মাঝপথে হেডলাইট বিকল। টর্চের আলোয় টানা হর্ন বাজিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ চলল ট্রেন। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ট্রেনটি দুই ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছায়। রুদ্ধশ্বাস এ যাত্রাটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর থেকে আখাউড়ার আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার রাতে বিজয়নগরের মুকুন্দপুর এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনের হেডলাইট হঠাৎ বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। টর্চ জ্বালিয়ে ও টানা হর্ন বাজিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আজমপুর স্টেশনে পৌঁছায় ট্রেনটি। 

আজমপুর স্টেশনে ট্রেনের যাত্রীরা জানান, প্রতি সেকেন্ডে হর্ন বাজানো হচ্ছিল। এতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। 

আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের লোকোশেড ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো.

নজরুল ইসলাম জানান, চলন্ত অবস্থায় ট্রেনটির হেডলাইট বিকল হয়ে যায়। পরে আখাউড়া থেকে বিকল্প লোকোমোটিভ পাঠানো হয়।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দুই স্ত্রীর পাল্টা দাবিতে দুদিনেও হয়নি দাফন

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় মৃত্যুর পর দু’দিন পেরিয়ে গেলেও আব্দুর রহমান নামে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির দাফন হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আরেক পক্ষ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দাবি করলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে আব্দুর রহমান মারা যান। প্রথম স্ত্রী রহিমা খাতুন স্বামীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। স্বামীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি দাবি করে চারজনের বিরুদ্ধে দেবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগপত্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রহিমা খাতুনকে বিয়ের ১৫ বছর পর নাসিমা বেগমকে বিয়ে করেন আব্দুর রহমান। এর পর দাম্পত্য কলহ দেখা দেয় প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ বিজয়নগর এলাকায় বাড়ি তৈরি করে সেখানে থাকতেন তিনি।

সম্প্রতি আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানরা চাপ দিতে থাকেন। কয়েকদিন ধরে তাঁর বাড়ি থেকে কলহের আওয়াজও পেয়েছেন প্রতিবেশীরা। পারিবারিক বিষয় হওয়ায় এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেননি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আব্দুর রহমানের মৃত্যুর খবর দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে আবু নাসিম মোবাইল ফোনে প্রথম স্ত্রীর ছেলে বেলাল হোসাইনকে জানান।

খবর পেয়ে রহিমা খাতুন ছেলে বেলাল ও দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিজয়নগরের বাড়ি আসেন। এর পর তাদের কাছে মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হয়নি বলে দাবি করেন তারা। তাদের অভিযোগ, আব্দুর রহমানের বাঁ হাতে, কপালে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। শুধু তাই নয়, গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরানো হলেও রক্ত ঝরছিল।

আব্দুর রহমানের লাশ এ অবস্থায় দেখে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের দাবি জানান তারা। এর পর থেকে শুরু হয় নাটকীয়তা। দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ের জামাই মোমিনুর ইসলাম ময়নাতদন্ত থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথম স্ত্রীর দাবির মুখে পরে লাশ দেবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। 

প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় ছেলে সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। এসআই নাসিম নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের বলল, ডিসি স্যার নাকি যেতে বলেছেন। আমরা চারজন পঞ্চগড়ে গেলে এডিসির রুমে নিয়ে গেছে, কিন্তু জবানবন্দি নেয়নি। সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর চেয়েছিল, আমি দিইনি।’

দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমা বেগম ও তাঁর সন্তানের দাবি, আব্দুর রহমান রাতে শৌচাগারে পড়ে গেলে হাত ও মাথায় আঘাত পান। তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা বলেন, আব্দুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানদের অভিযোগ আছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হয়। শনিবার বিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই স্ত্রীর পাল্টা দাবিতে দুদিনেও হয়নি দাফন