এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার সাশ্রয় হতে পারে ৬–৮ হাজার কোটি টাকা
Published: 2nd, June 2025 GMT
চড়া দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করায় গ্যাস খাতে লোকসান করছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। অথচ একই গ্যাসে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে দুই বার শুল্ক-কর নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পেট্রোবাংলার সাশ্রয় হতে পারে ছয় হাজার থেকে আট হাজার কোটি টাকা।
দীর্ঘ দিন ধরে এনবিআরের বকেয়া শোধ করতে পারছিল না পেট্রোবাংলা। তাই একই গ্যাসে দুই বার ভ্যাট না নিয়ে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন করে তারা। জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়ে কয়েক দফায়। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পাশাপাশি গ্যাস বিতরণ সংস্থার উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বর্তমানে গড়ে ১৪ ডলারে এলএনজি কিনছে পেট্রোবাংলা। ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় ডলার মিলছে। এ হিসাবে বছরে ১০০ থেকে ১০৫টি এলএনজি কার্গো আমদানি করা হলে বছরে ৬ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে উৎসে কর কমেছে ৬৬ শতাংশ। এতে তিতাস ও বাখরাবাদের মতো বিতরণ কোম্পানির খরচ অনেক কমে যাবে। পরিকল্পনা অনুসারে কারিগরি ক্ষতি কমাতে পারলে শিগগিরই মুনাফায় ফিরতে পারে তারা।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলএনজি আমদানি খরচ কমে গেলে আরও বেশি হারে কার্গো আমদানি করা যাবে। ইতিমধ্যে আমদানি বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। শিল্পের গ্যাস–সংকট কেটে যাবে। উৎসে কর কমানোয় বিতরণ কোম্পানির খরচও কমে আসবে।
বর্তমানে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হচ্ছে ২৯ টাকা ৩৯ পয়সা। আর তারা এটি বিক্রি করে পাচ্ছে ২২ টাকা ৮৭ পয়সা। লোকসান মেটাতে প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয় তারা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ হাজার কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩৩২ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছে তারা। তবে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তাই খরচ কমাতে নানা উপায় খুঁজছে পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলা বলছে, বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় পেট্রোবাংলার। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এর বাইরে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে। এভাবে বাড়তি রাজস্ব আদায় করে পেট্রোবাংলাকে আবার ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকির তেমন প্রয়োজন হবে না পেট্রোবাংলার।
আরও পড়ুনগ্যাসে দুই দফা ভ্যাট, পেট্রোবাংলার বকেয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা০৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর য য় ভর ত ক আমদ ন ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
সরকারি পর্যায়ে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি চুক্তি অব্যাহত রাখা এবং চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জি টু জি চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সারের আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
প্রান্তিক চাষিদের মাঝে ইউরিয়া সারের সাপ্লাইচেইনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের যোগান বজায় রাখতে জি-টু-জি ভিত্তিতে সৌদি আরব থেকে চুক্তির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। সাবিক-সৌদি আরবের সাথে বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ ৩০/০৬/২০২৫ শেষ হয়। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নিরবচ্ছিন্ন ইউরিয়া সার সরবরাহের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে সর্বমোট ৬ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। দেশটি থেকে প্রতি লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে।২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে থেকে মোট ৩০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায়, চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৯৬১ সালে ৫৪.৯৯ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়।১৯৭২ সালে মিলটি জাতীয়করণ করা হয় এবং পরিচালনার দায়িত্ব বিটিএমসির অধীনে ন্যস্ত হয়।পরবর্তীতে মিলটি বেসরকারি খাতে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হলেও চুক্তি ভঙ্গ করার কারণে পুনরায় পুনঃগ্রহণ করে বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম এরিয়ায় বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য বিটিএমসির জলিল টেক্সটাইল মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের অনুরোধ করে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাবাহিনী প্রধান আলোচনা ও মৌখিক সম্মতি গ্রহণ করেন।
‘গত ২৪/১২/২০১৮ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রয়ের অনুমোদনের প্রস্তাব করা হলে মিলটির অব্যবহৃত জমি বিক্রয় না করে সরকারের উন্নয়নমূলক/জনহিতকর কাজে উক্ত জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।’ মিলের জমিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হলে মিলের জমি সরকারের উন্নয়নমূলক ব্যবহৃত হবে।
এমতাবস্থায়, জলিল টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড এর ৫৪.৯৯ একর জমি মিলের কাছে সরকারি পাওনা বাবদ ১৭ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বিটিএমসিকে প্রদানপূর্বক মিলের জমি প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। বর্ণিত ৫৪.৯৯ একর জমির মৌজা মূল্য প্রায় ১১১ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি