অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, জাতীয় সংলাপ যেন চা-নাস্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটি জাতিকে জানান, নতুবা এই সংলাপ ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হবে।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা; সংস্কার ও বাস্তবতা নিয়ে পেশাজীবীদের ভাবনা’ শীর্ষক এ সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ। 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খাঁন বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করা নিয়ে এতে গড়িমসি কেন? জাতিকে অন্ধকারে রেখে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সংস্কার করা যায় না। সংস্কারের জন্য স্বচ্ছতা ও পরিকল্পনা লাগে। ১০ মাসে কী সংস্কার করলেন? পদত্যাগ নামে ‘ইমোশনাল ব্লাকমেইল’ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার মধ্যে নিশ্চিত কোনো রহস্য আছে।

সরকার বিদেশিদের তাবেদারি করতে করিডোর-বন্দর দেওয়ার খেলায় মেতেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া বাকিদের পারফরম্যান্স তো দেখি না। প্রধান উপদেষ্টা মাঝেমধ্যে চার বা ছয় মারছেন। জাতির মধ্যে এতে নতুন উন্মাদনা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বাকিদের ১০ মাসের ব্যর্থতা দেখলাম। এভাবে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন কোনোটায় সঠিকভাবে হবে না। সঠিকভাবে সবকিছু করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার জরুরি।

পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি জাফর মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক লতিফ মাসুম, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ড.

ইমরান হোসাইন, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পী প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

মিত্র দলগুলো বিএনপির বিপরীতে

সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে তার সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী মিত্র দলগুলো। ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন এবং এর মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশে বিএনপি রাজি না হলেও তার মিত্ররা রাজি।

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল। আগামী নির্বাচনে এই জোট জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠনেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। 
বিএনপির মিত্র দলগুলো হলো– গণঅধিকার পরিষদ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট ও ১২টি দলের জাতীয়তাবাদী জোট। 
এর মধ্যে দুই জোট বিএনপির পথে হাঁটলেও বাকিদের ভিন্নমত আছে।
মিত্র হয়েও সংস্কারে বিএনপির বিপরীতে অবস্থান বিষয়ে দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান থেকে তারা মতামত দিয়েছেন। আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষ না হলে ছোট দলগুলো সংসদীয় রাজনীতিতে টিকতে পারবে না।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে ঐকমত্য পোষণ করেছে। দলটি সংসদ নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন এবং এনসিসি গঠনের পক্ষে। দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানিয়েছেন, এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে তারা না রাখার পক্ষপাতী। এ দু’জন থাকলে অন্য সদস্যরা বিব্রত হতে পারেন।
পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংস্কারের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন চেয়েছে বিএনপি। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম দফার সংলাপে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন চেয়েছে। জামায়াতে ইসলামীও গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের পক্ষে।

গণঅধিকার পরিষদ এনসিসি গঠন, প্রধানমন্ত্রী পদ দুবারে সীমাবদ্ধ রাখা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশে একমত। দলটির প্রস্তাব, কোনো দল সংসদ নির্বাচনে ১ শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষে আসন পাবে।
বিএনপি এনসিসি, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ দু’বারে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশে একমত নয়। কমিশন এ তিন সুপারিশকে মৌলিক পরিবর্তন বলছে এবং জামায়াত ও এনসিপি এ বিষয়ে একমত। একই অবস্থান বিএনপির ঘনিষ্ঠ গণঅধিকারের। একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না– কমিশনের এ সুপারিশেও সম্মত দলটি। তবে এসব সুপারিশে একমত নয় বিএনপি।

গণসংহতি আন্দোলন সংস্কার বাস্তবায়ন চায় গণপরিষদের মাধ্যমে। দলটি অবশ্য প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। এনসিপিও গণপরিষদে সাংবিধানিক সংস্কার চায়। বিএনপি গণপরিষদ ধারণার ঘোর বিরোধী। গণসংহতিও আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ চায়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, তাদের দল সংখ্যানুপাতিক নয়, শ্রেণি ও পেশাভিত্তিক উচ্চকক্ষ চায়। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা থাকবে না। জেএসডি এনসিসি গঠনে একমত। তবে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এনসিসির মাধ্যমে মনোনীত হোক–এটি তারা চায় না। অন্যান্য সাংবিধানিক নিয়োগ এনসিসির মাধ্যমে হতে পারে।

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার জানান, আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষের পক্ষে তাঁর দল। এনসিসি গঠনেও একমত। তবে এনসিসিকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষপাতী নয় নাগরিক ঐক্য।

বিএনপির আরেক মিত্র এনডিএম উচ্চকক্ষ ও এনসিসি চায়। দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ সমকালকে বলেন, উচ্চকক্ষের গঠন কী হবে, তা আগামী সংসদে ঠিক হবে। আগামী নির্বাচন সংসদ নির্বাচনই হবে। পরের নির্বাচন থেকে উচ্চকক্ষ থাকতে পারে।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিত্র দলগুলো বিএনপির বিপরীতে