ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সরকারি বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে রশিদ ছাড়াই। একই চিত্র বেসরকারি পরিবহনেও, তবে তাদের বেলায় পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

 বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ফরিদপুর, মাদারীপুরগামী যাত্রীরা টিকিটের জন্য দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু টিকিট মিললেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে সবাইকে।

বরিশালগামী যাত্রী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা থেকে বরিশালগামী এসি বাসের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা। এখন টিকিট কাটতে গিয়ে দেখা গেল ৭০০ টাকা নিচ্ছে। কোনো রশিদ দিচ্ছে না, কোনো ব্যাখ্যাও না। জিজ্ঞেস করলেই বলে ‘ঈদের স্পেশাল চার্জ’। এটা তো ডাকাতি!”

আরো পড়ুন:

ঈদযাত্রা: কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ঢল

১৯৮তম ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, নিরাপত্তায় জোর

একই অভিযোগ পটুয়াখালীগামী যাত্রী মো.

শরিফুলের। তিনি বলেন, “নন-এসি বাসে সাধারণত ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। এবার বলছে ৬০০ টাকা। সরকারি বাসেই যদি বাড়তি ভাড়া নেয়, তাহলে প্রাইভেট বাসে আমরা কী পাব?”

নির্ধারিত ভাড়া বনাম আদায়কৃত ভাড়া (ঈদ উপলক্ষে)

পুরোনো ভাড়া         ধরন             আদায়কৃত ভাড়া

ঢাকা–বরিশাল        এসি                ৬০০ টাকা ৭০০ টাকা
ঢাকা–বরিশাল        নন-এসি          ৪০০ টাকা ৫০০ টাকা
ঢাকা–পটুয়াখালী     নন-এসি         ৫০০টাকা ৬০০ টাকা

ঢাকা–পিরোজপুর   নন-এসি         ৪৮০ টাকা ৬০০ টাকা
ঢাকা–বরগুনা         নন-এসি         ৫৫০ টাকা৬৫০ টাকা


বিআরটিসি বাস চালক রহিম মিয়া বলেন, “ঈদের সময় একদিকে যাত্রী বেশি, আরেকদিকে বাস খালি নিয়ে আসতে হয়। তেলের খরচ, কমিশন, চাহিদা সব কিছু মিলে ভাড়া একটু বাড়ে। এটা আমাদেরও বাইরে থেকে চাপ।”

বেসরকারি পরিবহনগুলোর কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় গড়ে ২০-৩০ শতাংশ বেশি আদায় করছেন তারা। কেউ কেউ ভাড়ার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ, পিক টাইম চার্জ যুক্ত করে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। তবে কোনো পরিবহন সংস্থা সরকারি অনুমোদনের কপি দেখাতে পারেনি।

বরিশালগামী যাত্রী সুমাইয়া আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঘরে বাবা-মা অপেক্ষা করছেন। তবে টিকিট কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, তার ওপর আবার ভাড়াও বেশি দিতে হচ্ছে। এটা কেমন রাষ্ট্রীয় সেবা?

যাত্রী আবির হাসান বলেন, “বিআরটিসির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে নিয়ম মানছে না, সেখানে বেসরকারি পরিবহনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকর, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এসআই মো. জামান বলেন, “আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

বিআরটিসির চিফ ইনফরমেশন অফিসার মো. মাসুদ বলেন, “ঈদের সময় যাত্রী বেশি, বাস কম। তাই কিছু রুটে সামান্য পরিবর্তন হয়। তবে কেউ নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে নিলে তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেব।”

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাড়তি ভাড়া আদায় দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ জানাতে হবে।

‘ঈদের আনন্দ লুটে নিচ্ছে পরিবহন সিন্ডিকেট’

একাধিক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে  বলেন, বেসরকারি বাসের অতিরিক্ত ভাড়া ও টিকিট সংকটের পাশাপাশি এবার সরকারি পরিবহন খাতেও অনিয়ম ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। অনেক যাত্রী বলছেন, সবাই মিলে লুটে নিচ্ছে ঈদের আনন্দ। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা যদি ভোগান্তির আরেক নাম হয়, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিয়েই জনমনে প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

ঢাকা/এএএম/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব ঈদ ব সরক র ব আরট স ৬০০ ট ক পর বহন বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন

ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুর পাড় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে  সড়ক অবরোধ সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও  করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মানববন্ধন থেকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ  করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এতে করে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের উভয় পাশে যানবাহন বন্ধ হয়ে যানজটের সৃস্টি হয়।

বুধবার সকাল ১০ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ  অনুস্ঠিত হয়। ১১ টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন আজ দুপুরের পর এলাকাবাসীর সাথে নির্বাহী কর্মকর্তা কথা বলবেন তাদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং দ্রুতই তা সমাধানের জন্য কাজ করবেন। 

এ সময় লালপুর পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন মুসা বলেন জলাবদ্ধতার কারনে মুসুল্লিরা নামাজ পরতে পারছেনা,কর্মজীবিরা কাজে যেতে পারছেনা,স্কুল -কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা,নোংরা পানির কারনে ঘরে ঘরে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পরেছে।

আমাদের কে আশ্বাস করেছিলো সেনাবাহিনী কতৃক যে পাম্প বসানো হয়েছিলো সেটা চালু হলে আমাদের দ্ঃূক কস্ট লাঘব হবে। কিম্ত সে পাম্প চালু হলেও আমাদের কস্ট শেষ হয়নি। সেই পাম্প আমাদের কোন কাজে আসেনি। 

আমরা  সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছি তারা এসে দেখেও গেছে কিন্ত আজো সমস্যার সমাধান করা হয়নি। বিগত সরকারের আমলে তখনকার চেয়ারম্যান, এমপি সাহেবের নিকট গিয়েছি। শামীম ওসমান এসে দেখে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। তা শুধু কথার কথাই ছিলো। কিন্ত কোন কাজে আসেনি। 

ইউপি সদস্য মাঈনুদ্দিন জানায়, দীর্ঘদন যাবৎ আমরা এই সমস্যা আছি। মৃত মানুষের লাশ পযন্ত দাফন করতে পারছিনা। মসজিদের ভিতরে পানি নামাজ পরতে পারছিনা। রাস্তায় বের হতে পারছিনা।

আমাদের কোরবানী ঈদে পশু কোরবানী দিতে হয় ছাদের ওপরে নতুবা অন্য এলাকায় গিয়ে। এ সব কিছুই সরকারের সকল বিভাগের কর্মরত কর্তার জানে। কিন্ত শুধু আশ্বাস পেয়ে গেছি। কোন সমাধান পাইনি তাই আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমাদেরকে। 

আমরা দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ফতুল্লায় এতো উন্নয়ন হয়, কিন্তু লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরা চাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হোক।

ব্যবসায়ী হাবিব জানায়, আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের কোন কাজ হয় নাই। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্ত কোন কাজ হয়নি।  আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন প্রকার টেক্স আর দিবোনা।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লালপুর- পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আঃ বারী, আজাদুর রহমান আজাদ,আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক রফিক, লালপুর আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সভাপতি মো. জনি, শামীম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ