বিলাসবহুল এসি বাসে ‘যেমন ইচ্ছা তেমন ভাড়া’
Published: 5th, June 2025 GMT
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের সড়কে ঝাঁ–চকচকে দামি ব্র্যান্ডের বাস নেমেছে। এসব বাসে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা (এসি), আরামদায়ক আসন। তবে ভাড়া নন-এসি বা সাধারণ বাসের তুলনায় দ্বিগুণ; ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি। এই বাড়তি ভাড়া কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন উঠেছে।
পুরোপুরি মেনে না চললেও নন-এসি বাসের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে দেয়। তবে এসি বাসের ভাড়ায় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে একেক কোম্পানি, ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। ঈদের সময় এসি বাসের ভাড়া আরও লাগামহীন হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে বলা হয়েছে, সরকার গণপরিবহনের জন্য ভাড়ার হার ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণ করবে। সরকারের হয়ে এ কাজ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
আইনে এক জায়গায় বলা হয়েছে, বিলাসবহুল এসি ও বিশেষ সুবিধাসংবলিত গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে আইনের এই ধারা প্রযোজ্য হবে না। তবে আইনে এ–ও বলা আছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষ বিলাসবহুল এসি ও বিশেষ সুবিধাসংবলিত গণপরিবহনের ভাড়া যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে পারবে।
যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও যাত্রীদের মত হচ্ছে, আইনের নির্দেশনা মেনে এসি বাসের ভাড়াও বিআরটিএ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এতে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় কিছুটা হলেও কমতে পারে। কিন্তু বিআরটিএ তা না করে পুরোপুরি চাহিদার ওপর ছেড়ে দিয়েছে।যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও যাত্রীদের মত হচ্ছে, আইনের নির্দেশনা মেনে এসি বাসের ভাড়াও বিআরটিএ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এতে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় কিছুটা হলেও কমতে পারে। কিন্তু বিআরটিএ তা না করে পুরোপুরি চাহিদার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রে যেখানে অধিক মুনাফা করার প্রবণতা রয়েছে, সেখানে এভাবে পরিবহনমালিকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া আসলেই যুক্তিযুক্ত কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
বিআরটিএর হিসাবে দেশে নিবন্ধিত এসি বাসের সংখ্যা ২ হাজার ৭৮৩। এর মধ্যে অল্প কিছু বাস রাজধানী ঢাকায় চলাচল করে। বাকি সবই দূরপাল্লার পথে চলে। সারা দেশে নিবন্ধিত বড় বাসের সংখ্যা ৫৬ হাজারের মতো। এর বেশির ভাগই দূরপাল্লার এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচল করে। কিছু কিছু বড় বাস শহরেও চলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নন–এসি বাসের আসনও আরামদায়ক হয়েছে। ভালো ব্র্যান্ডের নন–এসি বাসও চলাচল করে। কিন্তু দুই ধরনের বাসের ভাড়ার পার্থক্য আকাশ-পাতাল। এর মধ্যে কিছু কিছু কোম্পানি বাসে শুয়ে ভ্রমণের (স্লিপার কোচ) ব্যবস্থা আছে। আছে কিছু দ্বিতল বাসও। তবে এগুলোর অনুমোদন নেই।
পরিবহনমালিকদের তথ্যমতে, দেশে এসি বাসের যাত্রা শুরু হয় গত শতকের আশির দশকে। এরপর ধীরে ধীরে এসি বাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিলাসবহুল এসি বাসের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখন হুন্দাই, ভলভো, স্ক্যানিয়া, মার্সিডিজ বেঞ্জের বাস চলছে। অপেক্ষাকৃত কম বিলাসবহুল হিনো ও আশোক লিল্যান্ডের বাসও আছে অনেক। গ্রিনলাইন, সোহাগ, শ্যামলী, হানিফ, এনা, দেশ ট্রাভেলস, টিআর ট্রাভেলস, সৌদিয়া, সেন্ট মার্টিন, আগমনী এক্সপ্রেস, এসআর ট্রাভেলস, নাবিলসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিলাসবহুল বাস চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন পথে। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, রংপুর, বগুড়া, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, খুলনা ও বরিশাল।
আরও পড়ুনঈদযাত্রায় বাসে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া, কোথাও দেড় থেকে দুই গুণ০৮ এপ্রিল ২০২৪একই দূরত্ব, ভাড়ায় তারতম্য
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে নন-এসি বাসের ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু একই পথে এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। স্লিপার বাসে এই পথে দুই হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পথে নন–এসি বাসে গড়ে এক হাজার টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। এসি বাসে এই ভাড়া দুই হাজার বা এরও বেশি নেওয়া হয়। স্লিপার কোচে ভাড়া ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
সড়কপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। নন-এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হয়। অবশ্য ঈদে অনেকেই বেশি ভাড়া আদায় করে। এসি বাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে কিলোমিটারপ্রতি সাড়ে ৬ টাকার বেশি ভাড়া নেওয়া হয়। অথচ দূরপাল্লার পথে নন-এসি বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১২ পয়সা।
ঢাকা থেকে বগুড়ায় নন-এসি বাসের ভাড়া সাড়ে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু এসি বাসের ভাড়া আদায় করা হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকা থেকে রংপুরে এসি বাসের ভাড়া ২ হাজার টাকায় ঠেকে। সেন্ট মার্টিনসহ কিছু পরিবহনে স্লিপার কোচে ভাড়া নেওয়া হয় তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এই পথে নন–এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকার কমবেশি।
ঢাকা থেকে বরিশালের পথে নন–এসি বাসের ভাড়া আদায় করা হয় ৫০০ টাকা। পদ্মা সেতু চালুর পর এই পথে বেশ কিছু এসি বাসও নামানো হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কিংবা অন্য বড় শহরে চলাচলকারী বাসগুলোর মতো এতটা অভিজাত নয়। এরপরও এই পথে এসি বাসের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। কিছু স্লিপার কোচে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা পথে বিআরটিসি, এশিয়া লাইন, তৃষা, রয়েল কোচসহ কয়েকটি কোম্পানির বাস যাত্রী পরিবহন করে। এই পথে নন–এসি বাসের ভাড়া ২০০ টাকার মতো। এসি বাসে নেওয়া হয় সাড়ে ৩০০ টাকা। ঈদ বা পার্বণে তা আরও বেড়ে যায়।
আসনসংখ্যায় কমবেশি
বিআরটিএ দূরপাল্লার পথের ৫২ আসনের বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। আরামদায়ক করার জন্য দূরপাল্লার পথে চলাচলকারী বাসে এখন আসনসংখ্যা ৩৬ থেকে ৪০টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে আসনের আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়ে। এর সঙ্গে যোগ করা হয় সেতু ও সড়কের টোল। পরিবহনমালিকেরা বাড়তি খরচ ও আসন কমানোর ফলে যে ভাড়া আসে, তা ঠিক করে বিআরটিএ থেকে অনুমোদন করিয়ে নেয়।
অন্যদিকে আরামদায়ক এসি বাসগুলোর বেশির ভাগই ২৮ আসনে নামিয়ে আনা হয়েছে। কেউ কেউ সাধারণ এসি বাসে ৩২ কিংবা ৩৬ আসন পর্যন্ত বসিয়ে থাকে। দূরপাল্লার দ্বিতল এসি বাসে আসনসংখ্যা ৪৫ কিংবা তারও বেশি।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, সাধারণ বাসের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস কেনার বিনিয়োগের বাইরে ১৬টি ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর দৈনিক কত কিলোমিটার চলাচল করে এবং গড়ে কত যাত্রী হয়, তার ওপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ব্যয় বিশ্লেষণ অনুসারে, ৫২ আসনের একটি বাসের পেছনে বিনিয়োগ ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। আর প্রতিটি বাস ৭০ শতাংশ আসন পূর্ণ করে চলবে, এমনটা ধরা হয়েছিল।
পরিবহনমালিকদের সূত্র বলছে, নন-এসি বাসের চেয়ে এসি বাসের বিনিয়োগ প্রায় দেড় গুণ বেশি। তবে বিনিয়োগের হেরফেরের কারণে বাসের ভাড়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন হয় না। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ নির্ভর করে জ্বালানি খরচের ওপর। সুতরাং নন-এসি বাসের সঙ্গে এসি বাসের জ্বালানি খরচ যুক্ত করে সহজেই ভাড়া নির্ধারণ করা সম্ভব।
তবে বিআরটিএ ও পরিবহনমালিকদের কারও কারও মত হচ্ছে, একেক ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল এসি বাসের ক্রয়মূল্যে পার্থক্য আছে। বাসের আসনসংখ্যাতেও কোম্পানিভেদে তারতম্য রয়েছে। সেবার পার্থক্যও আছে কোম্পানিভেদে। ফলে সব এসি বাসের জন্য একক ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া কঠিন। আবার সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলে এই খাতে বিলাসবহুল বাস নামানোর যে প্রতিযোগিতা রয়েছে, তা কমে যেতে পারে।
দ্বিতল–স্লিপারের অনুমোদন নিয়ে জটিলতা
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পথে নতুন সংযোজন স্লিপার ও দ্বিতল বাস। তবে এই বাসগুলো স্লিপার বা দ্বিতল হিসেবে বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তাই এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া এই বাসগুলো কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে।
বাসের চেচিস বা ভিত্তি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এরপর দেশীয় কারিগরেরা বডি তৈরি করে বাসে পরিণত করেন। যেকোনো কোম্পানির চেসিস দেশে আসার পর বিআরটিএ থেকে এর ‘টাইপ অ্যাপ্রুভাল’ নিতে হয়। অর্থাৎ ওই চেসিসের ওপর কত সিটের কোন ধরনের বডি বানানো যাবে, তার অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিটি চেসিসের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপ থাকে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ম্যানুয়ালেও আসন ও বডি কেমন হবে, এর একটা ধারণা দেওয়া থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, যে চেসিসগুলোর ওপর স্থানীয় কারিগরেরা দোতলা বাস বানিয়েছেন, সেগুলো আমদানি করা হয়েছে একতলা বাস হিসেবে। স্লিপার কোচগুলোও করা হয়েছে সাধারণ বাসের চেসিসের ওপর। চেসিস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ম্যানুয়াল মানা হয়নি।
বিআরটিএ বলছে, তারা দ্বিতল বা স্লিপার বাস হিসেবে অনুমোদন দেয়নি। বরং একতলা বাস হিসেবেই নিবন্ধন দিয়েছে। মালিকেরা পরে নিজেদের মতো করে বডি তৈরি করে নিয়েছেন।
তবে বিআরটিএ বাস না দেখে কাগজের ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন দেওয়াতেই এই বিপত্তি। এ ছাড়া নিবন্ধনের পর ফিটনেস সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। সে সময়ও এটি চোখে পড়ার কথা। সরকারি সংস্থাটির অবহেলা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু স্লিপার ও দ্বিতল বাস চলাচল করছে, যাত্রী চাহিদাও আছে, তাই এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি এসব বাসেরও যাচাই-বাছাই করে নিরাপত্তাঝুঁকি না থাকলে অনুমোদন দেওয়া উচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব আরট এ থ ক ৫০০ ট ক পর বহন ন বন ধ এই পথ র বহন র ওপর সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবহনমালিকদের অদ্ভুত আবদার
সড়ক পরিবহন খাতের মাফিয়া চক্রের বিরোধিতার কারণে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন ও বিভিন্ন নির্দেশনা কার্যকর হতে পারেনি। সেই মাফিয়া চক্র এখন মাঠে না থাকলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনার কাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন বন্ধের সরকারি নির্দেশনা দিয়েও মালিক-শ্রমিক সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস–ট্রাকের সংখ্যাই ৮০ হাজার। অন্যান্য আরও অনেক এমন লক্কড়ঝক্কড় ও মেয়াদোত্তীর্ণ যান আছে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে প্রত্যাশা ছিল সড়ক পরিবহনেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, আইনটিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু ১১ মাস পরও সড়ক পরিবহনে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি।
গত বছরের অক্টোবরে আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া যানবাহনের নিবন্ধন বাতিল করে সড়ক থেকে প্রত্যাহার ও সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে ধ্বংস করা হবে। সংশ্লিষ্ট পরিবহনমালিকেরা যাতে নতুন যানবাহন কিনতে পারেন, সে জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথাও বলা হয় ওই বৈঠকে। এ বিষয়ে মালিকদের ৩১ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়।
এই পটভূমিতে সরকার গত রোববার থেকে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ৯টি অঞ্চল ধরে অভিযান শুরু করে। অন্যদিকে মালিকপক্ষ আট দফা দাবি পেশ করে সরকারকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করে। তাদের দাবির মধ্যে আছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন, পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা, সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা। সরকার এসব দাবি না মানলে ১২ আগস্ট থেকে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালিকপক্ষ। এটা তাদের অদ্ভুত আবদারই বটে।
সড়ক পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে নানা বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। যখনই সরকার দুর্ঘটনা রোধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়, তারা বিরোধিতা করে। এর মাধ্যমে মালিকপক্ষ সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখতে চায় কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থাকলে যানজট হয়, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেছেন, মেয়োদোত্তীর্ণ যানবাহন চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো এবং মানুষের মৃত্যু তো হত্যার শামিল। এই হত্যাকাণ্ড চলতে দেওয়া যায় না।
অতএব মালিকপক্ষের উচিত সড়ক থেকে যত দ্রুত সম্ভব মেয়াদোত্তীর্ণ সব যানবাহন সরিয়ে ফেলা। অতীতে ঢাকা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে অন্যত্র চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতো। এটা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাহন ঢাকার জন্য যেমন, তেমনি ঢাকার বাইরের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে মালিকদের পক্ষ থেকে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুত দেওয়ার যে দাবি জানানো হয়েছে, তা আমরা সমর্থন করি। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ার পরও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার পরও দিনের পর দিন চালক ও মালিকদের ধরনা দিতে হবে কেন? আর ধরনার সঙ্গে উৎকোচ তথা দুর্নীতির যে নিগূঢ় সম্পর্ক আছে, তা–ও অজানা নয়।
মালিকপক্ষের ন্যায্য দাবিদাওয়া অবশ্যই সরকারকে মানতে হবে। তাই বলে মালিকপক্ষ মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন প্রত্যাহারে বাধা দেবে কিংবা ধর্মঘটের নামে যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করবে, এটা কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না।