ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
Published: 16th, June 2025 GMT
সুস্থ থাকতে ভাতের পরিমাণ যে কমিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এ কথা অনেকেরই জানা। তবে ভাতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভাত খেতে বসে শুরুতেই ভাত না খাওয়া। বিষয়টা মানতে পারলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও কমে। সহজভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা.
তাসনোভা মাহিন।
ভাতের সঙ্গে খানিকটা ভর্তা, সবজি, মাছ বা মাংস যা কিছুই মেখে নেওয়া হোক না কেন, ভাতটা বেশ দ্রুতই হজম হয়ে যায়। রসনার তৃপ্তির সঙ্গে যে হরমোনের সম্পর্ক আছে, ভাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলে তার নিঃসরণ হতে দেরি হয়। অর্থাৎ সহজে ক্ষুধা মেটে না। অল্পতেই খাওয়া থামানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়; বরং অনেকটা খাওয়ার পরও আমাদের মন চায় আরও দুয়েক চামচ ভাত নিতে। হজমপ্রক্রিয়ায় ভাতের শর্করা ভেঙে তৈরি হয় গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ চলে আসে আমাদের রক্তে। আবার এই গ্লুকোজ অনায়াসেই আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশে মেদ হিসেবে জমা হতে শুরু করে। এদিকে রক্তের গ্লুকোজ কমে গেলেই আমাদের ক্ষুধা পায়। ফলে ভাত খাওয়ার কিছু সময় পরই আরও কিছু খেতে ইচ্ছা করে।
শুরুটা হোক স্বাস্থ্যকরভাত খেতে বসে শুরুতেই যদি আপনি কিছুটা সবজি, স্বাস্থ্যকর তেল দেওয়া খাবার কিংবা আমিষ–জাতীয় খাবার খেয়ে নেন, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা অন্য রকম দাঁড়ায়। এসব খাবার হজম হয় ধীরে। ফলে এসব খাবার খাওয়ার পর যে ভাত আপনি খাবেন, তা–ও হজম হবে দেরিতে। বুঝতেই পারছেন, হুট করে রক্তে গ্লুকোজ বাড়া–কমার ঝক্কিটাই থাকে না এভাবে ভাত খাওয়া হলে।
তা ছাড়া শুরুতে ভাতের বদলে এসব খাবার খেলে রসনার তৃপ্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হরমোন নিঃসরণ হয় দ্রুত। অর্থাৎ সহজেই ক্ষুধা মিটে যায়। ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। মেদ জমার ঝুঁকিও কমে। এ ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে ধীরে ধীরে, স্বাস্থ্যকর উপায়ে। এই গ্লুকোজ রক্তে থাকেও লম্বা সময়। তাই ভাত খাওয়ার খানিক পর আবার ক্ষুধাও লাগে না।
আরও পড়ুনআটা বা ময়দার রুটির চেয়ে কেন ভাত খাওয়া ভালো২৪ জানুয়ারি ২০২৫সুস্থ থাকতে যা করবেনভাত, রুটি, পাউরুটি বা শর্করা–জাতীয় যেকোনো খাবারের জন্য ব্যাপারটা একই। তাই এসব খাবার খেতে বসলে শুরু করুন সবজি, আমিষ কিংবা স্বাস্থ্যকর তেল দেওয়া কোনো খাবার দিয়ে। তবে খাওয়া শুরুর সময়ের সবজি হিসেবে কোনো ধরনের আলু বেছে নেবেন না; কারণ, আলু শর্করা–জাতীয় খাবার।
ভাত খাওয়ার শুরুতে আপনি টক দই বা জলপাই তেলের ড্রেসিং দেওয়া সালাদ খেতে পারেন। অথবা তিন–চার টেবিল চামচ সবজি দিয়ে শুরু করুন কিংবা মাছ বা মাংসের একটা বড় টুকরা খেয়ে নিতে পারেন শুরুতেই। অথবা আধা বাটি ঘন ডালও খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ রকম কিছু খাবার দিয়ে খাওয়া শুরু করে এরপর ভাত দিয়ে বাকি তরকারি বা মাছ–মাংস খান।
রুটি খাওয়ার সময় শুরুতে অর্ধেকটা ডিম আর খানিকটা সবজি খেয়ে নিয়ে এরপর রুটি দিয়ে বাকি খাবারগুলো খেতে পারেন কিংবা রুটি খাওয়া শুরু করার আগে আধা মুঠো বাদাম খেতে পারেন।
মাঝেমধ্যে বিরিয়ানি, তেহারি, মোরগ–পোলাও খেলে সালাদ দিয়ে খাওয়া শুরু করুন।
স্যান্ডউইচ, বার্গার, পাস্তা, নুডলস বা এ ধরনের অন্য কোনো খাবার খাওয়ার আগে একইভাবে একটু বাদাম বা সালাদ খেয়ে নিন। স্যান্ডউইচ বা পাস্তার মতো খাবার একাই পুরোটা না খেয়ে ভাগ করে নিন অন্য কারও সঙ্গে।
আরও পড়ুনগরমকালে কেন কাঁঠাল খাবেন? জেনে নিন ৬টি আশ্চর্য উপকারিতা১০ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
রাগ করে কথা বন্ধ করেছিল প্রেমিকা। রাগ ভাঙিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে, একটু কথা বলতে ইউটিউব থেকে বোমা তৈরিত কৌশল শিখেছিল প্রেমিক। বোম ফাটার শব্দে যদি প্রেমিকা বেরিয়ে আসে... এই আশায়। এক্সপার্টের মতো বানিয়েও ফেলে বোমা। কিন্তু বোমা ফাটার তীব্র সেই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে প্রেমিক ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায় নিজেরাই।
গত ২৮ অক্টোবর, ছট পূজার রাতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি এক আবাসিক এলাকা গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠে। বোমা মারার সেই ঘটনা দুষ্কৃতী আক্রমণ ভেবে লেগেছিল রাজনৈতিক রং, তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম। স্বাভাবিকভাবেই দুষ্কৃতীদের ধরতে চাপে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তদন্তে প্রেমিক প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর তথ্যে তদন্ত যেন মোড় নিয়েছে আশ্চর্যের এক প্রেমের গল্পে।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?
জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘মুফতি মাসুদ’
পুলিশ জানায়, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড মালিরবাগান খামারডাঙা এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়। বাড়িটির দেয়ালে লাগে বোমা, জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়িটির বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। এরপর এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি সিসিটিভির ফুটেজে একটি বাইকের ছবি দেখে তার সন্ধান শুরু করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিরবাগান এলাকায় যেখানে বোমাবাজি হয়েছিল সেখানে এক তরুণীর সঙ্গে চাঁপদানীর স্থানীয় যুবক সাগর মালিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমিক প্রেমিকার দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। এর মধ্যেই প্রেমিক বন্ধুদের মারফত জানতে পারে প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এদিকে সাগরের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয় তরুণী।
কী করে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা যায় সেটাই ভাবতে থাকে প্রেমিক। এরপরেই বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা করার বুদ্ধি বের করে সাগর। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েক ধরনের পটকার উপদান দিয়ে বোমা বানায়। সেটি ফাটানোর পরিকল্পনা করা হয় প্রেমিকার বাড়ির পাশে।
বোমা ফাটার আওয়াজে তরুণী প্রেমিকা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে তার সঙ্গে কথা বলবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে ছট পূজার রাতে চার বন্ধু পৌঁছে যায় মালিরবাগান এলাকায়। বোমা ছোঁড়ে একটি বাড়ির দেওয়ালে। এতটাই জোরে শব্দ হয় যে তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে পুলিশ ওই তরুণীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার খোঁজ শুরু করে। পাশাপাশি বাইকের নম্বর দেখে খোঁজ শুরু করে। সাগর এবং তার বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, তারা ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছিল না। ঘটনার পর চার বন্ধুই কল্যাণীতে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার পুলিশ তাদেরকে ব্যারাকপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাগর মালিক, প্রিন্স যাদব, প্রণীত পাল, আয়ুস যাদব, চারজনেরই বয়স ১৮-২০ বছর।ইতিমধ্যেই তাদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়েছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ