ক্যাপশন: সাগরে তলিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে খুঁজতে ড্রোন ব্যবহার করছে বিমানবাহিনী। আজ সকালে সৈকতের সমিতিপাড়া পয়েন্ট। ছবি জেলা প্রশাসনের সৌজন্যে

চার দিন পার হলেও সন্ধান মেলেনি কক্সবাজারের হিমছড়িতে সাগরে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের (২২)। আজ শনিবার সকাল থেকে ড্রোন উড়িয়ে সাগরে তাঁর সন্ধান করছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।

অরিত্র হাসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র। গত মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকত এলাকায় গোসল করার সময় আরও দুই বন্ধুসহ সাগরে ভেসে যান তিনি। পরে দুই বন্ধুর লাশ ভেসে এলেও অরিত্র হাসানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ড্রোন দিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানোর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্ধারকাজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আজ শনিবার থেকে ড্রোন দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া দ্রুতগতির জলযান (স্পিডবোট) দিয়েও সাগর ও নদীর মোহনায় তল্লাশি চলছে। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের মহেশখালী থেকে শুরু করে টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে সহপাঠী কে এম সাদমান রহমান ও আসিফ আহমেদকে নিয়ে হিমছড়ি এলাকায় সাগরে গোসল করতে নামেন অরিত্র হাসান। এ সময় সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে তাঁরা ভেসে যান। দুই ঘণ্টা পর হিমছড়ি সৈকতেই কে এম সাদমান রহমানের লাশ ভেসে আসে। পরদিন বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলের প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল এলাকায় পাওয়া যায় আসিফ আহমেদের লাশ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অরিত্রকে খুঁজতে সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছেন সৈকতকর্মী, ফায়ার সার্ভিস, পর্যটন পুলিশ ও বেসরকারি লাইফগার্ডের সদস্যরা। হিমছড়ি সৈকতের আশপাশ ছাড়াও মহেশখালীর সোনাদিয়া সৈকত, বাঁকখালী নদীর মোহনা ও প্যারাবনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শুক্রবার সারা দিন উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা ও নদীর মোহনায় খোঁজ করা হয়েছে, কিন্তু কোথাও নিখোঁজ যুবককে পাওয়া যায়নি।

অরিত্রের বাড়ি বগুড়া জেলায়। তাঁর বাবা সাকিব হাসান ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক। ছেলে নিখোঁজ রয়েছেন জানার পর থেকেই স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সমুদ্রসৈকতে অবস্থান করছেন। ছেলের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে ক্ষণে ক্ষণে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন দুজনেই। সাকিব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার কথা জানায় অরিত্র। আমি যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু পরদিন সকালে ফোনে জানানো হয়, সে নিখোঁজ। এরপর আমরা কক্সবাজার আসি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাকিব হাসান বলেন, ‘অরিত্র আমার একমাত্র সন্তান। খুব যত্ন করে বড় করেছি। মেধাবী ছিল ছেলেটা। কিন্তু হঠাৎই সব থেমে গেল। তার অন্য দুই বন্ধুর মরদেহ সৈকতে ভেসে এলেও আমার ছেলের খোঁজ এখনো পাইনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অর ত র হ স ন হ মছড়

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ