নীতি সহায়তা-প্রণোদনাসহ পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট চান সংশ্লিষ্টরা
Published: 31st, May 2025 GMT
দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পতনের ধাক্কায় সিংহভাগ পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস বাড়ছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটেনি।
এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপও কাজে আসছে না। তাই আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যথাযথ কৌশল নির্ধারণ, নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে পুঁজিবাজারের ভাগ্য। তাই পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট প্রত্যাশা রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
আগামী সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রথম বাজেট। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বাজেটকে ঘিরে তাই বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশাও বেশি রয়েছে। তারা চান, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পথে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার দিকনির্দেশনা থাকবে বাজেটে। সবশেষ ২০০৮-৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল সংসদের বাইরে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
এবার বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রত্যাশার দিকে চোখ ফেরানো যাক-
ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু সুপারিশ ও দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। তাদের মতে, এসব সুপারিশ ও দাবি বাস্তবায়ন হলে আসন্ন বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। তার ওই নির্দেশনার আলোকে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি'র মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের মতামতগুলো নিয়ে সরকার কাজ করবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডিএসইর বাজেট প্রস্তাবনা
পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সুপারিশগুলো হলো- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যেকার করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের বাজারে ধরে রাখতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেনের ওপর থেকে ১ লাখ টাকার বিপরীতে অগ্রিম আয়কর ৫০ টাকার পরিবর্ত ১৫ টাকা করা, সব ধরনের বিনিয়োগকারীর মূলধনি মুনাফাকে করমুক্ত করা, এক লাখ পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, এক লাখ-পরবর্তী লভ্যাংশ আয়ের ওপর আরোপিত করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে ঘোষণা করা।
সিএসইর বাজেট প্রস্তাবনা
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আসন্ন প্রস্তাবিত বাজেটে। সেগুলো হলো- কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করা, লভ্যাংশ করের উপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, এসএমই ও অল্টারনেটিং ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহকে প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, জিরো কুপন বন্ডের মতো অন্য বন্ডগুলি (কর্পোরেট বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ ইত্যাদি) হতে উদ্ভুত আয়কেও কর অব্যাহতি দেওয়া, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট থেকে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পূর্ববর্তী ০.০১৫ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করে এ রূপে কর্তিত করকে ব্রোকারেজ ব্যবসা হতে উদ্ভুত সমুদয় আয়ের জন্য চূড়ান্ত করদায় বিবেচনা করা, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা, যেসব দেশের সাথে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি বিদ্যমান আছে সেসব দেশের কোম্পানিসমূহ কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শ বা কন্সালটেন্সি সেবা, কারিগরি বা টেকনিক্যাল সেবা ও সফ্টওয়্যার মেইনটেনেন্সের উপর উৎসে কর কর্তনের বিধান রাজস্ব বোর্ডের কোনোরূপ সনদপত্র ছাড়া প্রত্যাহার করা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কর্তৃক ইস্যুকৃত ইউনিট সার্টিফিকেট এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ সীমা ৫ লাখ টাকা উঠিয়ে দেওয়া।
ডিবিএ’র বাজেট প্রস্তাবনা
আসন্ন বাজেটকে কেন্দ্র করে ডিবিএ’র পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো- কোম্পানি ব্যাতিত অন্যান্য করদাতার ক্ষেত্রে লভ্যাংশের উপর ১৫ শতাংশ চূড়ান্ত কর ধার্য করা, কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক অর্জিত মূলধনী আয় তার প্রারম্ভিক ইক্যুইটির ২০ শতাংশ অথবা ৫০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেটাই মূলধনী আয় করমুক্ত সীমা নির্ধারণ, সটক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজ অথবা বিএসইসি কর্তৃক অনুমদিত কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা তহবিলের ইউনিট লেনদেনের মাধ্যমে মূলধনী ক্ষতির সমন্বয় বা জের টানার বিধান রাখা, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধকালে ০.০২ শতাংশ হারে কর সংগ্রহ করা, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা সম্পদ ব্যবস্থাপক বা ফান্ড ম্যানেজার কর্তৃক ইস্যুকৃত ইউনিট সার্টিফিকেট এবং মিউচুয়াল ফান্ড ইটিএফ বা যৌথ বিনিয়োগ স্কিম ইউনিট সার্টিফিকেটি যেকোনো পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ থাকলে কর রেয়াত সুবিধা প্রদান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অধীনে পরিচালিত কোন স্টক এক্সচেঞ্জের সহিত তালিকাভুক্ত শেয়ার বা স্টক/মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ড/ট্রেজারি বন্ডসহ যেকোন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকলে কর রেয়াত সুবিধা প্রদান, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংরক্ষিত আয় সঞ্চিতি উদ্বৃত্ত ইত্যাদির উপর কর আরোপ প্রত্যাহার ও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা।
এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) পক্ষ থেকে বাজেটে প্রস্তাবে করপোরেট করহার ৩৭.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাধারণ কোম্পানির মতো করার দাবি জানিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের সুপারিশ
দেশের জনগণের রাজস্ব হিসাব বহির্ভূত টাকা ২০ শতাংশ হারে করারোপ সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার বিধান রাখা, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের ৫ শতাংশ হারে করারোপ করতে হবে, বিনিয়োগকারীর বিক্রয়কৃত শেয়ার হতে অর্জিত মুনাফার উপর ৫ শতাংশের বেশি করারোপ না করা এবং তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানো।
বিএসইসির সুপারিশ
গত ২৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব নাজমা মোবারকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে অ-তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান পূর্বের ন্যায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশে উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দেশি বা বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে এ করসুবিধা প্রদান আবশ্যক, যা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে, বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী, গতিশীল ও স্থিতিশীল করতে এ করসুবিধা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করে বিএসইসি।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব ত পর স থ ত ত উপদ ষ ট করম ক ত ব এসইস ন ত কর র জন য কর ত ক ম লধন আসন ন র উপর সরক র ইউন ট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে: ড. আনিসুজ্জামান
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, “সরকার পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের মতামতগুলো নিয়ে সরকার কাজ করবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি'র মাল্টিপারপাস হলে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “সবাইকে দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং কাজ করতে হবে। পুঁজিবাজারের সব বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি শীর্ষ সংগঠন বা ফোরাম গঠন করার অনুরোধ করছি। যাতে আগামীতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকার ও বিএসইসির সংযোগের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং সংযোগ আরো কার্যকরী হয়।”
আরো পড়ুন:
চবিতে বিআইসিএমর বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত, এমওইউ স্বাক্ষর
এনআরবিসি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ১০০ শতাংশ
এবাই প্রথম পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে সরকার। এতে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বিএসইসি'র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, কমিশনার মো. আলী আকবর এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাগণ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পথে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় বিষয় উঠে আসে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট নিরসনে নতুন ফান্ড আনয়ন ও সরকারের পুঁজিবাজার সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ, অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স ও ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফকরণ, পুজিবাজারে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় ও কোম্পানিগুলোকে আরো দায়বদ্ধ করা, পুঁজিবাজারে সব অনিয়ম-কারসাজির বিরুদ্ধে তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রেখে সংস্কার বাস্তবায়ন, পুঁজিবাজারের প্রতি সবার আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ, বাইব্যাক আইন বা শেয়ার পুনঃক্রয় আইন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ, ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর অনিয়মসমূহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিকাশ ও উন্নয়ন, পুঁজিবাজারে ভালো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এবং ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তকরণে উদ্যোগ গ্রহণ, গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সাধন, বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পুজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান, ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা ও যথার্থতা নিশ্চিতকরণে অডিটরের দায়িত্ব নিরূপণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রণোদনা প্রদান, আইসিবি'র বাজার সহায়ক ভূমিকা নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজারের সকল স্তরে দক্ষতা-পেশাদারিত্ব নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সংযোগ বৃদ্ধি, বিএসইসিতে পরামর্শ বক্স স্থাপন ও সময়ে সময়ে মতবিনিময় সভা আয়োজন ইত্যাদি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সভায় ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনারবৃন্দ বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের বিভিন্ন মতামত এবং প্রশ্নের জবাব দেন।
বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে সরকার ও বিএসইসির পক্ষ হতে আশ্বস্ত করা হয়। সভায় বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ তথা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এ ধরণের সংযোগের ফলে আগামীতে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে বিএসইসি আশা করে।
ঢাকা/এনটি/মেহেদী