সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ছিল ২৯ মে। মতিঝিল থেকে কিছু কাজ সেরে খিলক্ষেতে বাসায় ফিরছিলাম। ভেবেছিলাম, দিনের আলো ফোরানোর আগেই বাসায় পৌঁছাব। কিন্তু নিয়তি সেদিন আমার জন্য অন্য এক গল্প লিখে রেখেছিল।

দিনের শুরু থেকেই আকাশটা ছিল থমথমে। যেন এক বিশাল ক্যানভাসে কালো মেঘের আঁচড়। দুপুরের পর থেকেই ঝরতে শুরু করল বৃষ্টি। প্রথমে মন্দ লাগছিল না। ধুলোমাখা শহরের বুকে নেমে এল স্নিগ্ধতা। কিন্তু কে জানত, এই স্নিগ্ধতা মুহূর্তেই পরিণত হবে এক নির্মম অভিশাপে!

বিকেল তখন চারটা ছুঁই ছুঁই। মতিঝিল থেকে বেরিয়েই যে দৃশ্যটা চোখে পড়ল, তাতে রীতিমতো দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। এটা তো যানজট নয়, যেন মানবসৃষ্ট এক স্থির নদী! ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস—সব মিলিয়ে একাকার, নড়াচড়ার কোনো চিহ্ন নেই। শহরের প্রতিটি ধমনি যেন হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিল, ঢাকার সমস্ত প্রাণশক্তি এই মুহূর্তে রাস্তায় আটকে আছে।

বৃষ্টির তেজ ক্রমেই বাড়ছিল। গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মুহূর্তেই তা মুষলধারে রূপ নিল। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিল আমাদের ওপর। চোখের পলকে রাস্তাগুলো পরিণত হলো নদীতে। ড্রেনেজব্যবস্থা? সে তো কবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই শহরে! ময়লা, আবর্জনা, প্লাস্টিকের বোতল—ফুলেফেঁপে ওঠা পানিতে সব একাকার। গাড়ির চাকাগুলো ডুবছিল অথই পানিতে, নিজেকে মনে হচ্ছিল ডুবন্ত জাহাজের যাত্রী।

গাড়ির ভেতরে বসে আমি তখন ছটফট করছি। এসি ছেড়েও গরম লাগছিল। জানালার কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছিলাম এক অদ্ভুত বিভীষিকা। মানুষগুলো ছাতা মাথায়, ভেজা পোশাকে পানি ঠেলে যেন কোনো এক অজানা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের চোখে ছিল ক্লান্তি, বিরক্তি আর একরাশ হতাশা। গাড়ির চালকও গজগজ করছিলেন। তাঁর বিরক্তি যেন আমার ভেতরের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। সামনে শুধু গাড়ির লাল বাতির ঢেউ, আর পেছনে ফিরে দেখতাম একই দৃশ্য—এক সীমাহীন স্থবিরতা।

মতিঝিল, মগবাজার—প্রতিটি মোড় যেন এক যন্ত্রণার প্রাচীর। মনে হচ্ছিল, প্রতিটি পার হওয়া মোড় জীবন থেকে একেকটি বছর কেড়ে নিচ্ছিল। হর্নের কর্কশ শব্দ, গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ আর বৃষ্টির অবিরাম শব্দ স্নায়ুতে আঘাত হানছিল। মনে হচ্ছিল, সময় যেন জমাট বেঁধে গেছে, আর আমি এক অনন্ত অপেক্ষার ফাঁদে আটকা পড়েছি।

অবশেষে আমার গাড়ি যখন খিলক্ষেতের পরিচিত গলিতে প্রবেশ করল, তখন ঘড়ির কাঁটা রাত ৯টার ঘর ছাড়িয়ে গেছে। মতিঝিল থেকে খিলক্ষেত মাত্র কয়েক কিলোমিটার পথ। অথচ পাড়ি দিতে লেগেছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা! বিশ্বাস হচ্ছিল না, আমার চোখের সামনে এই দুঃস্বপ্নটা সত্যি হয়েছে।

রাস্তায় কাদা আর নোংরা পানির ছড়াছড়ি। গাড়ি থেকে নামতেই বুঝলাম, আমার ভেতরের জামাকাপড়ও প্রায় ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। মনে হলো, আমি যেন এক বিধ্বস্ত পথিক, কাদামাখা এক ভূতের মতো নিজের বাড়িতে প্রবেশ করলাম।

গতকালের সেই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, ঢাকার রাজপথ কতটা নির্মম হতে পারে। যানজট আর জলজট মিলে যে দুর্ভোগের জন্ম দেয়, তা কেবল একটি দিনের ভোগান্তি নয়, এটি যেন এই শহরের এক চলমান অভিশাপ। এই সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে, নগরজীবন শুধু কঠিন নয়, শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠবে। কবে এই বিভীষিকা থেকে মুক্তি মিলবে, কবে এই শহর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে, তা কেবল সময়ের হাতেই বন্দী!

‘আমার সাধারণ যাত্রা দুঃস্বপ্নে পরিণত’‘বৃষ্টি, জ্যাম আর আমি—এক বিরহ কাহিনি’আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ও অস্থির একটি দিন ছিলমঙ্গল-অমঙ্গলের বৃষ্টিআটকে যাওয়া এক সকালতাঁদের ট্রমা এখনো কাটেনিপথের বিড়ম্বনাস্যুটেড-বুটেড চাকরিজীবীরা যেমন ভিজছেন, নিম্ন আয়ের রিকশাওয়ালাও ভিজছেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মত ঝ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে বিভিন্ন ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার ৪  

বন্দরে একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীসহ  বিভিন্ন ওয়ারেন্টে ৪ পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের  বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর)  দুপুরে উল্লেখিত ওয়ারেন্টে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বন্দর থানার ২২ নং ওয়ার্ডের লের্জাস ১নং গল্লী এলাকার মৃত আজিম মিয়ার ছেলে বন্দর থানা ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একাধিক জিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী রুবেল (৩৪) একই থানার সোনাকান্দা মসজিদ এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে জিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী জনি (৩৫)|r

একই থানার রামনগর এলাকার মৃত সিদ্দিক মুন্সী ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত  আব্দুল কুদ্দুস (৫২) ও গকুলদাশেরবাগ এলাকার আনোয়ার মিয়ার ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ইব্রাহিম (৩০)। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ