বিদেশি লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতে চান? তাহলে এখন থেকে আপনার বাজেট বাড়াতে হবে। এবার বাজেটে এক পদক্ষেপের কারণে লিপস্টিকসহ ঠোঁট রাঙানোর উপকরণের দাম বাড়বে। ঠোঁট রাঙানোসহ নারীর সাজসজ্জায় ব্যবহার হওয়া মোট ১০ শ্রেণির পণ্য কিনতে এই খরচ বাড়বে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম বাজেটে নারীদের খরচ বাড়ানোর এই আয়োজন করেছে। এ জন্য শুল্ককর বাড়াতে হয়নি। কিন্তু যে ন্যূনতম মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হয়, তা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাতে শুল্ক–করও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে এসব উপকরণ আমদানির হিসাব করে প্রথম আলো দেখেছে, নতুন পদক্ষেপের কারণে বছরে সরকারের ৮০০ কোটি টাকার কমবেশি রাজস্ব বাড়তে পারে।

সৌন্দর্যচর্চার এই উপকরণ আমদানির সময় প্রথমে সরকারকে এই রাজস্ব দেন আমদানিকারকেরা। পণ্য বিক্রির সময় তা যুক্ত হবে পণ্যের বিক্রয়মূল্যে। অর্থাৎ বছরে এই ৮০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ বহন করতে হবে ক্রেতাদের।

লিপস্টিকের কথা ধরা যাক। এত দিন এই পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২০ ডলার। মোট শুল্ক–করের হার ১৫৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। তাতে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানিতে শুল্ক–কর দিতে হতো ৩ হাজার ৯১৫ টাকা। বাজেটে ন্যূনতম শুল্কায়ন–মূল্য দ্বিগুণ করে ৪০ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। অর্থাৎ আমদানিকারক ৪০ ডলারের নিচে যত দরেই আমদানি করুক না কেন, ন্যূনতম ৪০ ডলার দরে শুল্কায়ন হবে। এতে প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর দিতে হবে প্রায় সাত হাজার ৮৩০ টাকা।

ঠোঁট রাঙানোর আগে লিপ লাইনার ব্যবহার করেন অনেকে। সেখানেও বাড়তি খরচ গুনতে হবে। এত দিন সাধারণ মানের লিপ লাইনার প্রতি কেজি ১০ ডলারে শুল্কায়ন হতো। এখন ন্যূনতম ২০ ডলার দরে শুল্কায়ন করতে হবে। তাতে আগে যেখানে প্রতি কেজি ১ হাজার ৯৫৭ টাকা শুল্ক–কর দিতে হতো, সেখানে এখন তা দিতে হবে দ্বিগুণ।

ঠোঁট রাঙাতে বাড়তি খরচ তো গুনলেন। এবার চোখ ও ভ্রু জোড়া সাজাতে হলে আগেই বাজেট বাড়িয়ে নিন। মাশকারা, শ্যাডো, কাজল—যা–ই কিনবেন, খরচ করতে হবে একটু বেশিই। এত দিন এসব পণ্য আমদানিতে কেজিপ্রতি ন্যূনতম শুল্কায়নমূল্য ছিল ৭ ডলার। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ১০ ডলার করা হয়েছে। তাতে আগে যেখানে কেজিপ্রতি শুল্ক দিতে হতো ১ হাজার ৩৭১ টাকা, এখন দিতে হবে প্রায় দুই হাজার টাকা।

হাত–পায়ের সৌন্দর্যচর্চায়ও বাড়তি খরচ গুনতে হবে। হাতে–পায়ের সৌন্দর্যচর্চার উপকরণ আমদানিতে এত দিন প্রতি কেজিতে শুল্ক–কর দিতে হতো ৯৭৯ টাকা। এখন দিতে হবে ১ হাজার ৯৫৮ টাকা। ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর কারণেই এই বাড়তি খরচ দিতে হবে।

সাজের আগে–পরে মুখ ধোয়ার জন্য দরকার ফেসওয়াশ। এবার বিদেশি ফেসওয়াশেও ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য সাড়ে ৬ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। এত দিন কেজিপ্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা শুল্ককর দিতে হতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ২০০ টাকা।

বিদেশি আর যেসব প্রসাধন ব্যবহার করতে হলে ব্যক্তিগত বাজেট বাড়াতে হবে, তা হলো ফাউন্ডেশন, মেক–আপ কিট, রং ফর্সা করার ক্রিম, পাউডার, ময়েশ্চার লোশন ইত্যাদি। এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন–মূল্য প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।

মূলত রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার নারীদের সৌন্দর্যচর্চায় হাত দিয়েছে। এনবিআরের হিসাবে দেখা গেছে, গত ১১ মাসে সৌন্দর্যচর্চার ১০ শ্রেণির উপকরণ আমদানি হয়েছে সাড়ে ৪৫ লাখ কেজি। এসব উপকরণের শুল্কায়ন–মূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা। সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৭৮৯ কোটি টাকা। বছর শেষে তা সাড়ে ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। ন্যূনতম শুল্কায়ন–মূল্য বাড়ানোর কারণে আগামী অর্থবছরে এই খাতে সরকারের রাজস্ব আদায় ৮০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে, যা দিন শেষে গুনতে হবে ক্রেতাদের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপকরণ আমদ ন শ ল ক কর দ ত ৮০০ ক ট এত দ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

অন্তর্বর্তী সরকার আজ সোমবার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবে। বাজেট এলে বেশির ভাগ মানুষের মাথায় প্রথম প্রশ্ন আসে– জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না-তো। দুপুর ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য দিবেন। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।

বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই অতিরিক্ত সুবিধার কিছুটা লাগাম টানতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। এতে বাড়তে পারে দামও। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকের পক্ষে ভবিষ্যতে এসব পণ্য কেনার শখ পূরণ করা কঠিন হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০১৯ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন অনুসারে এতদিন ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেশার কুকারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে অন্তবর্তী সরকারের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব খাতে অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে তিনটি ধাপে ভ্যাট বসাতে যাচ্ছে সরকার। যেমন, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ভ্যাট বলবৎ থাকবে। এর পরের দুই বছর ভ্যাটের এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তার পরের অর্থবছর ভ্যাট আরও বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। এটি কার্যকর থাকবে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এ সময়ে পণ্যগুলোর উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। 

এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের ক্ষেত্রে কিছুটা কঠোর হচ্ছে সরকার। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে। 

২০১৯ সালের প্রজ্ঞানপন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছে এসব পণ্য। সরকার রাজস্ব বাড়াতে এসব খাতের অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে এসব পণ্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট (আগাম করসহ) দিতে হবে। তবে এসব খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। 

মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে আসছে বাজেটে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট দুই থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। 

বর্তমানে আয়রন বা স্টিলের এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে, যা ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। স্থানীয়ভাবে লিফট উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। এই সুবিধা আর থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক আরোপ হবে, যা ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর পরের বছর এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরের বছর আরও বেড়ে মূসক হবে ১০ শতাংশ। ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এটি বহাল রাখার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। তবে ৩০ সাল পর্যন্ত লিফটের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করসহ সমুদয় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদের দুপুরে
  • স্থানীয় শিল্পে সুরক্ষা কমলো
  • স্থানীয় শিল্পে কমলো কর অব্যাহতি সুবিধা
  • লিচু–লেবুর সসে লিচি আই বলের রেসিপি
  • নারীদের সাজসজ্জায় গুনতে হবে বাড়তি খরচ
  • বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
  • বাজেটে বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম
  • ঈশ্বরদী ইপিজেডে শত শত শ্রমিকের ডায়রিয়া
  • ঈদ রেসিপি : মাংসের কোফতা কারি