নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়া জামায়াতের দলগত অধিকার: হামিদুর রহমান
Published: 2nd, June 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা ফিরে পাওয়া দলটির দলগত অধিকার।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জামায়াতের প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেওয়া হামিদুর রহমান।
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ গতকাল রোববার এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, রুল অ্যাবসলিউট ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা ন্যায়সংগত হয়নি। এ অনুসারে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে দেওয়া রায় ও আদেশ বাতিল করা হলো। এ ছাড়া দলটির ক্ষেত্রে পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন ইস্যু এবং অন্য কোনো ইস্যু যদি থাকে, তা সাংবিধানিক ম্যান্ডেট (বিচারগত ও আইনগত) পুরোপুরি প্রয়োগ করে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশের কপিসহ আজ তাঁরা ইসির সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
আরও পড়ুনঅবৈধ ঘোষণার রায় বাতিল, জামায়াতের নিবন্ধনসহ অন্য বিষয় নিষ্পত্তি করবে ইসি০১ জুন ২০২৫সে অনুসারে আজ নির্বাচন ভবনে গিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের হামিদুর রহমান বলেন, আদালত জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ায় তাঁরা সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানান। জামায়াতের নিবন্ধনসহ সব বিষয় ২০১৩ সালের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০১৩ সালের আগে জামায়াতের প্রার্থীরা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন। তাই প্রতীক নিয়ে আলাদা কোনো বক্তব্য থাকার সুযোগ নেই। আদালতের রায় দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার জামায়াতের নিবন্ধন অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন হামিদুর রহমান। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পূর্ণ কমিশন জামায়াতের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, মো.
জামায়াতের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার ও আইনজীবী শিশির মনির।
আরও পড়ুনজামায়াত ও ইশরাকের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা হাতে পেলে ব্যবস্থা: ইসি১৮ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ম দ র রহম ন সদস য দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মামলায় গ্রেপ্তারে অনুমতির সিদ্ধান্ত স্থগিতের আদেশ আপাতত বহাল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের এমন সিদ্ধান্ত (অফিস আদেশ) স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপাতত বহাল থাকছে। এ-সংক্রান্ত রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গত ৯ এপ্রিল অফিস আদেশ জারি করা হয়। এই অফিস আদেশের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন ২০ এপ্রিল রিটটি করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এমন সিদ্ধান্তের (অফিস আদেশ) কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। রুলে ৯ এপ্রিলের সিদ্ধান্ত (ডিএমপির) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত মাসে আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা গত ৭ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি (সিএমপি) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করে। আগের ধারাবাহিকতায় আজ আবেদন দুটি একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ২৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানিতে ছিলেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন।
আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থগিতাদেশ দেননি আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকছে। স্থগিতাদেশ না দিয়ে হাইকোর্টে এ-সংক্রান্ত রুল শুনানি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।’
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাসের জন্য হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল ও আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে অবকাশ শেষে আদালত খোলার (২২ জুন) দুই সপ্তাহের মধ্যে এ–সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে কমিশনারের পক্ষে ৯ এপ্রিল ‘অফিস আদেশ’ জারি করেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন। অফিস আদেশের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্ত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অধিক। এসব মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। উপযুক্ত প্রমাণ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনার মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।