও পানি নেই

কোথাও পানি সংকট। কোথাও পানি আসে ঘোলা, সঙ্গে ময়লা ও পোকা। সিটি করপোরেশনের নালা নির্মাণ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সমস্যা সমাধানে নতুন নেওয়া প্রকল্পগুলো শেষ হতে অন্তত দেড় বছর লাগবে। 

পানি নিয়ে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। কমিশনাররা নেই। নেই মেয়র। প্রশাসক আসেন এক বা দুই দিন। কখনও আসেন না। তাই নগরবাসীর অভিযোগ জানানোর জায়গাও নেই। অভিযোগ পেলেও লোকবল সংকট, অর্থ সংকটে কাজ করতে পারছে না সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ। ৬৫ ভাগ গ্রাহকই পানির বিল দেন না। অন্যদিকে ওয়াসা আমলের দুর্নীতির ফলে সৃষ্ট জটিলতা চেপেছে সিটি কর্পোরেশনের ঘাড়ে। 

নগরীর আল্লামা ইকবাল রোডের বাসিন্দা আশিকুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বললেন, ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা খাওয়া যায় না। ফুটালেও দুর্গন্ধ থাকে। অনেক সময় গোসল করাও যায় না। সিটি করপোরেশন রাস্তায় কাজ শুরুর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ। মনে হয় নালার পানি ওয়াসার পানির সঙ্গে মিশে বাসায় আসে। প্রায়ই পানি আসে খুব ঘোলা। সঙ্গে সঙ্গে ময়লা, পোকা। 

নগরীর নয়ামাটি এলাকার বাসিন্দা সনি দে ও খানপুরের বাসিন্দা মিতু আহমেদ জানান, এসব এলাকায় নিয়মিত ওয়াসার পানি আসে না। এলেও তাতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকে। 
১৯৯০ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহের দায়িত্ব পায় ওয়াসা। কিন্তু ওয়াসার বিরুদ্ধে নগরবাসীর অভিযোগের ফলে ২০১৯ সালে আবারও পানি সরবরাহের দায়িত্ব পায় সিটি কর্পোরেশন। দায়িত্ব ফিরে পেলেও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। 

সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের জানান, তাদের একজনও উপসহকারী প্রকৌশলী নেই। প্লাম্বার বা পানির লাইন মিস্ত্রি নেই। মাঠপর্যায়ে যেতে হলে প্রকৌশল পরামর্শক বা তাঁকে বা অন্য বিভাগের লোককে পাঠাতে হয়। 

সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলেছে দুটি বড় নালা নির্মাণ। নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ও পূর্ব দিক দিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার নালা প্রশস্তের কাজ চলছে। এসব নালার নিচ দিয়েই পানির লাইন, বিদ্যুত লাইন, টিএন্ডটির লাইন, ইন্টারনেটের ফাইবার ক্যাবল গিয়েছে। কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই ওয়াসার পাইপ কেটে ফেলছে শ্রমিকরা। ফলে নালার পানি ওয়াসার লাইনে ঢুকে যাচ্ছে। ঈদুল আজহার আগে তারা অন্তত বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই দশমিক দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ করবেন বলে আশা করছেন।

ঈদের আগে নালার কাজ শেষ হলেও দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না নগরবাসীর। সিটি এলাকায় ১৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও তাদের সক্ষমতা ১১ কোটি লিটার। ত্রিশ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ জোন তাদের মেশিনপত্র আধুনিকায়ন না করায় প্রায় প্রতিদিন চার-পাঁচটি পাম্প নষ্ট থাকছে। ফলে সংকট থেকেই যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিশটি নতুন পাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম দশটি এক মাসের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করছে সিটি কর্পোরেশন। পরের দশটি আরও তিন মাস পরে চালু হতে পারে। তবে ১৪৯ বছরের পুরোনো লাইন না বদলালে ভালো পানির প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এটির জন্য ১৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, যা বাস্তবায়নে অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের। 

পানি সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন কাজ করতে না পারার আরেকটি কারণ নিজস্ব তহবিল সংকট। নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মাত্র ৩৫ ভাগ গ্রাহক পানির বিল দেন। প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি বিক্রি করে সিটি করপোরেশনের মাসে ৫ কোটি টাকা আসার কথা থাকলেও আসে মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ পানির পাম্পের বিদ্যুৎ বিলই আসে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর বাইরে রয়েছে কর্মচারীদের বেতন, মেরামত খরচ প্রভৃতি। তবে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে তদারকির অভাব।

কমিশনাররা নেই। নেই মেয়র। প্রশাসক আসেন এক বা দুই দিন। কখনও আসেন না। মেয়র থাকলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আনতেন। প্রশাসক বলেই হয়তো সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে দুই দিন গেলে তাঁর অফিস সহকারী জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠালেও সাড়া মেলেনি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • করের চাপে বেভারেজ শিল্পে সংকট বেড়েছে
  • সামাজিক ব্যবসার মডেল কি স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিশা
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু, এখন বছরে ১০০ টন মধু কেনাবেচা করেন তিনি
  • গাজার বাসিন্দাদের প্রতি ‘দয়া’ দেখাতে ইসরায়েলের কাছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বান
  • মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে, কমেছে মিনিকেট চালের দাম
  • কোথাও পানিতে ময়লা-পোকা কোথাও পানি নেই
  • হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগ
  • পানিসংকটে চরম দুর্দশায় গাজাবাসী, লবণাক্ত পানি পান করছে শিশুরা
  • সিলেটে পাঁচ দিন ৩৯ এলাকায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে