চড়া দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করায় গ্যাস খাতে লোকসান করছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। অথচ একই গ্যাসে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে দুই বার শুল্ক-কর নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পেট্রোবাংলার সাশ্রয় হতে পারে ছয় হাজার থেকে আট হাজার কোটি টাকা।

দীর্ঘ দিন ধরে এনবিআরের বকেয়া শোধ করতে পারছিল না পেট্রোবাংলা। তাই একই গ্যাসে দুই বার ভ্যাট না নিয়ে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন করে তারা। জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়ে কয়েক দফায়। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পাশাপাশি গ্যাস বিতরণ সংস্থার উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বর্তমানে গড়ে ১৪ ডলারে এলএনজি কিনছে পেট্রোবাংলা। ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় ডলার মিলছে। এ হিসাবে বছরে ১০০ থেকে ১০৫টি এলএনজি কার্গো আমদানি করা হলে বছরে ৬ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে উৎসে কর কমেছে ৬৬ শতাংশ। এতে তিতাস ও বাখরাবাদের মতো বিতরণ কোম্পানির খরচ অনেক কমে যাবে। পরিকল্পনা অনুসারে কারিগরি ক্ষতি কমাতে পারলে শিগগিরই মুনাফায় ফিরতে পারে তারা।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলএনজি আমদানি খরচ কমে গেলে আরও বেশি হারে কার্গো আমদানি করা যাবে। ইতিমধ্যে আমদানি বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। শিল্পের গ্যাস–সংকট কেটে যাবে। উৎসে কর কমানোয় বিতরণ কোম্পানির খরচও কমে আসবে।

বর্তমানে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হচ্ছে ২৯ টাকা ৩৯ পয়সা। আর তারা এটি বিক্রি করে পাচ্ছে ২২ টাকা ৮৭ পয়সা। লোকসান মেটাতে প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয় তারা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ হাজার কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩৩২ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছে তারা। তবে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তাই খরচ কমাতে নানা উপায় খুঁজছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলা বলছে, বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় পেট্রোবাংলার। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এর বাইরে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে। এভাবে বাড়তি রাজস্ব আদায় করে পেট্রোবাংলাকে আবার ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকির তেমন প্রয়োজন হবে না পেট্রোবাংলার।

আরও পড়ুনগ্যাসে দুই দফা ভ্যাট, পেট্রোবাংলার বকেয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা০৮ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর য য় ভর ত ক আমদ ন ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

মে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৮৫৯ কোটি ডলার। তবে একক মাস হিসেবে এই প্রবৃদ্ধি আরও বেশি। চলতি অর্থবছরের মে মাসে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের মে মাসে এই রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার ২৫১ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত বছরের মে মাসের তুলনায় এই বছরের মে মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১১ মাসে মোট তৈরি পোশাক খাতে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলার। যা মোট আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশ। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। এছাড়া একই সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে হোম টেক্সটাইল পণ্যে ৪ দশমিক ৭৮, প্লাস্টিক পণ্যে ১৮ দশমিক ৬২, কৃষি পণ্যে ৩ দশমিক ১৭, মৎস ও হিমায়িত খাদ্য পণ্যে ১৭ দশমিক ৫৩, প্রকৌশল পণ্যে ১২ দশমিক ৪০, সিরামিক পণ্যের ৮ দশমিক ৪২, চামড়ার জুতায় ২৮ দশমিক ৯৬, ইলেকট্রিক পণ্যের ১২ দশমিক ৪০, ফার্নিচার পণ্যে ৪ দশমিক ৯৩, তামাক পণ্যে ৩৬ ও ফলমূলে ১৫২  শতাংশ। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শাকসবিজ রপ্তানিতে ৩২ দশমিক ১৫, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন পণ্যে ৭ দশমিক ৪২, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ পণ্যে ১১ দশমিক ৫৮, চামড়াজাত পণ্যে ৩ দশমিক ৩৯, শুকনো খাবারে ১৩ দশমকি ২৫ ও কাঁচা পাট রপ্তানিতে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে।  
 
চলতি অর্থবছরের মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ হাজার কোটি ডলার। এরমধ্যে অর্থবছরের এই ১১ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৬৬৩ কোটি ডলার। সেই তুলনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কম হয়েছে দেড় শতাংশ। 

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন বিনিয়োগ চিন্তা পরের কথা, বিদ্যমান ব্যবসা নিয়েই দুশ্চিন্তা
  • সব করদাতার অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের পরিকল্পনা
  • বাজেট কিছুটা গতানুগতিকই হয়েছে
  • অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা নেই বাজেটে
  • লেনদেন কর বাদ দেওয়া প্রয়োজন: এমসিসিআই
  • পণ্য রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ
  • মে মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ 
  • বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত: অর্থ উপদেষ্টা