কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আরেক পক্ষের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ভুশ্চি বাজারে এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির অপর পক্ষের নেতা-কর্মীদের আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে।

মোবাশ্বের আলম পাশের নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

মোবাশ্বেরের অনুসারীদের ভাষ্য, লালমাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

ফরহাদ উদ্দিনের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় করা মামলায় ফরহাদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ফরহাদ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী। মনিরুল হক দলীয় মনোনয়নে সর্বশেষ ২০১৮ সালে এ আসনে নির্বাচন করেন; এবারও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হামলা নয়; মোবাশ্বেরকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে তাঁর ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর-দক্ষিণ, পেরুল উত্তর-দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মোবাশ্বের। সন্ধ্যার পর তিনি উপজেলার ভুশ্চি বাজার দিয়ে নাঙ্গলকোটের উদ্দেশে রওনা দেন। ভুশ্চি বাজার পৌঁছে স্থানীয় মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষে স্থানীয় করিম মজুমদার মার্কেটের মেজবান হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে নাশতা করছিলেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফরহাদ উদ্দিন ও স্থানীয় যুবদল নেতা আবু হানিফের নেতৃত্বে অন্তত ২০ জন প্রথমে রেস্তোরাঁয় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে তাঁরা মোবাশ্বেরের ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। হামলার সময় মোবাশ্বেরের অন্তত তিনজন অনুসারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়।

এ ঘটনায় রাতেই স্থানীয় যুবদল কর্মী ও মোবাশ্বের আলমের অনুসারী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে লালমাই থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়।

বিএনপি নেতা মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সামাজিক অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়িতে ফেরার সময় ভুশ্চি বাজারে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে দেখা করে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে এসে দেখেন স্থানীয় একটি হোটেল ও তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে। পরে নেতা-কর্মীরা তাঁকে নিরাপদে নিয়ে চলে আসেন।

মোবাশ্বেরের অনুসারী ও লালমাই উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাবের আহমেদ বলেন, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ফরহাদ এত দিন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী লোটাস কামালের সহচর ছিলেন। তিনি সব সময় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করেন। তাঁর নেতৃত্বে এমন হামলার তিনি নিন্দা জানাচ্ছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা ফরহাদ উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মোবাশ্বের আলম কুমিল্লাকে নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তিনি ভুশ্চি বাজারে এলে কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল ছেলে তাঁকে তোপের মুখে ফেলেন। তিনি বৃষ্টিতে ভিজে সেখানে গিয়ে ছেলেগুলোকে সরিয়ে দিয়ে মোবাশ্বেরকে রক্ষা করেন। এরপর তিনি চলে আসেন। পরে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তিনি বলতে পারবেন না। যেহেতু রাজনৈতিক কারণে মামলা হয়েছে, তাঁরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন।

লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। তবে এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ব শ ব র আলম র অন স র য় ব এনপ এ ঘটন য় ব এনপ র র র অন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ