‘শান্তর আউট দেখে গোসলে গেছি, এসে দেখি শেষ।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লন্ডন থেকে মোহাম্মদ আশরাফুল পরিস্থিতি তুলে ধরেন এভাবে। ১ উইকেটে ১০০ রানে পৌঁছানো দল ৮ উইকেট হারায় ১০৫ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের ঘটনা রীতিমতো কৌতুকে পরিণত হয়েছে।
আশরাফুলের মতো হাবিবুল বাশারও একটি গল্প শোনান ঢাকা থেকে। তিনি বলেন, ‘২ উইকেটে ১০০ রান দেখে বাড়ির কাছে বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিলাম। যে রিসিভ করতে এসেছে হঠাৎ সে বলে ৮। আমি বলি ৮ না ১১ তে যাব। সে বলে না না স্যার, ৮ উইকেট পড়েছে (হাসি)।’
লিটন কুমার দাসদের ব্যাটিং বিপর্যয় এবং বাংলাদেশের পরাজয় নিয়ে সবচেয়ে মোক্ষম ‘ডায়ালগ’ জাতীয় দলের সাবেক পেস বোলিং কোচ চম্পকা রমানায়েকে দিলেন গতকাল সমকালকে সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, ‘এভাবে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করতে পারে কেবল বাংলাদেশ। একবার না বহুবার করেছে।’
টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০– তিন সংস্করণের ব্যাটিংয়েই দুর্বল বাংলাদেশ। পঞ্চপাণ্ডবের কারণে মাঝে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও বর্তমানে ব্যাটিং ব্যর্থতা জাতীয় দলের ভয়াবহ রোগ। উইকেট পড়তে থাকলে মুহূর্তে তা বিপর্যয়ে রূপ নেয়। বুধবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ঘটেছে সেই অবর্ণনীয় বিপর্যয়।
স্বাগতিক দুই স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কামিন্দু মেন্ডিস ভোজবাজির মতো গেম পরিবর্তন করেন। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় খুব সহজে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন তারা। কেন এই বিপর্যয় সে কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগে কিন্তু না বলেও পারছি না। ছেলেরা এত প্রতিভাবান অথচ কেউ ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন না। বোলারদের হাত দেখে যদি না-ই বুঝতে পারেন কোনটা গুগলি আর কোনটা লেগ স্পিন তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিন। এত বছর ধরে খেলছেন, ১৪ থেকে ১৫ বছর হয়ে গেছে ক্রিকেটে এখনও হাত দেখে বুঝে গুগলি ডেলিভারি না বুঝলে হবে কী করে। এখানে কোচ কিছু করতে পারবেন না।’
জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক হতাশা নিয়ে আরও বলেন, ‘আমরা যে ভুল করতাম ওরাও একই ভুল করলে তো হবে না। ওদের আরেকটু আপগ্রেড হওয়া দরকার। হাসারাঙ্গা ৬০টি বল করলে ৪০টি থাকে গুগলি। ওই ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল। বোলারদের ভালোভাবে স্টাডি করলে এরকম ভুল হওয়ার কথা না। হাসারাঙ্গা প্রতি ম্যাচে আমাদের বিপক্ষে তিন চারটি করে উইকেট নেয়। তার বল রিড করা তো অত কঠিন না। সে তো মুরালি ধরন না।’
তাঁর মতে বোলার ভালো জায়গায় বল করবে, ব্যাটারকে খেলতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে, ‘আমার যেটা মনে হয়, আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত ব্যাটারদের। পরিস্থিতিগুলো একটু আগে থেকে বোঝার সক্ষমতা থাকতে হবে। গত ম্যাচের পরিস্থিতি ছিল ২ উইকেটে ১০০ রান। ওই সময়টি টিকে থাকতে হতো। বল তো ভালো জায়গায় করবেই। তার মানে এই না বল এক জায়গায় ব্যাট আরেক জায়গায় থাকবে। গেল ম্যাচের পারফরম্যান্স খুবই হতাশ করা।’
লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্তরা সাত-আট বছর হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। তাওহীদ হৃদয়ও দেখতে দেখতে পরিণত। এত বছর খেলার পরও বোলারকে ভালোভাবে রিড করতে না পারা ব্যাটিং বিপর্যয়কে হতাশার বলছেন সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, ‘এখন কেউই ভালো খেলছে না। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা একেবারে নেই। ছয় মাস ধরে ব্যাটিংয়ের শৃঙ্খলা নেই। এই জায়গা থেকে উত্তরণের একটাই পথ টিম ম্যানেজমেন্টকে ওয়ান টু ওয়ান কাজ করতে হবে।’
প্রথম ওয়ানডের হতাশা ভুলে নতুন উদ্যমে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার পরামর্শ তাঁর, ‘প্রেমাদাসার উইকেট একটু স্লো। এখানে ভালো ব্যাটিং করতে হলে পরিকল্পনা করে খেলতে হবে। এসেই মারা যাবে না।’
হাবিবুল বাশারের দৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয় ব্যাখ্যাতীত। তাঁর মতে, ‘ওরা কেউ মুরালিধরন না। হাসারাঙ্গা গুগলি মারে আমরা সবাই জানি। ব্যাটাররা কেউ তাকে রিড করতে পারেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে মনোযোগের অভাবে এটি হয়েছে। কারণ হাসারাঙ্গা গুগলিই করে। ও লেগ স্পিন খুব কম করে। ছয়টার মধ্যে পাঁচটা গুগলি থাকে একটি লেগ স্পিন। বা চারটি গুগলি, একটি লেগ স্পিন ও একটি সোজা মারে।’
জাতীয় দলের সাবেক পেস বোলিং কোচ চম্পকার ব্যাখ্যা হলো, ‘বোলাররা সব সময় ভালো করে। ব্যাটিং তেমন হয় না। ১০০ রান হওয়ার পর ম্যাচ ৮ উইকেটে জেতার কথা বাংলাদেশের। তানজিদ হাসান তামিমের উচিত ছিল ইনিংস টেনে নেওয়া। খুব বাজে খেলেছে ওরা। বাংলাদেশ ছাড়া এভাবে কেউ ম্যাচ হারে না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র ১০০ র ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
নোমানের রাজ্যে আফ্রিদিও রাজা, দুর্দান্ত জয় পাকিস্তানের
বিউটিফুল, বিউটিফুল!
ডেভাল্ড ব্রেভিসকে বোল্ড করা নোমান আলীর বলটা দেখে ধারাভাষ্যকার আমির সোহেলের কণ্ঠে মুগ্ধতা।
যেভাবে লেগ স্টাম্পে পড়ে টার্ন করে বল অফ স্টাম্পে লেগেছে তাতে বোধ হয় ক্রিকেটপ্রেমী যেকেউই এমন মুগ্ধ হবেন। পাকিস্তান সমর্থকেরা হয়তো এর সঙ্গে বাড়তি বিশেষণও যোগ করবেন! নোমান আলীর সেই বলেই মূলত নিশ্চিত হয়ে গেছে লাহোর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের জয়।
জিততে চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ২৭৭ রান। এমন টার্নিং উইকেটে কাজটা সহজ ছিল না, বিশেষ করে নোমান আলীর সামনে। বাঁহাতি এই স্পিনার প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে নেন আরও ৪টি।
শাহিন শাহ আফ্রিদিও পাশে ছিলেন—তিনিও সঙ্গ দিয়েছেন ৪ উইকেট নিয়ে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুটিয়ে গেল ১৮৩ রানে। দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্টে ৯৩ রানে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
আজ সকালে দক্ষিণ আফ্রিকা দিন শুরু করে ২ উইকেটে ৫১ রান নিয়ে। দিনের তৃতীয় বলেই প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান টনি ডি জর্জিকে দুর্দান্ত এক বলে ফেরান আফ্রিদি। কিছুক্ষণ পর নোমানের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন ত্রিস্তান স্টাবস।
৫৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ব্রেভিস। কঠিন উইকেটে ৫১ বলে ৫০ রান করে দলকে ভরসা দেন তিনি। রায়ান রিকেলটনের সঙ্গে গড়েন ৭৩ রানের জুটি।
কিন্তু তারপরই আসে সেই জাদুকরী মুহূর্ত। নোমানের হাওয়ায় ভাসানো বলটি লেগ স্টাম্পে পড়ে অফ স্টাম্পে গিয়ে আঘাত করে। বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন ব্রেভিস। এই উইকেটে দিয়েই ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন নোমান আলী, টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো।
একই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি স্পিনার সেনুরান মুতুসামিও নিয়েছেন ১০ উইকেট। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। বরং দুই বাঁহাতি স্পিনারের ১০ উইকেট নেওয়া দেখে প্রোটিয়াদের আক্ষেপ আরেকটু বাড়তে পারে। কারণ তাদের সেরা বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজ এই ম্যাচে খেলেননি। দেশের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ১১ তারিখে ডলফিনস-লায়নস ম্যাচ শেষ হওয়ার একদিন পরই শুরু হয় পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট। সময়মতো দলে যোগ দিতে পারেননি মহারাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসে শাহিন আফ্রিদিও ছিলেন দুর্দান্ত। অষ্টম উইকেটে সাইমন হারমার ও কাইল ভেরেইনা ২৯ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে খানিকটা চাপে ফেলেছিলেন। ঠিক তখনই শাহিন ফিরে এসে নিলেন টানা ৩ উইকেট। অনেক দিন পর টেস্টে ফেরা এই পেসার রিভার্স সুইংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছেড়েলেন। অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই ভেরেইনাকে এলবিডব্লু করেন। পরের ওভারেই উড়িয়ে দিলেন প্রেনেলান সুব্রায়েন ও কাগিসো রাবাদার স্টাম্প। শেষ পর্যন্ত ৩৩ রানে ৪ উইকেট। চতুর্থ ইনিংসে এটিই শাহিনের সেরা বোলিং।