লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন, ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
Published: 15th, November 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চন্দ্রগঞ্জের মোস্তফার দোকান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতের স্ত্রী এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্রদলের এক কর্মীকে দায়ী করেছেন।
নিহত আবুল কালাম চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পুলিশের ধারণা, আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মোস্তফার দোকান এলাকায় সড়কের ওপর আবুল কালামকে কুপিয়ে ও গুলি করে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। প্রতিপক্ষের লোকজনের হাতে তিনি খুন হয়েছেন বলে এলাকার লোকজন ও পুলিশের ধারণা।
এ ঘটনায় নিহত আবুল কালামের স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার ছাত্রদলের স্থানীয় এক কর্মীকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আবুল কালামের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মী কাউছার হোসেন ওরফে ছোট কাউছারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জের ধরে কাউছারের লোকজন তাঁর স্বামী কালামকে খুন করেছে।
কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, নিহত আবুল কালামের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে ছোট কাউছার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র বেচাকেনায় জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কপে মতবিরোধ তীব্র, চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা
ব্রাজিলের বেলেম শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনা চলছে। গত সোমবার শুরু হয়েছে ১২ দিনের এ সম্মেলন। সম্মেলনে ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এমনকি কোন কোন বিষয়ে একমত হওয়া যেতে পারে, এ নিয়ে তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। সম্মেলন শেষে সবাই একমত হয়ে কোনো ধরনের চুক্তি আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়ে গেছে।
এদিকে সম্মেলনের বাইরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বন উজাড় করে জলবায়ুকে হুমকির মুখে ফেলা শিল্প ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্রাজিলের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ করছে। গত শুক্রবার সম্মেলনের প্রধান প্রবেশপথে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা কপ৩০ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগোর সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানায়। তাদের দাবি মেনে নিয়েছে কপ৩০ আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
উত্তর ব্রাজিলে প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার (৯ হাজার বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মুন্দুরুকু আদিবাসী গোষ্ঠীর লোকজন। ওই এলাকা প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের সমান। মুন্দুরুকু আদিবাসী গোষ্ঠীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরাই জলবায়ুর রক্ষক। আমাজন বনকে বড় বড় কোম্পানির মুনাফার জন্য আর ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না।’
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এ বছরের কপ৩০ আলোচনায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তবে আদিবাসী প্রতিনিধিরা কোরেয়া দো লাগোর সঙ্গে বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন—আলোচনার অংশ না করেই কেন তাদের স্বাগতিক শহর বেলেমে আনা হলো? ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা বলেন, তাদের যেসব দাবি রয়েছে, তা মূলত ব্রাজিল সরকারের উদ্দেশে এবং সেখানেই সেগুলোর সমাধান হওয়া উচিত।
সম্মেলনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাএবারের সম্মলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে ব্রাজিল। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেয়ে অতীতের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নেই এবার সম্মেলনের মূল জোর।
সম্মেলনের শুরুতে এজেন্ডা নিয়ে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে, কোরেয়া দো লাগো আগেভাগে একটি সমঝোতা করেন। এতে জলবায়ু অর্থায়ন, জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনার ঘাটতি, বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর লক্ষ্যের মতো বিতর্কিত ইস্যুগুলো আলাদা করে রাখা হয় এবং আলাদাভাবে আলোচনার জন্য ঠাঁই দেওয়া হয়।
আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় ১৯৫টি দেশের আলোচকেরা আগের চুক্তিগুলো বিস্তারিত করার কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে চরম আবহাওয়া ও অন্যান্য জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন পরিমাপ ও সহায়তার উপায় এগিয়ে নেওয়া। তবে সম্মেলনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, তীব্র জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া খুবই দুর্বল হতে পারে। কিংবা আলোচনাই ভেঙে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চেম্বারের নীতিবিষয়ক উপমহাসচিব অ্যান্ড্রু উইলসন বলেন, ‘যদি আমরা এই গতিতেই চলি, তাহলে ফলাফল হবে খুবই দুর্বল।’
স্বাগতিক ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ চাইছে, কপ২৮–এর প্রতিশ্রুতি বহাল রেখে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার আহ্বানকে আরও জোরালো তুলে ধরতে। তবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে চাপকপ৩০ জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক ব্রাজিল ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই জ্বালানির ব্যবহার চার গুণ বাড়ানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি চাপ দিচ্ছে। এই টেকসই জ্বালানির মধ্যে রয়েছে বায়োফুয়েল, হাইড্রোজেন ও বায়োগ্যাস। তবে পরিবেশবিদেরা সতর্ক করছেন, ফসল থেকে জ্বালানি তৈরি করলে খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক টিমোথি সার্চিঙ্গার বলেন, ‘যখন জমি খাদ্যের বদলে জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তখন অন্য কোথাও আরও জমি পরিষ্কার করতে হয় অথবা মানুষকে কম খেতে হয়।’
টিমোথি সার্চিঙ্গার আরও বলেন, ‘দেশগুলো মনে করে, তারা নির্গমন কমাচ্ছে। কারণ, বায়োফুয়েল থেকে নির্গমন “শূন্য” হিসেবে ধরা হয়। বাস্তবে এটি জমি ও খাদ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ায়।’ এই চাপ ইতিমধ্যে ভারতে দৃশ্যমান, যেখানে পেট্রলে ইথানলের মিশ্রণের হার দ্রুত বাড়ানো হয়েছে এবং গত দশকে এতে তেল আমদানিতে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে।
কিন্তু এর মূল্য হিসেবে চাষযোগ্য জমির একটি বড় অংশ খাদ্যের বদলে জ্বালানির ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বহু চালক অভিযোগ করছেন, ইথানল–মিশ্রিত জ্বালানিতে তাঁদের গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রাজিলের দীর্ঘমেয়াদি বায়োফুয়েল প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। আইআরইএনএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ব্রাজিলের পরিবহন খাতে ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় এক-চতুর্থাংশই ছিল বায়োফুয়েল এবং এ খাতে আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।