ইতালিতে উচ্চশিক্ষা: আইইএলটিএসে ৬–এ আবেদন, স্কলারশিপ–খণ্ডকালীন চাকরিসহ ‘১৫০ ওরে’র সুযোগ
Published: 19th, June 2025 GMT
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ইতালিতে আছে বিশ্বের প্রাচীনতম সব বিশ্ববিদ্যালয়। সময়ের বিবর্তনে পুরোনো শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নয়নের পটভূমিতে এগুলোয় জমেছে শত বছরের ঐতিহ্য। বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কারিকুলাম ও স্কলারদের অভিজাত ফোরামগুলোতে সুপরিচিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে থাকা বিদ্যাপীঠগুলো হলো পলিটেকনিকো ডি মিলানো (১২৩), স্যাপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অব রোম (১৩৪) ও ইউনিভার্সিটি অব বোলোগনা (১৫৪)।
গ্লোবাল পিইও (প্রফেশনাল এমপ্লয়ার অর্গানাইজেশন) সার্ভিসেস ও ফোর্বসের মতে, ইউরোপ অর্থনীতিতে তৃতীয় এবং গোটা বিশ্বে নবম বৃহত্তম দেশ ইতালি। সেই সূত্রে ইন্টার্নশিপ, অন দ্য জব ট্রেনিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে দেশটিতে। চলুন ইতালিতে পড়াশোনার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপসহ বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রধান ভাষা ইতালিয়ান হলেও ইংরেজির প্রতি গুরুত্ব থাকায় প্রতিবছরই ভিড় বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে মিলান, রোম ও তুরিন-ইউরোপের প্রধান শিক্ষার্থীবান্ধব শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম।
শিক্ষার পাশাপাশি শেনজেনভুক্ত দেশটির যে ক্ষেত্রটিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ থাকে, তা হলো পর্যটন। ইউএনডব্লিউটিও (ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন) অনুসারে, বিশ্ব পর্যটন র্যাঙ্কিংয়ে দেশটির অবস্থান চতুর্থ। এখন পর্যন্ত ইতালিতেই রয়েছে সর্বাধিক সংখ্যক ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (৫৯)। এগুলোর মধ্যে ৫৩টি সাংস্কৃতিকভাবে স্বীকৃত ও ৬টিতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশেষত্ব।
ইতালীতে ঘণ্টাপ্রতি (গড়) ক্যাশিয়ার ১১, প্যাকেজ হ্যান্ডলার ১১, ওয়েটার ১০, কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট ১৫, ডেলিভারি বয় ১৭, রিসেপশনিস্ট ১২ ও স্টুডেন্ট কোলাবোরেটরে ১৪ ইউরো মেলে।*ইতালির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো
পলিটেকনিকো ডি মিলানো, স্যাপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অব রোম, ইউনিভার্সিটি অব বোলোগনা, ইউনিভার্সিটি অব পাডুয়া, পলিটেকনিকো ডি তুরিনো, ইউনিভার্সিটি অব মিলানো, ইউনিভার্সিটি অব নেপলস ফেদেরিকো-২, ইউনিভার্সিটি অব পিসা, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্স ও ইউনিভার্সিটি অব তুরিনো।
*জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়
চারুকলা, ফ্যাশন ডিজাইন, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক, হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম, মেডিসিন, কম্পিউটার সায়েন্স, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি।
আরও পড়ুনইংল্যান্ডে পড়াশোনা: খণ্ডকালীন চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ, আইইএলটিএসে ৬.৫ স্কোর হলে আবেদন ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
*আবেদনের উপায়
অন্য শেনজেন দেশগুলোর মতো ইতালিও শিক্ষা ক্ষেত্রে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি মেনে চলে। প্রথম ভর্তি মৌসুমটি পরিচিত ফল ইনটেক নামে, যার আবেদন কার্যক্রম শুরু হয় নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে যাবতীয় আবেদন শেষে কোর্স শুরু হয় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে। এই সময়টিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বাধিক সংখ্যক কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
স্প্রিং নামের অপর ইনটেকটিতে আবেদন নেওয়া হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এগুলোর সময়সীমা থাকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ভর্তি শেষ করে কোর্স শুরু হয়।
এখানে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পৃথকভাবে তাদের নিজস্ব ওয়েব পোর্টালে আবেদন করতে হয়। আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচসহ সুনির্দিষ্ট ডেডলাইনগুলো ওয়েবসাইটে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। এখানে খেয়াল রাখা উচিত যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু একটি বিষয়ে আবেদন জমা দেওয়া যায়।
আরও পড়ুনসুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ, আইইএলটিএস ৬.৫, সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজ ও খরচ কেমন৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪প্রথম আলো ফাইল ছবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট স প ট ম বর
এছাড়াও পড়ুন:
ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষায় বড় পরিবর্তন, থাকছে না কাগজে পরীক্ষা
ইংরেজি ভাষাদক্ষতার জন্য প্রচলিত নিরীক্ষণপদ্ধতির একটি ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাঁরা পড়তে, কাজ করতে ও অভিবাসনের জন্য যেতে চান, তাঁদের এ পরীক্ষা দিতে হয়। ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষায় বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে আইইএলটিএস পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এডুকেশন।
ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষা বর্তমানে কাগজে ও কম্পিউটারে দেওয়া যায়। তবে আগামী ২৭ জুলাই থেকে শুধু কম্পিউটারে পরীক্ষা দেওয়া যাবে, থাকবে না কাগজে পরীক্ষাপদ্ধতি। ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি দুই প্রতিষ্ঠানেরই পরীক্ষার্থীদের জন্য ২৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশে এই নিয়ম কার্যকর হবে।
আইডিপি এডুকেশন জানায়, আগামী ২৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশে ইউকেভিআই আইইএলটিএস শুধু কম্পিউটার ফরম্যাটে নেওয়া হবে। ফলে ইউকেভিআই আইইএলটিএস আর কাগজে থাকছে না। শেষবারের মতো কাগজে ইউকেভিআই আইইএলটিএস নেওয়া হবে ২৬ জুলাই। এর পর থেকে শুধুই কম্পিউটারে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
কম্পিউটার ফরম্যাটে পরীক্ষার্থীরা ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে ফলাফল পেয়ে যাবেন। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন দিন ও সময়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় সময় মিলিয়ে পরীক্ষায় বসা হবে আরও সহজ। এ ছাড়া কম্পিউটার ফরম্যাটে ওয়ান স্কিল রিটেকের সুবিধাও থাকবে, যা পেপার টেস্টে পাওয়া যেত না।
যাঁরা এরই মধ্যে পেপার–বেজড টেস্ট বুক করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে আইডিপি এডুকেশন বলে, যেসব পরীক্ষার্থী ২৬ জুলাইয়ের পরের তারিখে ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষা বুক করেছেন, তাঁরা চাইলে কম্পিউটারে বিনা মূল্যে ট্রান্সফার করতে পারবেন। ২৬ জুলাইয়ের আগের কোনো তারিখে ফ্রি রিশিডিউল ও প্রয়োজনে সম্পূর্ণ রিফান্ডও করা যাবে।
আইডিপি আইইএলটিএসের প্রধান ইলোরা শাহাব শর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষা শুধু কম্পিউটারে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে নেওয়া হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে প্রস্তুত। আমরা চাই, প্রত্যেক পরীক্ষার্থী যেন নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন এবং নতুন ফরম্যাটে আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল পান।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের কমিউনিকেশনস ম্যানেজার (দক্ষিণ এশিয়া) জুলিয়েট মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্য একটি শীর্ষ গন্তব্য। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদন জমা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ইউকেভিআই আইইএলটিএস এখন সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটার-ভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে কাগজভিত্তিক পরীক্ষার জন্য ১৩ দিনের তুলনায় মাত্র ১ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেন দ্রুততম সময়ে তাঁদের ফলাফল পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্যই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আইইএলটিএস শিক্ষক মোস্তাকিম শুভ প্রথম আলোকে বলেন, ইউকেভিআই আইইএলটিএস সাধারণত দুই ধরনের ব্যক্তিরা দেন। একটা দল খুবই শিক্ষিত, তাঁরা যুক্তরাজ্যের কিছু শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান। আরেক দল, যাঁরা যুক্তরাজ্যে কেভার গিভিংসহ বিভিন্ন কাজ করতে যেতে চান, তাঁরা এই পরীক্ষা দেন। যাঁরা বিভিন্ন কাজ পেতে এই পরীক্ষা দেন, তাঁদের স্কোর প্রয়োজন হয় ৪.৫, ৫.০০ ও ৫.৫। তাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার টাইপিংয়ের কিছুটা দুর্বল। তাই নতুন নিয়মে কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে তাঁদের কিছুটা সমস্যা হবে। তবে যাঁরা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে চান, তাঁরা নতুন নিয়মের কারণে কোনো সমস্যায় পড়বেন না। কারণ, তাঁরা কম্পিউটার টাইপিংয়ে সাধারণত দক্ষ হয়ে থাকেন। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটারভিত্তিক ইউকেভিআই আইইএলটিএস পরীক্ষায় অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে।
ইউকেভিআই আইইএলটিএস সম্পর্কে
ইউকেভিআই আইইএলটিএস (ইউকে ভিসা অ্যান্ড ইমিগ্রেশন) হলো আইইএলটিএসের একটি সংস্করণ, যা বিশেষভাবে ইউকে ভিসা ও অভিবাসন আবেদনের জন্য তৈরি করা। এটি একটি অফিশিয়াল ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা, যা যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভিসার জন্য স্বীকৃত। এর মধ্যে পড়াশোনা, কাজ ও বসবাসের জন্য ভিসা অন্তর্ভুক্ত। পরীক্ষার বিষয়বস্তু এবং ফরম্যাট স্ট্যান্ডার্ড আইইএলটিএস পরীক্ষার মতোই। শুধু ইউকেভিআই আইইএলটিএসে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রটোকল অনুসরণ করা হয় এবং টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম (টিআরএফ) কিছুটা ভিন্ন হয়। ইউকেভিআই আইইএলটিএসের স্কোর শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পৃথিবীর অনেক দেশ গ্রহণ করে।