Prothomalo:
2025-06-02@20:35:58 GMT

প্যারিসে কড়াইল বস্তি

Published: 26th, May 2025 GMT

ব্যস্ত ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে গুলশানের বিলাসবহুল উঁচু ভবনগুলো যখন দেশের বৃহত্তম বস্তির ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলছে, কিউরেটর ও শিল্পী সুবর্না মোর্শেদা তখন সেখানে অসাধারণ কিছু তৈরি করছেন। দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সুবর্নার ‘সব বাধা পেরিয়ে’ প্রদর্শনীটি তুলে এনেছে কড়াইলের এক বিরল আভাস, প্রান্তিক মানুষের সাধারণ জীবন ও মানবিক অধ্যবসায়ের এক অসাধারণ চালচিত্র। প্রদর্শনীটি এ বছরের ২১-২৫ মে প্যারিসের গ্র্যান্ড প্যালেসে দ্বিবার্ষিক আয়োজন রেভেলেশনস ইন্টারন্যাশনাল ফাইন ক্রাফট অ্যান্ড ক্রিয়েশন বিয়েনালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে।

কড়াইলের সরু গলি ধরে অসংখ্যবার হাঁটার অভিজ্ঞতা নিয়ে সুবর্না বলেন, ‘এখানকার শিশুরা পথকুকুরদের নামকরণ করে। এই ছোট ছোট কোমলতাই তাদের আসল চরিত্রের প্রকাশ। নারীরা প্রতিদিনের কষ্টের বিরুদ্ধে যেন আগুনে পুড়ে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়ায়। প্রতিকূলতার মধ্যে তারা দেখায় অদম্য শক্তি ও সাহস।’

সুবর্ণার কাজকে সত্যিকার অর্থে ভিন্নমাত্রা যোগ করে উপকরণের প্রতি তাঁর উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁর স্টুডিওতে দেখতে পাই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের মোড়কগুলো সূক্ষ্ম পালকে রূপান্তরিত, ধাতব টুকরাগুলো মার্জিত বক্ররেখায় বাঁকানো। রঙিন প্যাকেজিংয়ের খণ্ডাংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঠিক কড়াইলের মানুষের মতো সবকিছুরই সম্ভাবনা আছে।’

প্যারিসের মর্যাদাপূর্ণ রেভেলেশনস দ্বিবার্ষিকীতে দর্শনার্থীরা বাংলাদেশের তিনটি স্থাপনা শিল্পকর্ম উপভোগ করেছেন। ‘দ্য ফিনিক্স অব রিনিউয়াল’, শুধু স্ন্যাকসের রঙিন প্যাকেট আর কাপড়ের অবশিষ্টাংশ দিয়ে তৈরি একটি সুউচ্চ ভাস্কর্য। পুনর্জন্ম আর পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে পাখিটির ডানাজোড়া উড়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে জয়ের আনন্দে ছড়িয়ে দিয়েছে। ভাস্কর্যটি কড়াইলবাসীর অদম্য চেতনাকে মূর্ত করে, ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাকে প্রকাশ করে।

কাছাকাছি ‘কুইল্টস অব রেজিলিয়েন্স’ বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অপ্রত্যাশিত ট্যাপেস্ট্রির মাধ্যমে নকশাগুলো কড়াইলবাসীর বন্ধনের গল্প বলে। এ কাজ কড়াইলের মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে; তাদের ভালোবাসা, আশা ও নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে।

সবচেয়ে মন ছুঁয়ে যাওয়া স্থাপনাটি সম্ভবত ‘থ্রেডস অব হোপ’, ড্রিমক্যাচারের একটি স্বপ্নময় উপস্থাপনা। এর মৃদুমন্দ ঘণ্টাধ্বনি আর কড়াইলবাসীর লেখা ছোট ছোট বার্তা তাঁদের স্বপ্নেরই প্রতিনিধিত্ব করে। সুবর্না বলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা প্রত্যেকেরই আছে, শিল্প কেবল সেগুলোকে দৃশ্যমান করে তোলে।’

সুবর্না মোর্শেদার ‘এগেইনস্ট অল অডস’ তাই কেবল একটি শিল্পপ্রকল্প নয়; এটি টিকে থাকা, ঐক্য ও আশার এক প্রাণবন্ত উদ্​যাপন। এটি কেবল দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপনের সংগ্রামই উপস্থাপন করেনি, বরং দর্শকদের দারিদ্র্য ও সৃজনশীলতার মধ্যকার সংযোগটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্বিবেচনা করতে উৎসাহিত করে।

এই চমৎকার চিন্তাশীল উদ্যোগে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সবাই তাই ধন্যবাদ পেতে পারেন। বিশেষ করে দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। তাদের উদ্যোগে প্যারিসের কারুশিল্পের উৎসবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং এ দেশের বিকল্প শিল্পচর্চার আন্তর্জাতিক উপস্থাপন সম্ভব হলো। আর সহশিল্পী মো.

সাজিদুল হক ও অন্য সহযোগী শিল্পীদের কথা তো না বললেই নয়।

‘এগেইনস্ট অল অডস’-এর ওপর আন্তর্জাতিক স্পটলাইট জ্বলজ্বল করার সঙ্গে সঙ্গে সুবর্না তাঁর আসল লক্ষ্যের দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, দারিদ্র্য আর সৃজনশীলতা সম্পর্কে ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা জরুরি। এর ভেতর দিয়ে কড়াইলের সংকীর্ণ গলিতে, আপাতদৃষ্টে অসম্ভব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সৌন্দর্য ও আশা তাই কেবল টিকেই থাকবে না, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধও হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ন

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মার ঘাটে মাছের রেণু বেচাকেনা

২ / ৯রেণু নিয়ে ঘাটে ভিড়ছেন সাবাইরারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ