নিম্নচাপ কেটে গেলেও উপকূলে দুর্ভোগ কমেনি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তবে এর আগে দু’দিন ধরে হওয়া টানা বৃষ্টি উপকূলের জনজীবনে এনেছে চরম দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতা, পাহাড় ও বেড়িবাঁধে ধস, রাস্তা ভেঙে যাওয়া, ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়া, নৌযান চলাচলে বিঘ্ন– সব মিলিয়ে বিপদে আছেন লাখ লাখ মানুষ।

গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে গেলেও এর প্রভাবে সাত বিভাগের অনেক এলাকায় আরও এক দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে, সমুদ্রবন্দরগুলোতেও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ধরাসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলে তৈরি হয়েছে বাধা।

দু’দিনের ভারী বর্ষণে পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাছের ঘের তলিয়ে গেছে, ক্ষতি হয়েছে ফসলের। কোথাও কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে।  ঝড়বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যুৎ ও মোবাইলসেবা। তৈরি হয়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

ছয় জেলায় বন্যার শঙ্কা
গভীর নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিপাতে দেশের বেশির ভাগ নদনদীর পানি বেড়েছে। এর ফলে ছয় জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংস্থাটি জানায়, আগামীকাল রোববারের মধ্যে এসব নদীর পানি কমতে শুরু করতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, টানা বৃষ্টিতে দেশের প্রায় সব জায়গায় নদনদীর পানি বেড়েছে। ৬৭টি পর্যবেক্ষণকারী নদনদীর ৫০টিতেই পানি বেড়েছে। এগুলোর যে ১১৬টি পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে ৮৯টিতে বেড়েছে পানি।

বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-বাঁধধস
টানা বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীতে সনাতনপাড়া, ব্লাকহিল ও উলুছড়া এলাকায় পাহাড় ধসে গেছে। বিদ্যানগর এলাকায় একটি বাড়িতে পাহাড় ধসে পড়লেও কেউ হতাহত হয়নি। সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সদর সেনা জোন ও উপজেলা পরিষদ কার্যালয়সংলগ্ন এলাকায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীরা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শহরের লোকনাথ মন্দিরে ১৬ পরিবার আশ্রয় নেয়। এদিকে কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বান্দরবানে পাহাড়ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শুক্রবার দুপুর থেকে ওয়াইজংশন-রুমা সড়কের একটি অংশে পাহাড় ধসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং পাহাড়ধসের আশঙ্কায় সাত উপজেলায় ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। তবে এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আসেননি। পাহাড়ধস ও নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ির বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ শহরের খোয়াই নদীর পূর্ব ভাদৈ ও জালালাবাদ অংশে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। পূর্বভাদৈ অংশে প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা ধসের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা বলছেন, খোয়াই নদীর পানি বাড়লে দুটি বাঁধ ভেঙে পাশের এলাকাগুলো প্লাবিত হতে পারে।

মৌলভীবাজারের নদনদীগুলোর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। খরস্রোতা জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সব নদীর পানি বাড়লেও প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে। ধলাই নদীর পানি বাড়ায় সিলেটের কোম্পানীঞ্জের পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর এলাকা ডুবে গেছে। একইভাবে ডাউকির পানি বাড়ায় ডুবে গেছে জাফলং পর্যটন কেন্দ্র।
খুলনার কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ভোরে হরিণখোলা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি স্থানের ৩০০ মিটার নদে ধসে পড়ে। এতে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন হরিণখোলা, ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী গ্রামসহ উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

পটুয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। জোয়ারের পানিতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাঙ্গাবালী উপজেলার পুরো চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন পানিতে ডুবে ছিল। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে জেলার অন্তত ১০টি গ্রাম তলিয়ে যায়। ওইসব এলাকার ভুক্তভোগী পরিবারের মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে গলাচিপার পানপট্টি বোর্ড সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন একটি বেড়িবাঁধ ১৫০ মিটার ভেঙে যায়। এতে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর পানিতে পানপট্টির তিনটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। 
ভারী বৃষ্টির কারণে ভোলার মনপুরায় নির্মিতব্য বেড়িবাঁধের বালু সরে সৃষ্টি হওয়া খাদে পড়ে ওমর (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মনপুরা ইউনিয়নের মৎস্য ঘাটসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বালু খুঁড়ে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। ওমর কুলাগাজীর তালুক গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে।

এদিকে ঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাসে ভোলার দুর্গম চরাঞ্চলের ৫ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ঘেরের মাছ ও গবাদি পশু। চরফ্যাসনের ঢালচর, চর পাতিলা, কুকরী-মুকরীতে ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশি। বিধ্বস্ত হয়েছে ৩০০ বসতঘর। জোয়ারে ভেসে গেছে প্রায় ৭০০ গবাদি পশু। বিধ্বস্ত ঘরের নিচে চাপা পড়ে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে। তজুমদ্দিন উপজেলায় নির্মাণাধীন রিংবাঁধ ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই জোয়ারে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানেই বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ চলমান। স্থানীয়রা বলছেন, বেড়িবাঁধ অসম্পূর্ণ থাকার কারণেই বারবার এ ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা দ্রুত টেকসই ও পূর্ণাঙ্গ বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে নদী উত্তাল হওয়ায় মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ঝোড়ো বাতাসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাইভোল্টেজ কয়েকটি বিদ্যুতের তারসহ খুঁটি হেলে পড়েছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে নগরীর বেশ কিছু সড়কে পানি উঠেছে। পানি বেড়েছে গোমতী নদীর।
বৈরী আবহাওয়ায় নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে সব ধরনের নৌযান চলাচল গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে সারাদেশে অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু নলচিরা-চেয়ারম্যানঘাট রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় দুই শতাধিক পরীক্ষার্থী।

সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সর্বশেষ অংশে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে সাগরের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানছে। এতে টেকনাফ অংশের দুই কিলোমিটারের বিভিন্ন জায়গায় চারটি অংশে ভাঙন ধরেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও শুক্রবার রাতে বরিশাল থেকে দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

ঝোড়ো হাওয়া আর সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারটি জাহাজ তীরে উঠে গেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আনোয়ারা ও পতেঙ্গা উপকূলে নৌযানগুলো তীরে উঠে আটকে পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার আওতায় থাকা আনোয়ারা উপকূলে দুটি নৌযান আটকা পড়ে। এগুলো হলো মারমেইড-৩ ও নাভিমার-৩। এর মধ্যে মারমেইড-৩ বার্জ। নাভিমার-৩ টাগবোটের সাহায্যে এটি আনা-নেওয়া করা হয়। এদিকে আনোয়ারায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করেছে সেনাবাহিনী।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩৮ মিলিমিটার। এটি এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। অতি ভারী বৃষ্টি ঝরলেও চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। গতকাল বিকেলে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপক ল বন য শ ক রব র নদ র প ন প হ ড়ধস উপজ ল য় উপজ ল র র এল ক বন ধ র এল ক য় ত হয় ছ সতর ক উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

নদনদীর পানি বাড়ছেই, দেখা দিচ্ছে ভাঙন

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি। দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে খালের পানির তোড়ে ভেসে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার তালতলীতে ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পর্শে এক গৃহবধূ মারা গেছেন।

স্রোতে ভেসে গেল দুই বোন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ গ্রামে খাল থেকে মারিয়া আক্তার (১২) ও সামিয়া আক্তার (৯) নামে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মারিয়া ও সামিয়া গোকর্ণ গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মিনার আলীর মেয়ে। তারা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে আকাশি হাওরপাড়ে গরু চরাতে যায় মারিয়া ও সামিয়া। প্রতিদিনের মতো দুপুরে বাড়ির উদ্দেশে গরু নিয়ে রওনা দেয় তারা। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে খালের পানি বেড়েছে। মারিয়া ও সামিয়া গরু নিয়ে সেই খাল পার হতে গিয়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে যায়। গরু ডাঙায় উঠে বাড়ি পৌঁছায়। সন্ধ্যা নেমে এলেও দুই বোন বাড়ি না ফেরায় তাদের মা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে খালের পৃথক স্থানে দুই শিশুর মরদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা।

ঝড়ে ছেঁড়া তারে বিদ্যুতায়িত গৃহবধূ
বরগুনার তালতলী উপজেলায় বাড়ির পাশে ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মুক্তা আক্তার (১৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ঠংপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মুক্তা আক্তার ওই এলাকার রাজিব সিকদারের স্ত্রী। মুক্তার স্বামী রাজিব সিকদার বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাফিলতি এবং অবহেলার জন্য আমার স্ত্রী প্রাণ হারাল। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’ পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তালতলী জোনাল অফিসের প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

সুন্দরবনে দুটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার
জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে সুন্দরবনের ভেতরে করমজল, সুপতি, ভোলা, কটকা, দুবলা এলাকায় পাঁচটি মিষ্টি পানির পুকুরে নোনাপানি ঢুকেছে। বিপাকে পড়েছে বন্যপ্রাণীরা। এদিকে প্লাবিত হয়েছে বনের বিস্তীর্ণ এলাকা। শ্যালার চর এলাকা থেকে ভেসে যাওয়া একটি হরিণ শাবক উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে দুবলার চর এলাকা থেকে দুটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছেন বনরক্ষীরা। 

এদিকে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী-বগী ভারাণী খালের পাশের রিং বাঁধের দুটি স্থানের ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে।

সিলেটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত
অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে নদীর পানি বাড়ছে। প্রতি পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের কিছু অংশের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি পানিতে তলিয়ে গেছে। পাশের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে সেখানকার পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর ডুবে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, সারি, গোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি বেশি বেড়েছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

টানা বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা ও চিলাই, ছাতকের চেলা ও পিয়াইন, মধ্যনগরের সোমেশ্বরী, তাহিরপুরের যাদুকাটা, মাহারাম, বৌলাই, রক্তি ও পাটলাই এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মরা যাদুকাটা নদীতে তীব্র বেগে নামছে পাহাড়ি ঢল। প্লাবিত হয়েছে তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চলের কিছু গ্রাম। বড়দল নতুন হাটি গ্রামে একটি বাঁধ ভেঙে হাওরে ঢুকছে পানি। জগন্নাথপুর উপজেলায় নদনদীর পানি বেড়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঢলে ধলাই নদীর পানি বেড়েছে। তবে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েক ইউনিয়নে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত তিনটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। 

হাতিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ, আতঙ্ক
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ বয়ারচর চরগাশিয়া ঢালচর এলাকায় জোয়ারে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার কয়েকটি স্থানে এক-তৃতীয়াংশ বাঁধ ভেঙে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে স্বাভাবিক জোয়ারেও ভেঙে যেতে পারে বাকি অংশ। দ্রুত মেরামত না করলে ক্ষতির মুখে পড়বে বেড়িবাঁধের ভেতরের বসবাস করা প্রায় ৩০ হাজার পরিবার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, হাতিয়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরঈশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব পাশে। এ ছাড়া নলচিরা সোনাদিয়া তমরদ্দি ও সুখচর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। 

ঢাকার চার ফ্লাইট নামল চট্টগ্রামে
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি চারটি ফ্লাইট। শনিবার বিকেলে এগুলো চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে চট্টগ্রাম আসে শারজাহ-ঢাকা রুটের এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইট ৫১৪, বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে অবতরণ করে কক্সবাজার-ঢাকা রুটের এয়ার অ্যাস্ট্রার ফ্লাইট ৪৪, বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে অবতরণ করে রাজশাহী-ঢাকা রুটের ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস১৬৪ এবং বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে আসে সৈয়দপুর-ঢাকা রুটের ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ১৮৮।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নতি হলেই ফ্লাইটগুলো ঢাকায় চলে যাবে।
এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ডলু, হাতিয়া ও হাঙর খালের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ওই এলাকার বাসিন্দারা বসতঘর বিলীন হওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। 

লক্ষ্মীপুরের অনেক এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন
ঝড়-বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের সদর, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুর উপজেলার অনেক এলাকা শনিবারও বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ঝোড়ো হাওয়ায় অন্তত ১৬টি বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে গেছে, অসংখ্য গাছ পড়ে গেছে লাইনের ওপর। এর ফলে কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কিছু এলাকায় কাজ চললেও এখনও বেশির ভাগ স্থানে দিনরাত বিদ্যুৎহীন অবস্থা বিরাজ করছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। 

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানিয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আজ থেকে ধাপে ধাপে সংযোগ চালু করা হবে।

ইন্দুরকানীতে পানিবন্দি ১০ গ্রামের মানুষ
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ইন্দুরকানী, টগড়া, কালাইয়া, সাঈদখালী, বালিপাড়া, চর বলেশ্বর, চণ্ডীপুর, খোলপেটুয়া, কলারণসহ নদীতীরবর্তী অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ। ইন্দুরকানী থানা ভবনসহ আশপাশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে কিশোরগঞ্জের ঘোড়াউত্রা নদীর পানি বাড়ায় পাটলি ঘাটে ফেরিতে অনেক যানবাহন আটকা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ পণ্যবাহী ট্রাক।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নদনদীর পানি বাড়ছেই, দেখা দিচ্ছে ভাঙন
  • ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ জেলা, পানিবন্দি লাখো মানুষ