বান্দরবানের আলীকদমে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া পর্যটকের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ দুজন
Published: 12th, June 2025 GMT
বান্দরবানের আলীকদমে ঝিরির পানিতে ভেসে যাওয়া এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। নিহত পর্যটকের নাম জুবাইরুল ইসলাম (২৭)। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আলীকদমের সদর বাজার এলাকার মাতামুহুরী নদী থেকে জুবাইরুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ অন্য দুজন হলেন মো. হাসান ও স্মৃতি আক্তার। নিহত ব্যক্তি ও নিখোঁজ দুজন আলীকদমের দুর্গম কিস্টং পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, আজ ভোরে আলীকদম উপজেলা সদর বাজার এলাকায় মাতামুহুরী নদীতে ভাসমান অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পান। তাঁরা থানায় সংবাদ দিলে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। লাশের সঙ্গে পাওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম জুবাইরুল ইসলাম। বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগাড়া উপজেলার ধলইতলা পাচুরিয়া গ্রামে, জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে। পরে পুলিশ জানতে পারে, একটি পর্যটক দলের এক নারীসহ তিনজন নিখোঁজ ছিলেন। তাঁদেরই একজন নিহত জুবাইরুল ইসলাম।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরে ফিরে আসা পর্যটক দলের সদস্য নরসিংদীর রাহাত হোসেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ট্যুর এক্সপার্ট নামের একটি সংস্থার ব্যবস্থাপনায় তাঁরা ৩৩ জনের একটি পর্যটক দল ৮ জুন আলীকদমে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ দিনের জন্য বেড়াতে আসেন ১১ জন, বাকি ২২ জন ৩ দিনের জন্য এসেছিলেন। ৮ জুন বিকেলে ৩৩ জনের সবাই আলীকদমের ক্রিস্টং পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দিয়ে রাত ১১টায় খেমচংপাড়ায় পৌঁছান। সেখান থেকে ক্রিস্টং পাহাড় ও আশপাশে ঘুরে ৩ দিনের ভ্রমণসূচি শেষে ২২ জনের দলটি গতকাল বুধবার ফিরে আসছিল। আসার পথে বিকেল চারটার দিকে শামুক ঝরনা নামের একটি ঝিরি পার হওয়ার সময় হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। দলের ১৯ জন ঝিরি পার হয়ে গেলেও ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের দুই সহপরিচালক স্মৃতি আক্তার ও মো.
পর্যটক রাহাত হোসেন আরও জানান, বৃষ্টিতে হঠাৎ ঝিরিতে পাহাড়ি ঢল নামে। ঝরনার পানি কমে গেলে তাঁরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন, স্মৃতি আক্তার, হাসান ও জুবাইরুল ইসলামের খোঁজ নেই। তাঁদের কী হয়েছে, তাঁরা জানেন না। তিনজনকে না পেয়ে তাঁরা ১৯ জন সারা রাত ঝরনা এলাকায় ছিলেন। সকালেও খোঁজাখুঁজি করে কোনো হদিস পাননি। আলীকদম সদরে ফিরে জুবাইরুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে জানতে পেরে ধারণা করছেন, তিনজনই পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছেন। এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান বর্ষার নেতৃত্বে ১১ জনের পর্যটক দলটি এখনো পাহাড়ে রয়েছে বলে রাহাত হোসেন জানিয়েছেন। নিখোঁজ স্মৃতি আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহ এবং হাসানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে বলে জানা গেছে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, এখনো নিখোঁজ থাকার দুজনকে উদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তিনজনের কী হয়েছে, ফিরে আসা ১৯ জন পর্যটক জানাতে পারছেন না। কারণ, প্রবল বৃষ্টিতে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার পৌর এলাকার পাল্লাপাড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠি ও পাতা খেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল নাগরদোলা ও নৌকাদোল।
মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেয়েজামাই। তারা একসঙ্গে কেনাকেটা করেন। বাঁশ, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা। ছিল নারীদের প্রসাধনীর দোকানও।
এদিন অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির দোকানগুলোয় ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করছেন দোকানি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তালের শাঁসসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। চটপটি, বারোভাজা ও ফুসকার দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ মেলা ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু-কিশোরদের বাজানো বাঁশির শব্দ ছিল পুরো এলাকায়। মেলায় কথা হয় পাল্লাপাড়া গ্রামের জামাই মোরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর আগে বিয়ে করেছেন এলাকায়। কয়েকদিন আগে ঈদের দাওয়াতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি। এদিন আসেন জামাই মেলা উপলক্ষে।
মেলায় সকালে মাছ ও মাংসের দোকান বসে। বিকেলে ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই মানুষের ঢল নামে। শিশু-কিশোরদের হাত ধরে মেলায় ঘুরতে আসেন অভিভাবকসহ স্বজনরা। শিশুদের বায়না মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককে।
আয়োজকদের অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক বলেন, ৩৫ বছর থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার জামাইদের দাওয়াত করা হয় বলে এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এখন এলাকার ঐতিহ্য।