চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার কাচালং সীমান্ত এলাকা দিয়ে আরও ৯৪ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর সীমান্ত দিয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে আসার পর তাদের সবাইকে আটক করেছে বিজিবি। আটক সবাই বাংলাদেশি, তাদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়। তারা সবাই অবৈধভাবে কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। গত ৪ মে থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মোট ৭৪০ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।

বিজিবি জানায়, রোববার ভোররাতে জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর সীমান্ত দিয়ে দু’দফায় ৫৪ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এদের মধ্যে পুরুষ ১১, নারী ১৯ ও শিশু ২৪। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নোনাগঞ্জ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের পুশইন করে। এর মধ্যে হরিহরনগর সীমান্তের মেইন পিলার ৬১ ও সাব-পিলার ২ নম্বর থেকে ৪০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে নবদুর্গাপুর মাঠ থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে প্রথম দফায় ৪৫ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে আটজন পুরুষ, ১৬ নারী ও ২১ শিশু রয়েছে। আটকরা জানিয়েছে, তারা ভারতের গুজরাট থেকে আটক হয়েছিল। গত ২৫ মে রাত আড়াইটার দিকে বিএসএফ সীমান্তের ৬২ নম্বর মেইন পিলারের কাছে কাঁটাতারের গেট খুলে তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে। 

বিজিবি আরও জানায়, একই দিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হরিহরনগর সীমান্তের ৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে নবদুর্গাপুর মাঠ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আরও ৯ জনকে আটক করে বিজিবি। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও তিন শিশু রয়েছে। তারা জানায়, ভারতের হরিয়ানা পুলিশ ২৪ মে রাতে তাদের জীবননগর উপজেলার বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে আসে। এর পর বিএসএফ সীমান্তের ৬২ নম্বর পিলারের কাছে কাঁটাতারের গেট খুলে তাদের বাংলাদেশে জোরপূর্বক পুশইন করে।জীবননগর থানার ওসি মামুন হোসেন বিশ্বাস জানান, আটক ৫৪ জনকে থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আচালং সীমান্ত এলাকার ফেনী নদী দিয়ে গতকাল সোমবার ভোররাতের দিকে ১৯ নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। যামিনীপাড়ার বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আজিজুলের নেতৃত্বে একটি টহল দল তাদের সবাইকে আটক করে স্থানীয় আচালং ডিপিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছে। এ নিয়ে চলতি মাসে খাগড়াছড়ির সীমান্ত দিয়ে তিন দফায় ১০৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ।

বিজিবি জানায়, অনুপ্রবেশকারীরা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন। কাজের সন্ধানে তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে গিয়েছিলেন। হরিয়ানা থেকে বিমানে করে তাদের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তাদের দক্ষিণ ত্রিপুরার করবুকের সীমান্তবর্তী গুলোমনিপাড়ায় বিএসএফ নিয়ে যায়। পরে সোমবার ভোররাতে জোরপূর্বক তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় নারী-শিশুসহ ২১ জনকে আটক করেছে বিজিবি। সকাল পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মতেরবল সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় তাদের আটক করা হয়। আটকরা জানান, বিএসএফ তাদের পুশইন করেছে। তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। সবাই কুড়িগ্রামের বাসিন্দা। 

একই দিন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এদের মধ্যে আটজন পুরুষ ও ১১ নারী রয়েছেন। কালেঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার জাকারিয়া জানান, রোববার গভীর রাতে কাঁটাতারের গেট খুলে বিএসএফ ১৯ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে। খবর পেয়ে ৫৫ বিজিবি সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান চুনারুঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব আলম সেখানে উপস্থিত হন। আটকরা কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা। ২০ বছর আগে কাজের জন্য তারা অবৈধভাবে ভারতের হরিয়ানায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। 

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ জ বননগর কমলগঞ জ প শইন জ বননগর উপজ ল র ব এসএফ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী

অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়।  ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়। 

আরো পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।

বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
  • মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী