ভারত থেকে ঠেলে পাঠানোর সংখ্যা হাজার ছাড়াল
Published: 30th, May 2025 GMT
দেশের তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৬৪ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশইন) ভারত। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ২৯, হবিগঞ্জে ২২ এবং ফেনীতে ১৩ জন রয়েছে। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ১ হাজার ১১ জনকে ঠেলে পাঠাল বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। এই পুশইনের ঘটনাকে ‘ডাইনি শিকারের মতো বাংলাদেশি ধরা’ বলে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ।
মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কমলগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত দিয়ে আজ ২৯ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। জুড়ীর রাজকি ও কমলগঞ্জের বিওপি সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজকি সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। সীমান্তের ভেতরে দেখে তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৫২ ব্যাটলিয়ন।
বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.
এদিকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্তে আবারও বিএসএফ ২২ জনকে পুশইন করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে রেমা বিওপির আওতাধীন ডেবরাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে এদের ঠেলে পাঠানো হয়। আজ সকালে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের টহল দল তাদের আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা। বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান জানান, আটকদের নাম-ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে। তাদের চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করা হবে।
এ ছাড়া ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তে এদিন ভোরে ১৩ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিজিবি জানায়, সকাল ৯টায় মথুয়া এলাকায় পরিত্যক্ত ঘরে ১৩ জনকে দেখে সন্দেহ হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জানান, বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। রাত দেড়টায় বিএসএফ বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে তাদের প্রথমে হাত ও চোখ বেঁধে সীমান্তে নিয়ে আসে। হাত ও চোখের বাঁধন খুলে বাংলাদেশে পুশইন করে। তারা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা।
ফেনী ৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানি কমান্ডার প্রতিপক্ষ বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডারকে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক প্রতিবাদপত্র পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, পুশইনের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ। সংগঠনটির সম্পাদক কিরিটি রায়ের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে স্থানীয় পুলিশ যথেচ্ছভাবে গ্রেপ্তার করছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া দিনের পর দিন আটক রেখে তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দিচ্ছে। এর পর চোখ বেঁধে জোর করে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে দিচ্ছে। এ কার্যকলাপ বেআইনি। এটা ভারতের সংবিধান, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন। আটক ব্যক্তিদের আদালতে তোলা হচ্ছে না। তাদের আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তার মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।
কিরিটি রায় বলেন, এ অভিযানের লক্ষ্যবস্তু মুসলমানরা। এগুলো চালানো হচ্ছে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিএসএফের যৌথ নির্দেশনায়। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পটভূমিতে এ কার্যকলাপ প্রমাণ করে যে, এটি গোষ্ঠীভিত্তিক প্রতিহিংসামূলক দমননীতি। এটা জাতীয় নিরাপত্তার নামে বৈষম্যমূলক রূপ নিচ্ছে। এটা শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় (গুজরাট, রাজস্থান, উড়িষ্যা, আসাম) ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার, জোর করে বহিষ্কার এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীভিত্তিক নিপীড়নের স্থান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেই। এগুলো শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমরা অবিলম্বে এ বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধের দাবি জানাই। স্বাধীন বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং দায়ী সব কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই। আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বিচার ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমকে অনুরোধ করেছি অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে।
গত আগস্টের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করে ভারত। উভয় দেশের নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা হয়। বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার সীমিত করে। ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা হয়। এর জেরে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। অনুপ্রবেশকারী ধরতে অভিযান শুরু করে ভারত। অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আটক করা হয়। তাদের অনেককে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। ফিরে আসার পর অনেকে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। কয়েকজন রোহিঙ্গা এবং ভারতীয়কেও পুশইন করা হয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শইন ব এসএফ কর ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুড়িগ্রাম সীমান্তে ঠেলে দেওয়া ঠেকালো বিজিবি-জনতা
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের ঠেলে দেওয়া নিয়ে রাতভর চলে উত্তেজনা। ঠেলে দেওয়া ঠেকাতে প্রায় এক কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় মানব দেয়াল সৃষ্টি করে রাতভর পাহারা দেয় হাজারো স্থানীয় জনতা।
এ সময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি ও আনসার ভিডিপি ঠেলে দেওয়া ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয়। শুক্রবার (৩০ মে) রাতে কচাকাটা থানার কেদার ইউনিয়নের শোভারকুটি ও শিপেরহাট সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী জেলার গোলকগঞ্জ থানার বিএসএফ সদস্যরা দুটি পিকাপ ভ্যানে ৫০/৬০ জন নাগরিককে বাংলাদেশর সীমান্ত লাগোয়া ভারতের ফাইসকারকুটি গ্রামের একটি স্কুলে ঠেলে দেওয়ার জন্য জড়ো করে। পরে সীমান্ত গ্রামটির সব লাইট বন্ধ করে ঠেলে দেওয়া করার চেষ্টা করে বিএসএফ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শতশত জনতা সীমান্তে অবস্থান নিয়ে পাহারা বসায়। পরে কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির কচাকাটা ও কেদার ক্যাম্পের সদস্য ও আনসার ভিডিপির কয়েকটি টিম সীমান্তে কঠোর অবস্থান নেয়। অপর দিকে বিএসএফও অবস্থান নেয় ভারতীয় সীমান্তে। পরে রাত দুই টার দিকে শুন্য রেখায় অবস্থান নেয় বিএসএফ।
এসময় বিএসএফ কয়েক দফা বিজিবির সাথে কথা বলতে চাইলে বিজিবি তা প্রত্যাক্ষান করে। পরে রাত তিনটার দিকে শুন্য রেখা থেকে সরে যায় বিএসএফ।
ওই সীমান্তের বাসিন্দা জয়নাল জানান, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের সাথে রাতভর সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়ে ঠেলে দেওয়া ঠেকিয়েছেন তারা।
কুড়িগ্রাম-২২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব উল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ অবৈধভাবে কাউকে যেন ঠেলে দিতে না পারে সেজন্য বিজিবি, আনসার সদস্যসহ সীমান্তবাসী যৌথভাবে পাহারা দিচ্ছে। সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।”
ঢাকা/বাদশাহ্/এস