ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুল হকের বিরুদ্ধে প্রবন্ধে শতভাগ চৌর্যবৃত্তি, নারী সহকর্মীকে হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। তবে আওয়ামীপন্থি হওয়ায় নীল দলের প্রভাব খাটিয়ে বিগত প্রশাসনের সময় তিনি এসব অভিযোগ থেকে বারবার পার পেয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে গত ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর তিনজন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ড.

মো. রিদওয়ানুল হক বিগত আওয়ামীপন্থি প্রশাসনের সময় নিয়মবহির্ভূত বিদেশ গমন, প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তি, নারী সহকর্মীকে হয়রানি, উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষরসহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই আওয়ামীপন্থি নীল দলের প্রভাব খাটিয়ে তিনি শাস্তি এড়িয়ে যান।

আরো পড়ুন:

জবির ওয়েবসাইটে শিক্ষকদের প্রোফাইল হালনাগাদের দাবি

১৯ মাসে ইবির ক্লাব ভাড়া বকেয়া প্রায় ৭ লাখ টাকা, গাফিলতির অভিযোগ

ড. রিদওয়ানুল ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নিয়েই অস্ট্রেলিয়া যান। তখন সিন্ডিকেটে একই ধরনের অপরাধে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হলেও তার বিরুদ্ধে কেবল সতর্কীকরণ স্মারক জারি করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের হস্তক্ষেপেই তিনি শাস্তি থেকে পার পেয়ে যান।

২০১৮ সালে তিনি দুটি প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে জমা দেন। একটি প্রকাশিত হয় এবং অন্যটি অধ্যাপক পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হয়।

যাচাই করে দেখা যায়, উভয় প্রবন্ধেই শতভাগ চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রবন্ধে কেবল ‘সরকারি হাসপাতাল’ শব্দের পরিবর্তে ‘বেসরকারি হাসপাতাল’ বসিয়ে মূল লেখা হুবহু কপি করা হয়। তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত উল ইসলাম কমিটিকে প্রভাবিত করেন এবং বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অধ্যাপক রিদওয়ানকে শাস্তি থেকে রক্ষা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, ড. রিদওয়ান ২০২০ সালে আইবিএর একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অশালীন বার্তা পাঠিয়ে এক নারী সহকর্মীকে হয়রানি করেন। অনুষদের পাঁচজন নারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তাদের মতভেদপূর্ণ রিপোর্ট বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়। 

অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত উল ইসলাম এখানেও কমিটির ওপর প্রভাব বিস্তার করেন এবং অধ্যাপক রিধওয়ান বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে শাস্তি এড়ান বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অধ্যাপক রিদওয়ান, অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত, অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও অধ্যাপক আব্দুল মঈন আইবিএর বিবিএ শিক্ষার্থীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের একাডেমিক টার্ম পেপার ব্যবহার করে একটি ব্যবসায়িক কেস প্রকাশ করেন। ‘বিডিজবস ট্রিইনিং’ শিরোনামের কেসটিতে শিক্ষার্থীদের গবেষণা অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তাদের নাম বাদ দিয়ে অধ্যাপকদের নাম দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পর বাংলাদেশ এমবিএ অ্যাসোসিয়েশন বইটির প্রচার বন্ধ করে দেয় এবং অধ্যাপক রিদওয়ানের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে।

২০২৩ সালে নীল দলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দেওয়া বিবৃতিতে অধ্যাপক রিদওয়ান স্বাক্ষর করেন। এছাড়া, তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সঙ্গে মিলে তিনি নীল দলের পরিচয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন।

তবে অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং পূর্বেই মীমাংসিত বিষয়। এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. রিধওয়ানুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে। বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ল দল র প প রবন ধ ব যবস য় ন ল হক

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টির মধ্যে কুড়িলে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় গাড়িতে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি, পরে উদ্ধার

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে অপহরণের আড়াই ঘণ্টা পর শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের একটি বাসা থেকে মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ। অপহৃত মনির নারায়ণগঞ্জে এন জেড টেক্সটাইল নামে একটি পোশাক কারখানার জুনিয়র কর্মকর্তা।

রোববার জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এর গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা (পুলিশ পরিদর্শক) আনোয়ার সাত্তারের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাত ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ৯৯৯–এ ফোন করে জানান তাঁর সহকর্মী হেমায়েতপুরে একটি কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার পর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীর বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছে। ওই ব্যক্তি তাঁর সহকর্মীকে উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৯৯৯–এ কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার ভাটারা থানায় বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ভাটারা থানা–পুলিশ অপহৃতের অবস্থান শনাক্ত করে কুড়িল বিশ্বরোডের একটি বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় মনির হোসেনকে (৩৫) উদ্ধার করে। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

রোববার বিকেলে ভুক্তভোগীর সহকর্মী রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মনির হোসেন কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রচণ্ড বৃষ্টি হওয়ায় আশপাশে তেমন লোকজন ছিল না। এ সময় দুজন ব্যক্তি জোর করে মনিরকে একটি প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের একটি বাসায় আটকে রাখেন। এ সময় তাঁকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর বাড়িতে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তাঁরা। ফোন পেয়ে মনিরের বড় ভাই মাহমুদুল আলম বিষয়টি তাঁকে জানান। পরে তিনি ৯৯৯–এ ফোন করে সহায়তা চান।

রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ আড়াই ঘণ্টার মধ্যে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মনিরকে উদ্ধার করেছে। তবে অপহরণকারীরা পালিয়ে গেছে। মনির হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে গার্মেন্টসের আটতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
  • বৃষ্টির মধ্যে কুড়িলে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় গাড়িতে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি, পরে উদ্ধার