কোরবানি কমেছে, লবণ মেশানো চামড়ায় ভালো দামের প্রত্যাশা
Published: 11th, June 2025 GMT
কোরবানির ঈদের পাঁচ দিনের মধ্যেই চামড়া সংরক্ষণের কাজ প্রায় শেষ। এখন আড়তদারেরা চামড়া বিক্রির জন্য ট্যানারি ব্যবসায়ীদের ডাকের অপেক্ষায় আছেন। সরকার–নির্ধারিত দাম পাওয়ার প্রত্যাশা তাঁদের। কারণ, এবারের ঈদে গত বছরের তুলনায় সারা দেশে পশু কোরবানি কমেছে প্রায় ১৩ লাখ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কোরবানির পশুর সংখ্যা ১২ লাখ থেকে কমে ৬ লাখে নেমেছে। তাই এবারের ঈদে কোরবানি কম হওয়ার কারণে চামড়ার দাম বাড়তে পারে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আজ বুধবার সরেজমিনে পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ প্রায় শেষ। এখন আড়তগুলো ট্যানারিগুলোর কাছে চামড়া বিক্রির অপেক্ষায় আছে।
আড়তদার সুমন প্রথম আলোকে জানান, এবার তিনি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দামে চামড়া কিনেছেন। লবণশ্রমিক মিলিয়ে প্রতিটি চামড়ায় আরও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতো ব্যয় রয়েছে। প্রতিটি চামড়ায় খরচ হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ফলে এই চামড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি করতে হবে। দাম নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ রাখা হলে চাহিদা বাড়বে। দাম পামু। নয়তো আমরা ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে যাই।’
সরকার এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম ঢাকায় ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। সাধারণত মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ বর্গফুটের হয়। তাতে মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা।
এবার সরকার–নির্ধারিত দাম পাবেন বলে আশা করেন পুরান ঢাকার কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মঞ্জুরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার আমাদের টার্গেট ছিল এক লাখের বেশি চামড়া সংগ্রহ করার; কিন্তু সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। কারণ, কোরবানি কম হয়েছে। ৭০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ করেছি আমরা। তাই দাম বাড়বে। আশা করছি, সরকার–নির্ধারিত দাম পাব এবার।’
এদিকে এ বছর ঈদুল আজহায় দেশে ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৩ লাখ কম। গত বছর ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছিল। এবার ৩৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল।
কোরবানি কম হওয়ায় চামড়ার সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন পোস্তা এলাকার আড়তদার ইমতেয়াজ। ৫০ বছর ধরে চামড়া ব্যবসায়ে নিয়োজিত এই ব্যবসায়ী বলেন, ট্যানাররা চাহিদামতো চামড়া না–ও পেতে পারেন। ভালো চামড়ায় সরকারি দাম পাওয়া গেলেও ২০–২৫ শতাংশ চামড়া বাদ দিতে হয়। তখন গড় দাম কম পড়ে।’ প্রক্রিয়াকরণ খরচ বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে। তা ছাড়া মাসের পর মাস বাকি টাকার জন্য ট্যানারির মালিকদের পেছনে ঘুরতে হয়। আবার ব্যাংকের ঋণসুবিধাও পাওয়া যায় না। সে জন্য অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে গেছেন।
খরচের হিসাব দিতে গিয়ে এ ব্যবসায়ী ইমতেয়াজ জানান, ৭টা চামড়ার জন্য এক বস্তা লবণ লাগে। এক বস্তা লবণের দাম ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা, পরিমাণ ৭৪ কেজি। প্রতিটি চামড়ায় ৮–১০ কেজি লবণ লাগে, অর্থাৎ ১০০ টাকার মতো ব্যয় হয়। বাইরে থেকে চামড়া ঘরে আনতে প্রতিটি চামড়ায় শ্রমিককে ২০ টাকা করে দিতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতিটি চামড়ায় ন্যূনতম ৩০০ টাকা খরচ পড়ে। তাই ইউরোপের বাজার না খুললে শুধু দাম বেঁধে দিয়ে এ শিল্প টিকানো যাবে না।
ট্যানারির মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর তাঁরা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন। গত বছর চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন ৯৫ লাখ। এবার কোরবানি কম হওয়ায় ১০ থেকে ১৫ লাখ কম চামড়া পেতে পারেন তাঁরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোরবানি কম হওয়ায় এবার ৮০ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা যাবে। ঢাকায় এ লক্ষ্যমাত্রা আট লাখের মতো। ইতিমধ্যে চার লাখ চামড়া আমাদের ট্যানারিগুলোতে ঢুকেছে। সরকার–নির্ধারিত দামে প্রতি বর্গফুট চামড়া ঢাকায় ৬০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৫০ টাকায় কেনা হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র ন র ধ র ত দ ম ব যবস য় কম হওয় গত বছর আড়তদ র ক রব ন হওয় য় ম হওয়
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫