অবসর কাটাতে ছেলের সঙ্গে কানাডায় ববিতা
Published: 8th, July 2025 GMT
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। রুপালি পর্দায় দীর্ঘসময় রাজত্ব করা এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী এবার পাড়ি জমালেন কানাডা। উদ্দেশ্য, অবসরের সময়টুকু প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থেকে কিছুটা প্রশান্তি ও আনন্দ নিয়ে কাটানো। জানা গেছে, আজ ছয় মাসের জন্য কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন ববিতা। সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন তাঁর একমাত্র পুত্র অনিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করছেন।
ছোটবেলা থেকেই কানাডায় বেড়ে ওঠা অনিক বর্তমানে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং সেখানে শিক্ষকতা করছেন। সম্প্রতি মা ববিতাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসেন অনিক। এবার মা-পুত্র একসঙ্গে ফিরে যাচ্ছেন কানাডায়।
এ প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, ‘অনেক দিন হলো এক জায়গায় থিতু হয়ে থেকেছি। এবার মনে হলো একটু নিজের মতো করে সময় কাটাই। ছেলের সঙ্গে কানাডায় থাকব, মাঝে মাঝে ওর কাজের ফাঁকে ঘুরে বেড়াব। পাশাপাশি আমেরিকায় প্রবাসী আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করব। অনেকদিন হলো তাদের সান্নিধ্য পাই না।’ তবে শুধু ঘুরে বেড়ানোই নয়, দায়িত্বের অংশ হিসেবে ববিতা এবার যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেবেন।
তিনি জানান, ‘আমি ডিসিআইআই এর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এবারও কিছু সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে ডিসিআইআই-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ববিতা। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ববিতাও একজন সেলিব্রেটি অ্যাম্বাসাডর হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা, ফান্ড রেইজিং ও সচেতনতামূলক প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন।
১৯৬৮ সালে ‘সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ববিতার। এরপর চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি উপহার দিয়েছেন একের পর এক কালজয়ী সিনেমা—অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, নতুন সুর, তিতাস একটি নদীর নাম, শঙ্খনীল কারাগার, রামের সুমতি, অমানুষ, অলাতচক্রসহ অসংখ্য ছবি।
ববিতার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা নার্গিস আক্তার পরিচালিত ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’। এই চলচ্চিত্রে ২০১৫ সালে অভিনয়ের পর থেকে ববিতা আর নতুন কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অভিনয় থেকে। এখন সময়টা কাটাচ্ছেন নিজের মতো করে—পরিবার, সমাজসেবা আর স্মৃতিময়তার আবহে।
চিরসবুজ এই তারকার কাছে অভিনয় নয়, এখন পরিবারের কাছে থাকাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য। কানাডার প্রকৃতির মাঝে, সন্তানের পাশে থেকে তিনি খুঁজে নিতে চান জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বব ত অভ ন ত র চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বিমা কোম্পানিরও আছে পেনশন, কী কী আছে
দেশে সর্বজনীন পেনশন চালুর আগে থেকেই জীবনবিমা কোম্পানিগুলো অবসর-পরবর্তী আর্থিক নিরাপত্তার পরিকল্পনা দিয়ে আসছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে থাকা বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এই বিমাভিত্তিক পেনশন ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বিমা সম্পর্কে মানুষের অনীহা ও অজ্ঞতার কারণে এই সুবিধা তেমন পরিচিতি পায়নি।
আজীবন কঠোর পরিশ্রমের পর অবসরজীবনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। এই বিমা পরিকল্পনা সেই নিশ্চয়তা দেয়—বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাঁরা দীর্ঘ সময় প্রিমিয়াম দিতে চান না, কিন্তু অবসরের পর নিয়মিত পেনশন সুবিধা পেতে চান।
এই পরিকল্পনার আওতায় নির্দিষ্ট সময় প্রিমিয়াম দিলেই গ্রাহক অবসর-পরবর্তী সময়ে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন পাবেন। যদি পলিসি চলাকালে দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে গ্রাহক স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে বাকি মেয়াদের প্রিমিয়াম দিতে হবে না। অর্থাৎ পলিসিটি চালু থাকবে।
এ ছাড়া পেনশন শুরুর আগে মৃত্যু হলে মনোনীত (নমিনি) ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিমার অঙ্ক পাবেন। এ ছাড়া পেনশন গ্রহণকালীন মৃত্যুর ক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তি বাকি মেয়াদের পেনশন পাবেন। কেউ যদি পেনশনের মেয়াদ অতিক্রম করেও জীবিত থাকেন, মৃত্যুর আগপর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন তিনি।
মেটলাইফ, ডেলটা লাইফসহ দেশের বিভিন্ন বিমা কোম্পানির এই পেনশন পরিকল্পনা আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) পেনশন বিমা পলিসির নাম ছিল ‘ব্যক্তিগত পেনশন বিমা পলিসি’। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন চালু হওয়ার পর এই পলিসি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগপর্যন্ত এটিই ছিল জীবন বীমা করপোরেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পলিসি।
মূল বৈশিষ্ট্য
১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে এই পেনশন বিমা পলিসি নেওয়া যায়। কিন্তু যত বেশি বয়সে এই বিমা নেওয়া হবে, প্রিমিয়াম ততই বেড়ে যাবে। সে জন্য গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, বয়স কম থাকতেই পেনশন বিমা নেওয়া।
গ্রাহককে মেয়াদ পর্যন্ত নিয়মিত প্রিমিয়াম দিতে হবে। এর বিনিময়ে অবসরজীবনের প্রায় পুরোটা সময় এই বিমার ছায়ায় থাকা যায়। প্রিমিয়াম দিতে হয় নির্ধারিত সময়ে—১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত, নিজের সামর্থ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী। পেনশন দেওয়া হয় ন্যূনতম ১০ বছর। এরপর সর্বোচ্চ ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রাহক পেনশন পাবেন।
কত টাকা পেনশন পাওয়া যায়
এই বিমা নেওয়ার আগে গ্রাহকদের প্রথমেই ঠিক করতে হয়, তিনি ঠিক কত টাকার পেনশন নিতে চান। এটা নির্ভর করবে যিনি বিমা পলিসিটি নিতে চাইছেন, তার প্রয়োজনের ওপর। যেমন কেউ যদি মাসে ৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম চান, তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে প্রিমিয়াম গণনা করা হবে।
প্রিমিয়াম পদ্ধতি
প্রিমিয়াম দেওয়ার পদ্ধতিও বেশ নমনীয়—চাইলে মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক—যেভাবে সহজ মনে হয়, সেভাবেই প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পলিসি নেওয়া যায়।
মৃত্যুর ক্ষেত্রে কী হয়
পেনশন বিমা পলিসির টাকা দেওয়া শুরুর ১০ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় বিমাগ্রহীতা মারা গেলে ১০ বছরের বাকি সময়ের জন্য পেনশনভোগীর নমিনি (মনোনীত) পেনশন পাবেন। পেনশন দেওয়া শুরুর নির্ধারিত তারিখের আগে বিমাগ্রহীতার স্বাভাবিক মৃত্যু হলে নমিনি চাইলে এককালীন অর্থও নিতে পারবেন।
সহযোগী বিমা
এই বিমায় অন্যান্য বিমার মতো দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা থাকে। এই বিমা সুবিধা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত কার্যকর থাকে, অথবা যত দিন প্রিমিয়াম দেওয়া হয়, তার মধ্যে যেটি আগে শেষ হবে, তত দিন এটি কার্যকর থাকে। সেই সঙ্গে এই বিমা পলিসি থেকে ঋণ নেওয়া যায়।
বিমা করার আগে মনে রাখা দরকার, বিমা সাধারণ সঞ্চয় নয়, বরং বিমা হলো একধরনের নিরাপত্তা। মানুষকে নির্দিষ্ট কিছু অনিশ্চয়তার বিপরীতে নিশ্চয়তা দেয় বিমা। সেই সঙ্গে আছে সঞ্চয়। অর্থাৎ এটি কার্যত নিরাপত্তা ও সঞ্চয়ের মিশ্রণ। সেই সঙ্গে বাড়তি সুবিধা হলো, বিমা আয়করমুক্ত।