ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না, মাদ্রাসায়ও যায় না শিশুটি
Published: 19th, June 2025 GMT
নিজ বাড়িতেই ধর্ষণের শিকার হয় তৃতীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী। মেয়েটি এখন আর ঘর থেকে বের হয় না, ভয় পায়। অন্য শিশুদের সঙ্গেও খেলতে যায় না। মাদ্রাসায়ও যায় না বলে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন শিশুটির বাবা।
ধর্ষণের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামে যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন শিশুটির বাবা। মামলার ১৪ দিনেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো আসামির পরিবারের হুমকিতে আতঙ্কে দিন কাটছে বাদীর পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের একটি গ্রামে।
জানা গেছে, গত ৩ জুন বিকেলে বাড়িতে কেউ না থাকায় ঘরেই ছিল ১১ বছরের শিশুটি। এই সুযোগে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম। শিশুটির ওড়না দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে। চিৎকার করলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পর শিশুটির দাদি বাড়িতে এসে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে সাইফুলকে দেখতে পান। তাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত যুবক।
শিশুটির বাবা জানান, তার মেয়েকে ছোট রেখে স্ত্রী অন্যত্র চলে যায়। দাদির কাছেই বড় হচ্ছে মেয়েটি। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনার দিন তিনি অটোরিকশা চালাতে বাড়ির বাইরে ছিলেন। তার মাও বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে তার মেয়েটির সর্বনাশ করেছে এলাকার সাইফুল। ঘটনার পর থানায় মামলা করেছেন। ১৪ দিন পার হলেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। প্রথম দুই-তিন দিন পুলিশ আসামি ধরতে আগ্রহ দেখালেও এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না।
বাদী বলেন, আসামির বাবা প্রবাসী। অনেক টাকার মালিক। মামলা করায় আসামির চাচা জয়নাল আবেদিন, আব্দুল কদ্দুস ও মফিজ উদ্দিন তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় দেখা হলে আসামির চাচারা বলেন ‘মামলা করলি পুলিশ দিয়া তো ধরাবার পাইলি না। দিন এইডা না, দিন সামনে আবো। আমরা ধান (বিএনপি) করি। টেহা (টাকা) দিয়া জজ কিনা ফালামু। আমাগো পোলারে জামিন করামু।’
তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে আপস না করলে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বাদীর। তবে হুমকি দেওয়ার কথাটি অস্বীকার করেন আসামি সাইফুল ইসলামের চাচা আব্দুল কদ্দুস।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘাটাইল সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক আব্দুল মতিন। আসামির পরিবার থেকে যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা তদন্ত কর্মকর্তাকে কয়েক দফা ফোন করে জানানো হয়েছে বলে দাবি বাদীর।
বাদীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে অবগত আছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, বাদীকে হুমকির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার পর বিষয়টি আপসে মীমাংসার জন্য স্থানীয়রা চেষ্টা করেন। পরে মামলা হলে আসামি ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ জানান, স্থানীয়ভাবে আপস না করতে পেরে ঘটনার তিন দিন পর শিশুটির বাবা থানায় এসে মামলা করেন। মামলার পর আসামি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আসামি ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত কর মকর ত তদন ত ক আস ম র র পর ব ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদন জটিলতায় আটকে আছে জবির মিলনায়তন সংস্কারের কাজ, ভোগান্তি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র মিলনায়তনের সংস্কারকাজে ধীরগতিতে ভোগান্তি পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিলনায়তনটি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ কিংবা মুক্তমঞ্চে। তবে কাজের ধীরগতির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনজনিত জটিলতাকে দুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, মিলনায়তনের নতুন কাঠামো ও শৌচাগার নির্মাণের প্রকল্পটি এখনো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পায়নি। কাজের গতি কম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুইবার চিঠি পাঠানো হয়েছে, এরপরও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তন সংস্কার ও নতুন শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে এককালীন প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ‘সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘স্থাপতিক’ সংস্কার কাজের অনুমোদন পায়।
তবে টাকা বরাদ্দের দেড় বছর পরও সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করতে পারেনি। ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের সঙ্গে মিলনায়তনের নতুন কাঠামো প্রণয়ন, শৌচাগার নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণে সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সংস্কারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও দীর্ঘ জটিলতার পর ৭ ফেব্রুয়ারি মিলনায়তনের সংস্কারকাজ শুরু হয়। কিন্তু গত সাত মাসে মিলনায়তনের ২০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন দেখা যায়, মিলনায়তনে প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকেরা বলছেন, সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হলে এই সংস্কারকাজ অনেক আগেই শেষ করা যেত। কিন্তু, কোম্পানি কাজটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। তারা পর্যাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে না এবং বারবার নির্দেশনা পরিবর্তনের ফলে কাজের অগ্রগতি বাড়েনি। আগামী চার মাসের মধ্যে মিলনায়তন সংস্কার ও নতুন শৌচাগার নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনবার শৌচাগার নির্মাণের জায়গা পরিবর্তন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মিলনায়তন দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সংস্কারকাজ চলায় একাডেমিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠান স্থগিত বা সময় পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ কিংবা মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হচ্ছে।
কাজের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থাপতিকের কর্ণধার আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নগরভবনে চলা আন্দোলনের ফলে নাগরিক সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। ফলে সংস্কারকাজ সংশ্লিষ্ট কিছু অনুমোদন আটকে গেছে। তাই কাজ যথাযথভাবে আগানো যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদন হয়ে গেলে কাজের গতি বাড়বে এবং তিন মাসের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংস্কার কাজে কিছু পরিকল্পনা পরিমার্জন করেছে। পরিমার্জিত প্রকল্পের অনুমোদন নিতে হবে নগরভবন থেকে। কিন্তু আন্দোলনের ফলে নগরভবন বন্ধ থাকায় অনুমোদন নেওয়া যাচ্ছে না। তাই সংস্কার কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে।
সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠিত মনিটরিং টিম সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজের অগ্রগতির জন্য ইতিমধ্যে আমরা দুইবার চিঠি পাঠিয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে।’
মিলনায়তনটি চালু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা-সেমিনার আয়োজন করতে পারছে না বলে জানান উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কারকাজ আমাদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে না। তবুও দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য আমরা তাগাদা দিচ্ছি।’