প্রায় দেড়শ বছর আগে মৌলভীবাজারের বালিকান্দি গ্রামে গড়ে ওঠে চামড়ার হাট। কোরবানির ঈদ এলেই মনু নদী তীরবর্তী গ্রামের এ হাটে চামড়া কেনাবেচা চলে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত। ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিকের আনাগোনায় উৎসবমুখর থাকে বালিকান্দি বাজার। 
মৌলভীবাজার জেলায় চামড়া কেনাবেচার একমাত্র হাট বালিকান্দি বাজার। জল ও স্থলপথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এটি দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। স্থানীয় বাজারে চা স্টলের মালিক আব্দুল করিম জানান, তারা বাপ-দাদার আলোচনায় শুনেছেন, চার-পাঁচ পুরুষ আগে এ ব্যবসার যাত্রা শুরু। এক সময় খুব জমজমাট ছিল এ হাট। তিনিও এক সময় চামড়া কেনাবেচায় জড়িত ছিলেন। ব্যবসায় লস খাওয়ায় চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এখন।
জানা যায়, ১৮৬০ থেকে ১৮৭০ সালের দিকে এ বাজারের যাত্রা। এখন এ ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। ট্যানারি মালিকরা টাকা আটকে রাখায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। চামড়া বেচাকেনা যখন জমজমাট ছিল, তখন ঈদকেন্দ্রিক বাজার সরব থাকত। 
স্থানীয়রা জানান, অতীতে ঈদকেন্দ্রিক মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ শতাধিক মানুষ চামড়া কেনাবেচা করতেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাংস ছিলে লবণ লাগিয়ে বড় পুঁজির ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। বড় ব্যবসায়ীরা আগেকার দিনে ঢাকার হাজারীবাগ এবং নাটোরে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতেন। শওকত মেম্বার, সানুর মিয়া, আনোয়ার মিয়া, মো.

তারণ, মিন্টু মিয়া, সুলেমান মিয়ারা তাদের আদি পুরুষের ব্যবসার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
গত ৭ জুন ঈদের দিন সন্ধ্যায় সরেজমিন বালিকান্দি চামড়ার বাজারে যেতে দেখা যায় চামড়াবোঝাই ছোট-বড় ট্রাক-পিকআপ, টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভিড়ে জ্যাম লেগে গেছে। ফাঁড়ি রাস্তায় যেতে হয়েছে বালিকান্দি বাজারে। সেখানে শামিয়ানা টানিয়ে সড়কের পাশে, কোথাও সড়কের অংশজুড়ে চলছে চামড়া থেকে মাংস সরানোর কাজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ কাজ করছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী সুলেমান মিয়া জানান, ঈদের সময় বালিকান্দি বাজারে এখনও ১৫ থেকে ১৬ হাজার চামড়া কেনাবেচা হয়। এতে এক দিনে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। এবার গরুর আকারভেদে দেড়শ থেকে ৬০০ টাকা দরে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। চামড়া বিক্রি করতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা তাফাজ্জুল বিন ফারুকী রাজনগরী জানান, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দেড়শ-দুইশ টাকায় প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন। এতে ট্রাক ভাড়া ও অন্যান্য খরচ ওঠানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত মিয়া মেম্বার সমকালকে জানান, ব্যবসার মজা শেষ হয়ে গেছে ২০১৩ সাল থেকে। আগে ঈদ এলেই ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করে দিতেন। এখন বছরের পর বছর যাওয়ার পরও পাওনা টাকা পরিশোধ করেন না। গত বছরের পাওনা ৫৫ লাখ টাকার মাঝে এবার ঈদের আগের দিন ট্যানারি মালিক মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ বছর চার হাজারের বেশি চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রেখেছেন। আরও কিছু লবণযুক্ত চামড়া কেনার জন্য দাম-দর চলছে। তিনি জানান, এ বছর বড় গরু কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা খুব কম। ছোট চামড়ার সংখ্যাই বেশি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সম দ ধ ব যবস য় ব যবস র

এছাড়াও পড়ুন:

তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ’র 

তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। 

সোমবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বাজেটে তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি (অগ্রিম আয়কর) আরোপ করার বিষয়ে আমাদের ক্ষোভের জায়গাটা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। এটা যে আমাদের শিল্পের জন্য বোঝা, তিনিও সেটা বুঝতে পেরেছেন, এবং নোট নিয়েছেন। আশা করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।

বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরীসহ এ খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি অর্থ উপদেষ্টা। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয় যে, আয়কর খাত থেকে রাজস্ব বাড়াতে সরকার একই কর ১৫২টি পণ্যে আরোপ করেছে। শুধু এ খাতে এআইটি প্রত্যাহার করা হলে অন্যান্য খাতও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তাই এআইটি প্রত্যাহারের পরিবর্তে সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য নীতি সহায়তার মাধ্যমে বিষয়টি সমন্বয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। 

নতুন বাজেটে দুটি বড় পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে—স্পিনিং শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/ মূসক) ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা করার কারণে।

বিটিএমএ এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ১ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এসব করকে "আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত" বলে উল্লেখ করেছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ সভাপতির
  • মৌলভীবাজারে আশুরার দিনে গায়েবি মোকামে মাতম-বিলাপের জারি
  • তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশা বিটিএমএ’র