১৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা জেলায় থানার সংখ্যা ১৮। এসব থানার কোনোটিতে নাজনীন সুলতানার আগে কেউ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। সে হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। জেলার ইতিহাসে তিনি প্রথম নারী ওসি। গত বছরের ১০ অক্টোবর তিনি কুমিল্লার লাকসাম থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান।

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীরের মতে, ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা (বর্তমান কুমিল্লা) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮৬১ সালে এই দেশে পুলিশি-ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তার কিছু কাল পরেই কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে বর্তমান কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার বয়স অন্তত দেড় শ বছর। তবে এখন পর্যন্ত কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় কোনো নারীকে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়নি। আর তাঁর জানামতে, এখন পর্যন্ত লাকসামের এই ওসি ছাড়া আর কোনো নারী ওসিকে পদায়ন করা হয়নি।

নাজনীন সুলতানা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি, পাশাপাশি এলএলবিও করেছেন। ২০০৭ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন তিসি। কর্মজীবন শুরু হয় ফেনী জেলা থেকে। ২০১৬ সালে তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। ২০১৮ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান। সর্বশেষ গত বছরের ১০ অক্টোবর তিনি লাকসাম থানায় যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত লাকসাম থানার ৪০তম ওসি তিনি এবং নারী ওসি হিসেবে প্রথম।

লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকরিজীবনের শুরু থেকেই দেখেছি মেয়েরা ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন খুবই কম করছেন। অনেকে এখানে আসার সাহসও করেন না। তবে আমার দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল, একদিন ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন থেকেই এখানকার মানুষ আমাকে সহায়তা করছেন। রাজনৈতিকভাবেও আমাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। কারণ, আমি কোনো দলের দিকে ঝুঁকে যাইনি, যেটা সঠিক, সেটাই করছি। থানায় কোনো মানুষ এলে প্রথমে চেষ্টা করি মানুষের সমস্যাটা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য, এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই।’

পুলিশের চাকরিতে আসার পেছনের কথা জানতে চাইলে নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘পুলিশে চাকরি করব, কখনোই ভাবিনি। মূলত আমার ভাই ২০০৫ সালে এসআই পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তবে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর তাঁর চাকরিটা হয়নি। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিল, তখন আমার ভাই বললেন এখন কোনো সুপারিশ লাগবে না, যোগ্যতায় চাকরি হবে। ভাই বলাতে আমি আবেদন করি। এরপর চাকরিটা হয়ে যায়।’ নাজনীনের স্বামীও পুলিশে চাকরি করেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ ওসি নাজনীন সুলতানার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মাঠপর্যায়ে কয়েকটি উপজেলায় এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে বেস্ট ওসি মনে হয়েছে নাজনীন সুলতানাকে।’

কুমিল্লার বিশিষ্ট নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন বলেন, তাঁরা চান, মেয়েরা ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনে আরও এগিয়ে আসুক। এ ক্ষেত্রে যাঁকে পোস্টিং দেওয়া হবে, অবশ্যই তাঁর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ ছাড়া নারীদের সুযোগ–সুবিধার বিষয়টিও বাড়ানো দরকার।

নাজনীন সুলতানার প্রশংসা করলেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে তিনি (নাজনীন) দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের ইচ্ছা আছে, সামনে আরও কিছু থানায় নারীদের পদায়ন করার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা

চিরসবুজ অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ৭১ বছর পূর্ণ করলেন সত্তরের দশকের অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী। জন্মদিন উপলক্ষে গত বছর একটি সাক্ষাৎকার দেন ববিতা। এ আলাপচারিতায় জীবনবোধ নিয়ে কথা বলেন এই শিল্পী।

জীবন নিয়ে ববিতা বলেন, “যে জীবন মানুষের কোনো উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়। মরে গেলে আমার ছেলে অনিক আমাকে অনেক মিস করবে। একমাত্র ছেলে তো, ওর কথা খুব ভাবি। ভক্তরা আমাকে কতটুকু মনে রাখবেন, জানি না।”

একটি ঘটনা উল্লেখ করে ববিতা বলেন, “এই জীবনে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে। অনেক শিল্পীকে তা দেওয়া হয়নি, হোক তা ভারতে কিংবা বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের মেয়র আজীবন সম্মাননা দিয়েছেন। সেদিন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সম্মান দিয়েছেন, ৬ আগস্টকে ‘ববিতা ডে’ ঘোষণা করেছেন। তার মানে আমি বেঁচে না থাকলেও দিনটা উদযাপিত হবে। এটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”  

আরো পড়ুন:

বধূবেশে অভিষেক কন্যা

জসীম পুত্রের মৃত্যু: ভাই রাহুলের আবেগঘন পোস্ট

মৃত্যুর কথা স্মরণ করে ববিতা বলেন, “তবে কবরে একা থাকার কথা ভাবলে হঠাৎ কেমন যেন লাগে। আরেকটা বিষয়, আমি অনেক দিন বেঁচে থাকতে চাই না। অসুখ–বিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না। আমি কারো বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না।” 

কারণ ব্যাখ্যা করে ববিতা বলেন, “চারপাশে অনেক আত্মীয়স্বজনকে দেখেছি, দিনের পর দিন বিছানায় অসুস্থ হয়ে কষ্ট পেয়েছেন। যারা একা থাকেন, তাদের জন্য এই কষ্ট যেন আরো বেশি। তাই সব সময় এটা ভাবি, কখনোই যেন অন্যের বোঝা না হই।” 

সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা ববিতার কখনো ছিল না। পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও প্রথমে রাজি হননি। পরে মা আর বোনের পীড়াপীড়িতে অভিনয় করেন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারফ্লপ হয়। 

পরিচালক জহির রায়হান আবারো ‘জ্বলতে সুরজ কে নিচে’ উর্দু সিনেমার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে বললে প্রথমে রাজি হননি ববিতা। তখন বয়স মাত্র ১৪। কিন্তু সিনেমার বেশির ভাগ শুটিং হওয়ার পরও শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে না পারায় সিনেমাটি আর শেষ করা হয় না। 

এরপর জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে বাংলা সিনেমা বানান। মুক্তির পর সিনেমাটি সুপারহিট হয়। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলেও সিনেমা হিট হওয়ায় আবারো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। এরপর ‘স্বরলিপি’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমায় জুটি বাঁধেন রাজ্জাক-ববিতা। প্রতিটি সিনেমাই সুপারহিট।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
  • রূপ নয়, সাহস দিয়ে জয় করা এক নায়িকা
  • টানা দুই জয়ের পর এবার হার বাংলাদেশের যুবাদের
  • ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
  • সর্বকালের সেরা ১০ কে পপ গান
  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা
  • ২৫ বছর পর রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কেউ রইলেন না