জেনেভায় আজ বৈঠক করবেন ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা
Published: 20th, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সাত দিন গড়িয়ে আজ শুক্রবার অষ্টম দিনে পড়লো। শেষ পর্যন্ত এই সংঘাত কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই ইস্যুতেই আজ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জেনেভা সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাসেরও এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে গত এক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর এটিই হবে ইরান ও পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা।
আশা করা হচ্ছে, বৈঠকে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, এই আলোচনার লক্ষ্য ‘ইরানকে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে স্থায়ীভাবে পিছিয়ে আনা।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ল্যামি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি থামানোর সময় এখনই এবং কারও জন্যই সুফল বয়ে না আনা ওই অঞ্চলজুড়ে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রতিরোধ করারও উপযুক্ত সময় এটি।’
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিবিষয়ক সিদ্ধান্তে একমত যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ডেভিড ল্যামির এক বৈঠকে দুইজনই একমত হন যে, ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারবে না।’
ওই বৈঠক ল্যামি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তারা ‘দীর্ঘমেয়াদে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুর সমাধান’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তার মতে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এর একটি কূটনৈতিক সমাধান হতে পারে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না- এই বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। হোয়াইট হাউজের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই বার্তা জানান তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বা নাও হতে পারে; তার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব; যে আমি যাব কিনা।’
এর আগে বিবিসিসহ মার্কিন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর অস্বীকার করেন।
ট্রাম্প কী করবেন, তা জনসমক্ষে স্পষ্ট করে বলেননি। তবে বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি এটা করতে পারি, আবার নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই। তবে এতটুকু বলতে পারি, ইরান বড় সমস্যায় আছে এবং আলোচনায় ফিরতে চায়।’
ইরান-ইসরায়েল থেকে সরে যাচ্ছেন বিদেশিরা
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে চেক রিপাবলিক, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ তেহরানে তাদের দূতাবাস কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
তবে যেহেতু ইরানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও যাত্রী পরিবহন করছে না, তাই বিশ্বের অনেক দেশ ওই দুই দেশ থেকে তাদের নাগরিকদেরকে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে জটিলতার মধ্য দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া ইরান থেকে প্রায় দেড় হাজার ও ইসরায়েল থেকে এক হাজার ২০০ জনকে সরিয়ে নিচ্ছে। কিছু অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ইতোমধ্যে জাহাজে করে সাইপ্রাসে পৌঁছেছেন। অন্যদের স্থলপথে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
চীন তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে এক হাজার ৬০০ জনের বেশি এবং ইসরায়েল থেকে আরও কয়েকশো নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া চীন তার নাগরিকদের আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক, আর্মেনিয়া অথবা ইরাক হয়ে স্থলপথে দেশ ত্যাগ করতে বলেছে।
ভারত ইরান থেকে স্থলপথে পালিয়ে আসা প্রায় ১১০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী আর্মেনিয়া হয়ে দিল্লি পৌঁছেছেন। এছাড়া ইসরায়েলে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকরা যদি চান, তাহলে তাদেরকেও সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। বর্তমানে ইসরায়েলে প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় নাগরিক রয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েল থেকে জাপান তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জিবুতিতে দুইটি সামরিক বিমান পাঠাচ্ছে। ইসরায়েলে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং ইরানে ২৮০ জন।
সংঘর্ষ শুরুর পর ইরান থেকে প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি নাগরিক চলে গেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের যে ৯০০ কিলোমিটার বা ৫৬০ মাইলেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত রেখা আছে, তার সব ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। তবে শুধু পাকিস্তানি নাগরিকরা এই পয়েন্টগুলো দিয়ে দেশে ফিরতে পারবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ন র পরর ষ ট রমন ত র য ক তর ষ ট র ইসর য় ল থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।
‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’
গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’
সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।