বাজেট পেশ সোমবার, লক্ষ্য অর্থনীতির ব্যয় সংকোচন
Published: 1st, June 2025 GMT
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস এই তিন প্রধান লক্ষ্যকে সামনে রেখে আসছে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট।
সূত্র বলছে, আগামী অর্থবছরে মোট বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো সরকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কম আকারের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বর্তমানে ‘ব্যয় সংকোচন নীতি’র দিকে যাচ্ছে। চলতি বছর দেশে মূল্যস্ফীতি একাধিকবার ৯ শতাংশের ঘরে পৌঁছেছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈদেশিক সহায়তা হ্রাসের ফলে অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খরচ কমিয়ে আনাই হচ্ছে মূল কৌশল।
আরো পড়ুন:
আসছে বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
বাজেট বিটিভির মাধ্যমে তুলে ধরবেন অর্থ উপদেষ্টা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.
সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হলেও, অবকাঠামো প্রকল্প, সরকার পরিচালন ব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকিতে কাটছাঁট করা হবে। উন্নয়ন বাজেট, অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে রাখা হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা কম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছে, তাও বাস্তবভিত্তিক রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের চেষ্টা চলছে।”
২০২৫–২৬ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। তবে এনবিআরের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “রাজস্ব ঘাটতি পূরণে কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ ও সম্পদ পুনর্বিন্যাসের ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে ছোট বাজেট দিয়েও কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সুফল আসবে না।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকলে বাজেট যতই ছোট হোক, তা জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই শৃঙ্খলা দেখাতে হবে।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছ থেকে ধারাবাহিক ঋণ পেতে হলে অর্থনৈতিক সংস্কারে বাস্তব অগ্রগতি প্রয়োজন। বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি সংস্কার ও রাজস্ব আদায়ের কৌশলে ইতিবাচক অঙ্গীকার রাখতে হবে। আইএমএফ-এর সর্বশেষ পর্যালোচনায় বাংলাদেশকে রিজার্ভ ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
জ্বালানি অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করার অঙ্গীকার করেছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনোনীত যুব সংসদের সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, জ্বালানি নিরাপত্তা জনগণের মৌলিক অধিকার। জ্বালানি খাতে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে—এটাই সংগ্রামের অঙ্গীকার। জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ক্যাব আয়োজিত প্রথম জ্বালানি যুব সংসদীয় অধিবেশনের শেষ দিনে আজ শনিবার এমন ঘোষণা পাঠ করে শপথ নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে শুক্রবার শুরু হওয়া দুই দিনের এ সংসদ শেষ হয় আজ।
শপথে আরও বলা হয়, জ্বালানি সংস্কার এই জ্বালানি অপরাধীদের বিচার দাবিকে জন–আন্দোলনের পর্যায়ে উন্নীত করা হবে। জ্বালানি রূপান্তরে ক্যাবের ১৩ দফা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
যুব সংসদের শেষ অধিবেশনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের এলাকায় লোডশেডিং একটা পরিচিত শব্দ। তারা শিক্ষিত না হলেও এটা জানে। একটা অসমতা রয়ে গেছে। আবার কৃষিতে বিদ্যুতের যে দাম, মাছ চাষ বা পোলট্রি খাতে সেই দামে দেওয়া হয় না। এটা করতে হলে ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। অর্থ মন্ত্রণালয় রাজি হয়েছে। এখন বিইআরসির অনুমোদন লাগবে।
যুব সংসদের সপ্তম অধিবেশনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে টাকা লুটপাট করাই ছিল ফ্যাসিবাদের সময় মূল কাজ। গত সরকার নিজেদের পকেটে টাকা ঢোকাতে সেদিকে নজর দিয়েছে। পৃথিবীকে বাঁচাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতেই হবে। বিএনপির ৩১ দফায় স্পষ্ট করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার লুণ্ঠনের উদ্দেশ্যে জ্বালানি খাতে দায়মুক্তির আইন করেছে দাবি করে ওই আইন বিলোপের দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, শুধু জ্বালানি নয়, সব খাতেই সমস্যা আছে। রাজনৈতিক নেতা যদি অসৎ হয়, অস্বাভাবিক উপায়ে নেতা হন, সবকিছু তাঁরা অস্বাভাবিক উপায়ে করেন।
যুব সংসদের শেষ অধিবেশনে দুই দিনের সংসদের সারাংশ তুলে ধরা হয়।এতে বলা হয়, এতে ১০০ ‘সংসদ সদস্য’–এর অংশগ্রহণে ১৯টি প্রবন্ধ উপস্থাপনা ছিল দুই দিনের যুব সংসদে। এক হাজার নিবন্ধিত শিক্ষার্থী নিয়ে গত এক বছরে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এই সংসদ সদস্যদের বাছাই করা হয়।
দুই দিনের যুব সংসদে অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মোট আটটি অধিবেশনে জ্বালানি খাতের আলাদা আলাদা বিষয়ের ওপর বেশ কিছু নিবন্ধ তুলে ধরা হয়। এতে বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ার সমালোচনা করা হয়। জ্বালানি রূপান্তরে ক্যাবের ১৩ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান অংশগ্রহণকারীরা।
শেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হলে জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত হবে।পরবর্তী যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা এ আন্দোলনের দাবি মেনে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।