কে জানত, এই স্নিগ্ধতা মুহূর্তেই পরিণত হবে এক নির্মম অভিশাপে!
Published: 30th, May 2025 GMT
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ছিল ২৯ মে। মতিঝিল থেকে কিছু কাজ সেরে খিলক্ষেতে বাসায় ফিরছিলাম। ভেবেছিলাম, দিনের আলো ফোরানোর আগেই বাসায় পৌঁছাব। কিন্তু নিয়তি সেদিন আমার জন্য অন্য এক গল্প লিখে রেখেছিল।
দিনের শুরু থেকেই আকাশটা ছিল থমথমে। যেন এক বিশাল ক্যানভাসে কালো মেঘের আঁচড়। দুপুরের পর থেকেই ঝরতে শুরু করল বৃষ্টি। প্রথমে মন্দ লাগছিল না। ধুলোমাখা শহরের বুকে নেমে এল স্নিগ্ধতা। কিন্তু কে জানত, এই স্নিগ্ধতা মুহূর্তেই পরিণত হবে এক নির্মম অভিশাপে!
বিকেল তখন চারটা ছুঁই ছুঁই। মতিঝিল থেকে বেরিয়েই যে দৃশ্যটা চোখে পড়ল, তাতে রীতিমতো দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। এটা তো যানজট নয়, যেন মানবসৃষ্ট এক স্থির নদী! ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস—সব মিলিয়ে একাকার, নড়াচড়ার কোনো চিহ্ন নেই। শহরের প্রতিটি ধমনি যেন হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিল, ঢাকার সমস্ত প্রাণশক্তি এই মুহূর্তে রাস্তায় আটকে আছে।
বৃষ্টির তেজ ক্রমেই বাড়ছিল। গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মুহূর্তেই তা মুষলধারে রূপ নিল। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিল আমাদের ওপর। চোখের পলকে রাস্তাগুলো পরিণত হলো নদীতে। ড্রেনেজব্যবস্থা? সে তো কবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই শহরে! ময়লা, আবর্জনা, প্লাস্টিকের বোতল—ফুলেফেঁপে ওঠা পানিতে সব একাকার। গাড়ির চাকাগুলো ডুবছিল অথই পানিতে, নিজেকে মনে হচ্ছিল ডুবন্ত জাহাজের যাত্রী।
গাড়ির ভেতরে বসে আমি তখন ছটফট করছি। এসি ছেড়েও গরম লাগছিল। জানালার কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছিলাম এক অদ্ভুত বিভীষিকা। মানুষগুলো ছাতা মাথায়, ভেজা পোশাকে পানি ঠেলে যেন কোনো এক অজানা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের চোখে ছিল ক্লান্তি, বিরক্তি আর একরাশ হতাশা। গাড়ির চালকও গজগজ করছিলেন। তাঁর বিরক্তি যেন আমার ভেতরের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। সামনে শুধু গাড়ির লাল বাতির ঢেউ, আর পেছনে ফিরে দেখতাম একই দৃশ্য—এক সীমাহীন স্থবিরতা।
মতিঝিল, মগবাজার—প্রতিটি মোড় যেন এক যন্ত্রণার প্রাচীর। মনে হচ্ছিল, প্রতিটি পার হওয়া মোড় জীবন থেকে একেকটি বছর কেড়ে নিচ্ছিল। হর্নের কর্কশ শব্দ, গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ আর বৃষ্টির অবিরাম শব্দ স্নায়ুতে আঘাত হানছিল। মনে হচ্ছিল, সময় যেন জমাট বেঁধে গেছে, আর আমি এক অনন্ত অপেক্ষার ফাঁদে আটকা পড়েছি।
অবশেষে আমার গাড়ি যখন খিলক্ষেতের পরিচিত গলিতে প্রবেশ করল, তখন ঘড়ির কাঁটা রাত ৯টার ঘর ছাড়িয়ে গেছে। মতিঝিল থেকে খিলক্ষেত মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথ। অথচ পাড়ি দিতে লেগেছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা! বিশ্বাস হচ্ছিল না, আমার চোখের সামনে এই দুঃস্বপ্নটা সত্যি হয়েছে।
রাস্তায় কাদা আর নোংরা পানির ছড়াছড়ি। গাড়ি থেকে নামতেই বুঝলাম, আমার ভেতরের জামাকাপড়ও প্রায় ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। মনে হলো, আমি যেন এক বিধ্বস্ত পথিক, কাদামাখা এক ভূতের মতো নিজের বাড়িতে প্রবেশ করলাম।
গতকালের সেই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, ঢাকার রাজপথ কতটা নির্মম হতে পারে। যানজট আর জলজট মিলে যে দুর্ভোগের জন্ম দেয়, তা কেবল একটি দিনের ভোগান্তি নয়, এটি যেন এই শহরের এক চলমান অভিশাপ। এই সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে, নগরজীবন শুধু কঠিন নয়, শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠবে। কবে এই বিভীষিকা থেকে মুক্তি মিলবে, কবে এই শহর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে, তা কেবল সময়ের হাতেই বন্দী!
‘আমার সাধারণ যাত্রা দুঃস্বপ্নে পরিণত’‘বৃষ্টি, জ্যাম আর আমি—এক বিরহ কাহিনি’আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ও অস্থির একটি দিন ছিলমঙ্গল-অমঙ্গলের বৃষ্টিআটকে যাওয়া এক সকালতাঁদের ট্রমা এখনো কাটেনিপথের বিড়ম্বনাস্যুটেড-বুটেড চাকরিজীবীরা যেমন ভিজছেন, নিম্ন আয়ের রিকশাওয়ালাও ভিজছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত ঝ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।