প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিক-আপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ব্যবহারের উপযোগী গ্রাভিটন সিরিজের নতুন সাত মডেলের কার ব্যাটারি বাজারে এনেছে ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশন। জাপানিজ স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি সিলড মেইনটেনেন্স ফ্রি ওয়ালটনের কার ব্যাটারিতে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত মানের প্রযুক্তি, যা উন্নত পারফরম্যান্স নিশ্চিত করার পাশাপাশি গাড়ি ব্যবহারকারীদের দেবে রাস্তায় নিরাপদে অবিরাম চলার শক্তি। 

সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে নতুন মডেলের কার ব্যাটারিগুলো উদ্বোধন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী তাহসান খান, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম, পরিচালক জাকিয়া সুলতানা এবং ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নিশাত তাসনিম শুচি।

এ সময় প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ওয়ালটন ব্যাটারির শতাধিক ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে দুই দিনব্যাপী অগ্নিনিরাপত্তা প্রশিক্ষণ

আবারো ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ পেল ওয়ালটন হাই-টেক

বাজারে নিয়ে আসা ওয়ালটনের কার ব্যাটারির নতুন মডেলগুলো হলো—গ্রাভিটন এন৫০জেড, গ্রাভিটন এন৫০জেডএল, গ্রাভিটন এনএস৪০জেডএল, গ্রাভিটন এনএস৬০এল, গ্রাভিটন এনএস৭০, গ্রাভিটন এএক্স১২০-৭ এবং গ্রাভিটন এনএক্স১২০-৭ এল। প্রিমিয়াম ক্যাটগরির ওয়ালটনের এসব গাড়ির ব্যাটারি ৮ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। সারা দেশে ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটর ও ডিলার শোরুমে পাওয়া যাবে ব্যাটারিগুলো। 

অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মাহবুবুল আলম বলেছেন, “ওয়ালটন এখন শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি জাতীয় ব্র্যান্ড। একটি প্রতিশ্রুত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সাফল্যের প্রতীক। স্মার্ট ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ—সব ক্ষেত্রেই ওয়ালটন এখন দেশের গর্ব। নিজস্ব কারখানায় তৈরি সিলড মেইনটেন্যান্স ফ্রি (এসএফএফ) কার ব্যাটারি উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে ওয়ালটনের নিরন্তর এই অগ্রযাত্রায় আরেকটি গৌরবময় অধ্যায় যুক্ত হলো। এটি আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং সক্ষমতা, গবেষণা দক্ষতা, এবং গ্রাহকের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতারও প্রতিফলন।”

তিনি আরো বলেন, “ভবিষ্যতে লো মেইনটেন্যান্স কার ও কমার্শিয়াল ভেহিকেল ব্যাটারি, সোলার ও আইপিএস ব্যাটারি বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।” 

ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনের সিইও নিশাত তাসনিম শুচি জানান, দেশে গাড়ির ব্যাটারির বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৫ লাখ ইউনিট এবং বাজারের আকার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। সম্ভাবনাময় এই বাজার চাহিদা পূরণে কয়েক বছর ধরে কার ব্যাটারি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে ওয়ালটনের আরঅ্যান্ডআই টিম। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন আজ সাত মডেলের কার ব্যাটারি বাজারে ছেড়েছে। এসব ব্যাটারির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শতভাগ কোয়ালিটি নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ব্যাটারি, রিচার্জেবল ফ্যান, অনলাইন ইউপিএস ও ইমার্জেন্সি লাইটসহ বিভিন্ন ডিভাইসের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাটারি, স্মল ব্যাটারি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ওয়ালটন।

অনুষ্ঠানে ব্যাটারির উৎপাদন প্রক্রিয়া, গ্রাভিটন ব্যাটারির ফিচার, গুণগত মান ও প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন ওয়ালটন মাইক্রো-টেকের সিইওর বিজনেস কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল আসিফ এবং ওয়ালটন ব্যাটারির রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী নাহিদ আল মাহমুদ।

তারা জানান, গ্রাভিটন ব্যাটারির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী, ম্যাক্সিমাম ক্র্যাঙ্কিং পারফরম্যান্স এবং যেকোনো আবহাওয়ায় পারফর্ম্যান্স থাকে অটুট। সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জাপানিজ স্ট্যান্ডার্ডে অনুসরণ করা হয়েছে। 

ঢাকা/সাহেল/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর টন ব য ট র র গ র ভ টন ন প রক করপ র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ