ঈদের ছুটিতে মৈত্রী সড়কে রোহিঙ্গাদের ভিড়, উদ্বেগ স্থানীয়দের
Published: 9th, June 2025 GMT
ঈদুল আজহার ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের মৈত্রী সড়ক। এ ভিড়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার আশ্রয়শিবির থেকে পালিয়ে অনেক রোহিঙ্গা এই এলাকায় আসছেন। অনেকে এখান থেকে কক্সবাজার শহরের দিকেও যাচ্ছেন। এতে করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চার লেনবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন সড়কটি সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হলেও ঈদের ছুটিতে তা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় দর্শনস্থল। সড়কের শেষ প্রান্তে আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি চৌকি। তার পাশেই দুই দশক আগে নির্মিত ‘মৈত্রী সেতু’। এর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির (এএ) একটি চৌকি।
গতকাল রোববার বিকেলে মৈত্রী সড়কে প্রায় পাঁচ শতাধিক দর্শনার্থীকে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন রোহিঙ্গা। ঘুমধুমের বাসিন্দা এহসান উল্লাহ (৩২) বলেন, ‘মৈত্রী সড়কে পাঁচ শতাধিক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেলেও এর মধ্যে অন্তত ২০০ জন রোহিঙ্গা হবে। আশ্রয়শিবির থেকে পালিয়ে এই রোহিঙ্গারা মৈত্রী সড়কে চলে এসেছেন। এখান থেকে অনেক রোহিঙ্গা বাসে উঠে চলে যাচ্ছেন কক্সবাজার শহরে। রোহিঙ্গাদের আটকানো কিংবা আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানোর কেউ নেই।’
স্থানীয় বাসিন্দা সালেহ আহমদ (৪০) বলেন, আশ্রয়শিবিরের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আছে। তবু রোহিঙ্গারা কাঁটাতারের নিচ দিয়ে বাইরে এসে হেঁটে কিংবা গাড়িতে করে মৈত্রী সড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের কারণে মৈত্রী সড়কের পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ভ্রমণের নামে অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবার চালান কক্সবাজার শহরে নিয়ে যাচ্ছে।
সড়কে ঘুরতে আসা রোহিঙ্গা যুবক শাহ জামিল (২৬) বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে বিনোদনের কিছু নেই, খোলা জায়গাও নেই। তাই ঈদের দিন মুক্ত বাতাস খেতে আমরা আটজন গাড়িতে করে মৈত্রী সড়কে চলে আসি।’ তিনি জানান, তাঁর বসতবাড়ি ছিল রাখাইন রাজ্যে। আট বছর আগে তাঁরা পরিবারসহ পালিয়ে আসেন। ভবিষ্যতে ফেরার সুযোগ এলে এই পথেই তাঁরা রাখাইনে ফিরে যাবেন।
শাহ জামিলের সঙ্গে থাকা কেফায়েত উল্লাহ (২৫) বলেন, ‘আশ্রয়শিবির থেকে গাড়ি নিয়ে মৈত্রী সড়কে পৌঁছতে আমাদের কেউ বাধা দেয়নি, কেউ জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। সবাই প্যান্ট-টিশার্ট, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরায় কেউ বুঝতেও পারে না আমরা রোহিঙ্গা।’
একই দিনে ক্যাম্প-১১ থেকে আরও ১২ জন রোহিঙ্গা ঘুরতে আসেন। তাঁদের একজন মো.
একটি পিকআপ ভ্যানে ২০-২৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এসেছিলেন। দলে কয়েকজন তরুণীও আছেন। সবাই সড়কে নেমে বসে পড়েন, ছবি তুলছেন মুঠোফোনে। তাঁদের একজন হালিমা খাতুন (৩৫) বলেন, ‘ক্যাম্পে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। মৈত্রী সড়কের পরিবেশ ভালো, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করতে ভালো লাগে। এখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।’
ঘুমধুম বিজিবি ফাঁড়ির এক সদস্য বলেন, নারী-পুরুষের মধ্যে কে রোহিঙ্গা, কে বাংলাদেশি, পরখ করা কঠিন। সবার চেহারা ও ভাষা এক রকম। তবে কেউ অভিযোগ করলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসাইন বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসার সময় বহু রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। তাদের পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। তবে মৈত্রী সড়কে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি আমাদের জানা নেই। ঘটনাস্থল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পড়ায় বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। প্রতিদিন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাইরে চলে গিয়ে শ্রম পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। আটক হলেও তাঁদের পুনরায় ক্যাম্পে পাঠানো হয়, শাস্তির ব্যবস্থা নেই। এ কারণে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে, যা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রীনগরে রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কামারখোলা ফ্লাইওভারসংলগ্ন রেললাইনের পাশ থেকে মধ্যবয়সী এক অজ্ঞাত পুরুষের খুলিবিহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস মরদেহটি উদ্ধার করে।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, ‘‘চেহারাসহ মাথার একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয়রা রেললাইনের পাশে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে আমাদের খবর দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহটি রেললাইনের পাশে পড়ে আছে। মরদেহের ১০-১২ হাত দূরেই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল মাথার মগজ।’’
ঢাকা/রতন/রাজীব