লালমাইয়ে বিএনপি নেতার গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 11th, June 2025 GMT
কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আরেক পক্ষের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ভুশ্চি বাজারে এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির অপর পক্ষের নেতা-কর্মীদের আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।
মোবাশ্বের আলম পাশের নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
মোবাশ্বেরের অনুসারীদের ভাষ্য, লালমাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো.
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হামলা নয়; মোবাশ্বেরকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর-দক্ষিণ, পেরুল উত্তর-দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মোবাশ্বের। সন্ধ্যার পর তিনি উপজেলার ভুশ্চি বাজার দিয়ে নাঙ্গলকোটের উদ্দেশে রওনা দেন। ভুশ্চি বাজার পৌঁছে স্থানীয় মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষে স্থানীয় করিম মজুমদার মার্কেটের মেজবান হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে নাশতা করছিলেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফরহাদ উদ্দিন ও স্থানীয় যুবদল নেতা আবু হানিফের নেতৃত্বে অন্তত ২০ জন প্রথমে রেস্তোরাঁয় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে তাঁরা মোবাশ্বেরের ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। হামলার সময় মোবাশ্বেরের অন্তত তিনজন অনুসারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়।
এ ঘটনায় রাতেই স্থানীয় যুবদল কর্মী ও মোবাশ্বের আলমের অনুসারী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে লালমাই থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়।
বিএনপি নেতা মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সামাজিক অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়িতে ফেরার সময় ভুশ্চি বাজারে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে দেখা করে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে এসে দেখেন স্থানীয় একটি হোটেল ও তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে। পরে নেতা-কর্মীরা তাঁকে নিরাপদে নিয়ে চলে আসেন।
মোবাশ্বেরের অনুসারী ও লালমাই উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাবের আহমেদ বলেন, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ফরহাদ এত দিন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী লোটাস কামালের সহচর ছিলেন। তিনি সব সময় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন। তাঁর নেতৃত্বে এমন হামলার তিনি নিন্দা জানাচ্ছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মোবাশ্বের আলম কুমিল্লাকে নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তিনি ভুশ্চি বাজারে এলে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল ছেলে তাঁকে তোপের মুখে ফেলেন। তিনি বৃষ্টিতে ভিজে সেখানে গিয়ে ছেলেগুলোকে সরিয়ে দিয়ে মোবাশ্বেরকে রক্ষা করেন। এরপর তিনি চলে আসেন। পরে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তিনি বলতে পারবেন না। যেহেতু রাজনৈতিক কারণে মামলা হয়েছে, তাঁরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। তবে এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ব শ ব র আলম র অন স র য় ব এনপ এ ঘটন য় ব এনপ র র র অন
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।