পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সুনামগঞ্জে ব্যক্তিগত টিলাকে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ঘোষণা
Published: 4th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জে একটি টিলাকে বেসরকারি উদ্যোগে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ব্যক্তিমালিকানাধীন ওই টিলাকে এই অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের চিনাউরা এলাকায় ভারত সীমান্ত ঘেঁষে ওই টিলার অবস্থান। এটির মালিক সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী তরুণ সালেহিন চৌধুরী।
প্রায় ছয় একর জমির ওই টিলায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটি (হাউস) ও ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফেড) এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে এলাকার কিশোর-তরুণদের পাখি ও বন্য প্রাণী রক্ষায় শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথবাক্য পাঠ করান ফেড-এর সহসভাপতি শিক্ষক মোদাচ্ছির আলম। এরপর টিলার প্রায় এক একর জঙ্গলকে পাখি ও বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ সময় জানানো হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের তাগিদ থেকে হাউসের নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী নিজ উদ্যোগে টিলার প্রায় এক একর পাহাড়ি জায়গাকে ঘন জঙ্গলে পরিণত করেন। তাঁর উদ্দেশ্য, পাখি ও বন্য প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয় ও সংরক্ষণ করা। এখন টিলাটি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ও পরিযায়ী পাখি, গুইসাপ, শজারু ও বন মোরগের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হাসান আতাহের, হাউসের নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী, স্থানীয় বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মঙ্গল মিয়া, কৃষক আবদুল আলী, ‘প্রতিবেশ ও উন্নয়নে তারুণ্য’-এর সভাপতি ফারুক আহমদ, সমাজকর্মী শরীফ আহমদ, মনোয়ার চৌধুরী, বিশ্বজন মানবিক সংগঠনের সভাপতি কর্ণ বাবু দাস।
সুজনের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হাসান আতাহের বলেন, এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। সালেহিন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছেন। এতে মানুষজনের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। সবাই মিলেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও বন য প র ণ র স ন মগঞ জ পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।