যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন শুল্ক গত বুধবার থেকেই কার্যকর করার ঘোষণাও দেন তিনি। পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, তার এই পদক্ষেপের ফলে স্থানীয় স্টিল ইন্ডাস্ট্রি শক্তিশালী হবে ও জাতীয় সরবরাহ বাড়বে। পাশাপাশি চীনের ওপর নির্ভরতা কমবে। খবর-বিবিসি

ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, জাপানের নিপ্পন স্টিলের সঙ্গে ইউনাইটেড স্টেটস স্টিল কর্পোরেশন বা ইউএস স্টিলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্টিল উৎপাদন খাতে আরও ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। তবে চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা বাকি আছে। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে তার সর্বশেষ এই ঘোষণা দিলেন।

স্টিল কর্মীদের এক সমাবেশে তিনি বলছিলেন, ‘কোনো কারখানা বন্ধ কিংবা আউটসোর্সিং নয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি স্টিল কর্মী শিগগিরই তাদের প্রাপ্য পাঁচ হাজার ডলার বোনাস পাবেন। যুক্তরাষ্ট্র-জাপান চুক্তি নিয়ে স্টিল কর্মীদের মধ্যে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো যে, কীভাবে জাপান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের চুক্তিকে সম্মান করবে। এ সংগঠনটিই বেতন ও নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তার প্রথম মেয়াদে স্টিল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্টিল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান -ইউএস স্টিলকে রক্ষা করেছেন। এটি পিটসবার্গেই অবস্থিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এখন ইউএস স্টিলকে বাঁচিয়ে রাখা নিশ্চিত করতে তিনি শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আবারো পেনসিলভানিয়ার স্টিলকে আমেরিকার মেরুদণ্ড হিসেব দাঁড় করাতে যাচ্ছি, যা আগে হয়নি।’

ট্রাম্প এবার এই ঘোষণা এমন সময় দিলেন যখন তার বৈশ্বিক শুল্ক সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে আইনি লড়াই চলছে। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর তার শুল্ক নিয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। 

‘স্টিল কর্মীদের জন্য এটা একটা ভালো দিন’ বিবিসিকে বলছিলেন ট্রাম্পের সমাবেশে অংশ নেওয়া স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের একজন সদস্য জোবো বুর্গেস। বুর্গেস পেনসিলভানিয়ার ওয়াশিংটনের মেয়র। তিনি নিপ্পন স্টিলের সঙ্গে অংশীদারিত্বের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, এটি নতুন প্রজন্মের স্টিল কর্মী তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।তিনি একই সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুল্ক বাড়ানোর কারণে তারা অনেক অর্থ আয় করতে পেরেছিলেন। যদিও বুর্গেস বলেছেন, তিনি নির্বাচনে গত দুই দশক ধরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে আসছেন। ‘তবে আমি আমেরিকান উৎপাদকদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টি নিয়ে কখনও দ্বিমত পোষণ করি না’ বলেন তিনি।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বাজারে সংকট বেড়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের মধ্যে সম্পর্কেও ফাটল ধরছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দেশও রয়েছে। শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তারা পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প একই সাথে জেনেভায় চলতি মাসে হওয়া শুল্ক বিষয়ক সমঝোতা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন চীনের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির অভিযোগ সমঝোতা অনুযায়ী চীন নন-ট্যারিফ বাধা এখনো দূর করেনি।

চীন অবশ্য পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল করাকেই দায়ী করেছেন। তারা বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। চীন স্টিল খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদক। বিশ্বের অর্ধেক স্টিল তারা উৎপাদন করে। চীন, ভারত ও জাপানের পরেই এ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প ১২৪ বছরের পুরনো আমেরিকার স্টিল কোম্পানি ইউএস স্টিলে বিদেশি দখলদারিত্ব বন্ধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এখনো নিশ্চিত নয় যে জাপানের নিপ্পনের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব কীভাবে কাজ করবে এবং কারা কোম্পানিটির মালিকানায় থাকবে।

হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন ট্রাম্প নিপ্পনকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে রাজি করিয়েছেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ১৪ মাসে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে নিপ্পন। অন্য খবরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, দুই কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বোর্ডে ও নেতৃত্বে রেখেই তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইউএস স্টিলকে পরিচালনা করবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আমদ ন শ ল ক ক শ ল ক আর প য ক তর ষ ট র র ইউএস স ট ল স ট ল কর ম স ট লক আম র ক

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে

খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।

হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় না

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।

কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’

পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ