অন্তর্বর্তী সরকার আজ সোমবার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবে। বাজেট এলে বেশির ভাগ মানুষের মাথায় প্রথম প্রশ্ন আসে– জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না-তো। দুপুর ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্য দিবেন। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।

বাড়তে পারে যেসব পণ্যের দাম

ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই অতিরিক্ত সুবিধার কিছুটা লাগাম টানতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। এতে বাড়তে পারে দামও। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকের পক্ষে ভবিষ্যতে এসব পণ্য কেনার শখ পূরণ করা কঠিন হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০১৯ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন অনুসারে এতদিন ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেশার কুকারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে অন্তবর্তী সরকারের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব খাতে অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে তিনটি ধাপে ভ্যাট বসাতে যাচ্ছে সরকার। যেমন, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ভ্যাট বলবৎ থাকবে। এর পরের দুই বছর ভ্যাটের এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তার পরের অর্থবছর ভ্যাট আরও বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। এটি কার্যকর থাকবে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এ সময়ে পণ্যগুলোর উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক (আগাম করসহ) অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। 

এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের ক্ষেত্রে কিছুটা কঠোর হচ্ছে সরকার। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে। 

২০১৯ সালের প্রজ্ঞানপন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছে এসব পণ্য। সরকার রাজস্ব বাড়াতে এসব খাতের অতিরিক্ত সুরক্ষা সুবিধা প্রত্যাহার করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে এসব পণ্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট (আগাম করসহ) দিতে হবে। তবে এসব খাতে বিদ্যমান বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। 

মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা রয়েছে। তবে আসছে বাজেটে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট দুই থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। 

বর্তমানে আয়রন বা স্টিলের এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে, যা ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। স্থানীয়ভাবে লিফট উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। এই সুবিধা আর থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক আরোপ হবে, যা ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর পরের বছর এই হার বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরের বছর আরও বেড়ে মূসক হবে ১০ শতাংশ। ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এটি বহাল রাখার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। তবে ৩০ সাল পর্যন্ত লিফটের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করসহ সমুদয় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট ২০২৫ ২৬ শ আমদ ন ব যবহ ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি ঋণ শোধে রেকর্ড, এক বছরে ৪০৯ কোটি ডলার দিল বাংলাদেশ

বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রথমবারের মতো ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিদায়ী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসলসহ মিলিয়ে প্রায় ৪০৯ কোটি ডলার শোধ করেছে বাংলাদেশ। এটি এযাবৎকালের রেকর্ড। এর আগে কখনো এত ঋণ শোধ করা হয়নি। আগের অর্থবছরে ৩৩৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি, ছাড় ও সুদাসলের হালনাগাদ চিত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি ঋণের দায় ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, যা অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-জুন সময়ে ৪০৮ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এর মানে, প্রতি মাসে গড়ে ৩৪ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।

ইআরডির সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সরকার এ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেছে, এর মধ্যে ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৫৯ কোটি ডলার। ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৪৯ কোটি ডলার।

এদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাড়লেও কমেছে বিদেশি ঋণ ছাড় ও ঋণের প্রতিশ্রুতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭০২ কোটি ডলার। একই সময়ে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৪৮ কোটি ডলারের। যদিও গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭৯২ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরে ঋণ ছাড় হয়েছে ৮৫৭ কোটি ডলার। আর প্রতিশ্রুতি ছিল ৮৩২ কোটি ডলার।

এদিকে ঋণ দেওয়ার শীর্ষে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে ২৫২ কোটি ডলার ছাড় করেছে। এরপর বিশ্বব্যাংক ও জাপানের অবস্থান। তবে ঋণের অর্থ ছাড় করলেও ভারত, চীন ও রাশিয়া চলতি অর্থবছরে নতুন ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

এক যুগে বিদেশি ঋণ শোধ প্রায় চার গুণ

কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। প্রায় ১০ বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পৌনে ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৪০৯ কোটি ডলার দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে, অর্থাৎ গত এক যুগে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে প্রায় চার গুণের কাছাকাছি হয়েছে।

ভবিষ্যতে ঋণের চাপ আরও বাড়বে। কারণ, বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ শুরু হচ্ছে। যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শুরু হচ্ছে শিগগিরই। জাপানকে এ অর্থ দিতে হবে। এদিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ ও মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শুরু হয়েছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বড় বড় মেগা প্রকল্পের ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
  • শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ
  • হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা
  • জুলাইয়ের ২৭ দিনে ৯ ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি
  • বিদেশি ঋণ শোধে রেকর্ড, এক বছরে ৪০৯ কোটি ডলার দিল বাংলাদেশ
  • ২৬ দিনে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ছুঁই ছুঁই
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের ১৬৭ সন্তানকে পোষ্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
  • চলতি মাসে ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৯৩ কোটি ডলার
  • ১০ তলা ভবন নির্মাণে খরচ কত
  • মোটরসাইকেল বিক্রি ১৭ শতাংশ বেড়েছে