সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ, প্রতিমন্ত্রী তাজুল, সাংবাদিক মুন্নী সাহার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
Published: 3rd, June 2025 GMT
সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামসহ তাঁর পরিবারের পাঁচজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র অকার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাংবাদিক মুন্নী সাহা, তাঁর স্বামী কবির হোসেন, মা আপেল রানীসহ পাঁচজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.
দুদক লিখিতভাবে আদালতকে বলেছে, সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় কৃষিজমি, ফ্ল্যাট-প্লট ক্রয় এবং তাঁর নামে বিপুল পরিমাণ অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাঁরা সম্পত্তি হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। শুনানি নিয়ে আদালত ফরহাদ হোসেন ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামের বিষয়ে দুদক আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অর্থনৈতিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তাজুল, তাঁর স্ত্রী হাসু ইসলাম, ছেলে ধানাদ ইসলাম, মেয়ে ফারাহ ইসলাম ও শামা ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ব্যাপারে দুদক আদালতকে বলেছে, তাঁর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন করার অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তিনি বিদেশি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দুদক আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিনের ব্যাপারে দুদক আদালতকে জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ৫৫ হাজার ৩১০ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে ভোটার বানানোর অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের ব্যাপারে দুদক আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আদালত শাহীন চাকলাদারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তাঁর পরিবারের ব্যাপারে দুদক আদালতকে বলেছে, সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তাঁর স্বামী কবির হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায় অর্থ উপার্জন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তাঁরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, মুন্নী সাহা, তাঁর স্বামী কবির হোসেন, মুন্নী সাহার মা আপেল রানী সাহা, ভাই প্রণব কুমার সাহা এবং তপন কুমার সাহার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।