বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াচ্ছে ইউরোপের এক কোম্পানি
Published: 24th, May 2025 GMT
বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সরবরাহে অনেক বছর ধরে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ইউরোপের ‘লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি’ বা এলডিসি। ২০২২ সালে বাংলাদেশে কার্যালয় খোলে কোম্পানিটি। তিন বছরের মাথায় এখন বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে নিজস্ব উৎস থেকে পণ্য আমদানি করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা করছে তারা। সিঙ্গাপুরে অবস্থিত এলডিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
এলডিসির তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭৪ বছরের পুরোনো এই বহুজাতিক কোম্পানির বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ব্যবসা রয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ‘লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে। কৃষিপণ্য সরবরাহে ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম তারা এ দেশে কোম্পানি খুলে কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশে বছরে এখন দেড় হাজার কোটি ডলার বা ১৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি হয়। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে মানুষের খাদ্য, প্রাণিখাদ্য ও রপ্তানিপণ্যের কাঁচামাল। এই তিন খাতে চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বাড়ছে। বাজার বড় হতে থাকায় এর আগে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাগ্রোকর্প, সুইস সিঙ্গাপুর ও ইটিজি এ দেশে কার্যালয় খুলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এলডিসিও বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে এলডিসির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের প্রধান রুবেন্স মার্কেস প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বড় পরিসরে আমদানি করতে পারে না। তাদের জন্য এলডিসির বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বিতরণপ্রক্রিয়া সহজ করাই আমাদের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে বছরজুড়ে ভোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে কৃষিপণ্য হাতে পাবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য আমদানি করে মূলত সাড়ে পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠান। বড় শিল্পগ্রুপগুলো জাহাজ ভাড়া করে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে। আবার সক্ষমতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারে না। মূলত ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে স্থানীয়ভাবে সরবরাহের পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।
লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি মূলত বিশ্বের কৃষি উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলো থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। উৎপাদন থেকে প্রক্রিয়াজাত, পরিবহন ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত কোম্পানিটি বিশ্বজুড়ে সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেমন ভারতে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে এলডিসি। ভারতে কোম্পানিটির একটি ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা ও একটি কফি প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। বাজার বড় হচ্ছে, বড় পরিকল্পনা এলডিসির এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে প্রায় ১৩৩ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য সরবরাহ করেছে এলডিসি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, সয়াবিন বীজ, ক্যানোলা বীজ, অপরিশোধিত চিনি, সয়াবিন তেল, ভুট্টা, সয়া কেক, তুলা ইত্যাদি। এলডিসি এসব পণ্য সরবরাহ করেছে বিশ্বের ১৯টি দেশ থেকে। এর মধ্যে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ হয়েছে মোট পণ্যের ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই, সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, বাদশা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান এলডিসি থেকে নিয়মিত পণ্য আমদানি করে।
বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে এলডিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে রুবেন্স মার্কেস জানান, বাংলাদেশের বাজারে পণ্যভিত্তিক সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এলডিসি। এ জন্য শুরুতে খাদ্যশস্য, তেলবীজ ও ডালের সরবরাহ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এনবিআরের হিসাবে, গত বছর ৩৭৪ কোটি ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে তুলা আমদানিতে এক থেকে দুই মাস লাগে। তাই তুলার সরবরাহব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে এলডিসির।
এ বিষয়ে রুবেন্স মার্কেস জানান, বাংলাদেশে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা সরবরাহে অবকাঠামো উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে এলডিসি। কাঁচামাল আমদানিতে বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোর মূলধন যাতে দীর্ঘ সময় আটকে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে চায় এলডিসি। শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক সম্ভাবনা হিসেবে বাংলাদেশকে দেখছে এলডিসি। কারণ, বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাজার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় জ ত এলড স র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।
এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকতুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।
ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫