চাঁদাবাজি-সহিংসতা বন্ধ না করলে বিএনপির পরিণতি আ.লীগের মতোই হবে
Published: 12th, July 2025 GMT
জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি যদি চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাদের ৯০ শতাংশ নেতা-কর্মী আর দল করবেন না। বিএনপি সারা দেশে চাঁদাবাজি ও সহিংসতা বন্ধ না করলে, তাদেরও আওয়ামী লীগের পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন এ হুঁশিয়ারি দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠনটি।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সারা দেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যুবশক্তি।
সংবাদ সম্মেলনে যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপি যদি চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়, তাহলে দলটির ৯০ শতাংশ নেতা-কর্মী আর বিএনপি করবে না, যুবদল করবে না, ছাত্রদল করবে না, স্বেচ্ছাসেবক দলও করবে না। চাঁদাবাজি বর্তমানে বিএনপির একমাত্র আয়ের উৎস।
তারিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির ভয়ে কাতর হয়ে আছে। বিএনপি বর্তমানে সারা দেশে যে ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে, এই পরিস্থিতিতে কখনোই আমরা নির্বাচন প্রত্যাশা করতে পারি না।’
যুবশক্তির আহ্বায়ক বলেন, বিএনপিকে সারা দেশে তাদের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগের পরিণতির মতোই বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য আপনাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? আপনারা লন্ডনে গিয়ে বিএনপির কাছে সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করে এসেছেন। আপনারা যেভাবে বিএনপির সঙ্গে আপস করেছেন, সেটি জুলাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’
জনগণের মাঝে সরকারের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মন্তব্য করে তারিকুল বলেন, ‘আপনারা কি আদৌ বিএনপির সহিংসতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে সক্ষম? সহিংস কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চাই। সরকার যেন কোনোভাবেই আপস না করে।’
চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে তারিকুল ইসলাম একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। সেখানে বলা হয়, পুরান ঢাকার ঘটনা বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পরিকল্পিত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির ধারাবাহিকতার অংশ।
এখনই এ ধরনের সহিংসতার লাগাম না টানা গেলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যুবশক্তির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, এই বেদনাদায়ক সন্ত্রাস গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্যও ভয়াবহ অশনিসংকেত।
তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, বিএনপির সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজির নেটওয়ার্ক ভেঙে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন। নির্বাচনপূর্ব সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় যুবশক্তির সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে তাঁরা আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছেন। প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথাও ভাবছেন। এ ছাড়া আজ রাজধানীর বাড্ডায় যুবশক্তির উদ্যোগে জুলাই যুব সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ দাবিতে জেলায় জেলায় জামায়াতের মানববন্ধন
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে জেলায় জেলায় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৫ অক্টোবর) এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
জামায়াতের পাঁচ দাবি হলো: জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
আরো পড়ুন:
অস্ত্র মামলায় বহিষ্কৃত ছাত্রের শাস্তি প্রত্যাহার দাবিতে শাবিপ্রবিতে মানববন্ধন
লালনের আখড়ায় মাদক সেবন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
নড়াইল: আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নড়াইল শহরের আদালত সড়কে মানববন্ধন করেন জামায়াত নেতারা।
বক্তরা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দিতে পারে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকারকে দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- নড়াইল জেলা জামায়াতের আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, নড়াইল-২আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জামিরুল হক টুটুল, জেলা কার্যকরী পরিষদ সদস্য হেমায়েতুল হক হিমু, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আলমগীর হোসেন।
ঝালকাঠি: একই দাবিতে সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন জামায়াতের নেতারা। এতে দলটির শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একদিনে করার উদ্যোগ একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা। তারা অভিযোগ করেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে হাটছে। নভেম্বর মাসে গণভোট এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
সরকারকে উদ্দেশে বক্তারা বলেন, গণমানুষের পাঁচ দাবি মেনে নিলে জাতি রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে। এতে শুধু জামায়াত নয়, গোটা জাতির মঙ্গল হবে।
ঝালকাঠি জেলা জামায়াতে ইসলামের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, “তৃতীয় দফায় আমরা পিআর পদ্ধতিকে জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত ও গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে মানববন্ধন করছি। সরকার যদি এই দাবিগুলো উপেক্ষা করে, তাহলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
মানববন্ধনে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির বিএম আমিনুল ইসলাম, সেক্রেটারি এসএম ফরিদ উদ্দিনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ: বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা এলাকায় জেলা জামায়াত আয়োজিত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির জেলা আমির অধ্যাপক আলী আজম মো. আবুবকর। অন্যদের মধ্যে ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর আব্দুল আলীম, কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিসে সুরা সদস্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, জেলা সেক্রেটারি আব্দুল আওয়াল।
বক্তরা বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করতে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই। এজন্য এই পদ্ধতিকে জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেওয়া জরুরি। ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে জামায়াতে ইসলামী জনগণের পাশে থেকে কাজ করছে।
নওগাঁ: পাঁচ দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নওগাঁ শরিশাহাটি মোড় থেকে কাজীর মোড় পর্যন্ত সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এর আগে, শহরের মুক্তির মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে জামায়াত। এতে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ জেলা জামায়াতের আমির খ.ম আব্দুর রাকিব। বক্তব্য রাখেন- নওগাঁ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, নওগাঁ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আ স ম সায়েম।
নাটোর: সকাল ১০টায় নাটোর শহর শাখা জামায়াতের উদ্যোগে নাটোর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদকে অন্তর্ভুক্ত ও গণভোটের দাবিসহ পাঁচ দফা সরকারকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে। দেশের স্থিতিশীলতা ও জনগণের অধিকার রক্ষায় এই দাবিগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
মানববন্ধনে শহর জামায়াতের আমির মাওলানা রাশিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি প্রভাষক আলী আল মাসুদ মিলন এবং জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ড. মীর নূরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত রবিবার জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে সারা দেশে মিছিল ও জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি দেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দিন এই কর্মসূচি পালিত হয়।
ঢাকা/শরিফুল, অলোক, শাহরিয়ার, সাজু, আরিফুল/মাসুদ