রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিএনপির এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ শনিবার বিকেলে পবা উপজেলার নওহাটা বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তাঁরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের নওহাটা কলেজ মোড়ে শুয়ে পড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও রাজশাহী-৩ আসনে বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হককে। তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন এবং রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ভোটার। এ কারণে তাঁর প্রতি তৃণমূল নেতা–কর্মীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।

সমাবেশে অংশ নেন পবা ও মোহনপুর উপজেলার বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। বিক্ষোভকারীরা জানান, দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন স্থানীয় নেতা রায়হানুল আলম। মিছিলে, আন্দোলনে তৃণমূলের পাশে ছিলেন তিনি। তাঁকে বাদ দিয়ে বহিরাগতকে প্রার্থী করায় স্থানীয় নেতারা অপমানিত ও ভেঙে পড়েছেন। স্থানীয় প্রার্থীর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তাঁরা জানান।

পারিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী-৩ আসন সব সময় আন্দোলনের কঠিন ঘাঁটি। যাঁরা দুঃসময়ে ছিলেন না, তাঁদের হঠাৎ প্রার্থী করা তৃণমূলের প্রতি অবিচার। এতে নেতা–কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। দলকে শক্ত করতে হলে আন্দোলনের সময় যাঁরা রাজপথে ছিলেন, তাঁদেরই মূল্যায়ন করা উচিত।

পবা উপজেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দলের কঠিন সময়ে শ্রমিকদল ছিল রাজপথে। রক্ত দিয়েছি, লাঠির মার খেয়েছি। অথচ আজ আমাদেরই এলাকায় বহিরাগত প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলকে অপমান করলে দল শক্তিশালী হয় না, দুর্বল হয়। আমরা চাই, স্থানীয়, পরীক্ষিত, একনিষ্ঠ নেতার হাতে এই আসনের দায়িত্ব দেওয়া হোক।’

হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজপথে মার খেয়েছি, মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়েছি। এখন নির্বাচন এলে বহিরাগত এসে আমাদের মাথার ওপর বসবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

নওহাটা পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম বলেন, দলের সিদ্ধান্তে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের জীবনসংগ্রামের কথা কেউ শুনছে না।

রাজশাহী–৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সময় যাঁরা প্রার্থী নিয়ে এই রকম কর্মসূচি দেবেন, তাঁরা আসলে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চান। বিএনপি একটি বড় দল। এই দলের মধ্যে অনেকেরই প্রত্যাশা থাকতে পারে, সেটার প্রতি আমি সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তাই বলে তাঁরা বিভ্রান্তি ছড়াবেন, এটা ঠিক না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে ত্যাগ, সেটা মনে রেখে আমি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, সবার উচিত এই ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা।’

সমাবেশ শেষে নেতা–কর্মীরা মহাসড়কে শুয়ে পড়ে অবরোধ করেন। তাঁরা কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁদের হাতে ব্যানার ও ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘স্থানীয় প্রার্থী চাই’, ‘তৃণমূলের রক্ত-ঘামে গড়া আন্দোলনের মূল্যায়ন চাই’।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, দামকুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম, হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়াল হোসেন, প্রজন্ম-৭১-এর জেলা আহ্বায়ক মিলন হোসেন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক স ন ব এনপ র স ব ক ল ইসল ম ৩ আসন অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজনীতি ছাড়লেন লালুপ্রসাদের মেয়ে রোহিনী

নির্বাচনে বড় হারের পর নতুন সংকটে পড়েছে বিহারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। পারিবারিক বিরোধের জেরে আজ শনিবার আরজেডি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির প্রধান নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিণী আচার্য। একই সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন জোটের পরাজয়ের এক দিন পরই এমন ঘোষণা দিলেন তিনি। বিরোধীদলীয় জোটটি এবারের নির্বাচনে ২৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৫টিতে জয় পেয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে রোহিণী লিখেছেন, ‘আমি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছি এবং পরিবারকে অস্বীকার করছি। সঞ্জয় যাদব ও রামিজ আমাকে এটাই করতে বলেছেন...আর সব দায় আমি নিজের কাঁধে নিচ্ছি।’

সঞ্জয় যাদব রাজ্যসভায় আরজেডি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বী যাদবের বিশ্বস্ত সহযোগী। রামিজ তেজস্বীর পুরোনো বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর প্রদেশের একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, লালুপ্রসাদের পর তেজস্বীই দলের নেতৃত্ব দেবেন।

গত মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বাবা লালুপ্রসাদ ও ভাই তেজস্বীকে আনফলো করেন রোহিণী। ওই সময়ই লালুপ্রসাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সঞ্জয় যাদব অন্যদের বঞ্চিত করে দলের ভেতরে ক্ষমতা সংহত করছেন বলে সমালোচনা করেছেন রোহিণী।

আরজেডি পরিবারের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি রোহিণী চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রি রয়েছে। তিনি পরে গৃহিণী হিসেবে সিঙ্গাপুরে থাকা স্বামীর সঙ্গে থিতু হন। কয়েক বছর আগে বাবা লালুপ্রসাদের জন্য কিডনি দান করে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন রোহিণী। তিনি গত বছর বিহারের সারন জেলা থেকে লোকসভা নির্বাচন করে পরাজিত হন।

ধারণা করা হচ্ছে, লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন রোহিণী। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে ছোট ভাই তেজস্বীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তেজস্বী এবারের নির্বাচনে জোটের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য লড়েছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন রোহিণী। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে ছোট ভাই তেজস্বীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তেজস্বী এবারের নির্বাচনে জোটের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য লড়েছিলেন।বিহারের নির্বাচনে যা ঘটেছে

বিধানসভা নির্বাচনে এবার ২৪টি আসন পেয়েছে আরজেডি। অথচ পাঁচ বছর আগে বিধানসভায় দলটি পেয়েছিল ৭৫ আসন। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সর্বোচ্চ আসন জিতলেও মহাগঠবন্ধনের আসন সংখ্যা তলানিতে পৌঁছায়। এটি কংগ্রেস ও আরজেডির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।

এনডিএ জোটের প্রধান দুই দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও জনতা দল (জেডি) ১০১টি আসনে ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। এ ঘটনা থেকে এনডিএর বড় ধরনের জয়ের কারণটি বোঝা যায়। জোটটি বিধানসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০০টির বেশি আসনে জয় পেয়েছে। রাজ্যটিতে সবচেয়ে বড় একক দল হিসেবে উত্থান ঘটেছে বিজেপির।

আরও পড়ুনবিহারে বিজেপি জোটের কাছে কংগ্রেস–আরজেডির ভরাডুবি১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ