যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়ায় আশরাফুল ইসলাম বিপুল (২৭) নামে এক যুবক কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
নিহতের পরিবারের দাবি, বন্ধুর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করায় একই এলাকার বাপ্পী নামে আরেক যুবক বিপুলকে কুপিয়ে হত্যার করেছেন। কৌশলে ফোন করে ডেকে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
নিহত আশরাফুল ইসলাম বিপুল যশোর শহরতলীর শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার আখতার হোসেনের ছেলে। তিনি এসিআই গ্রুপের যশোর ডিপোতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বাপ্পী ষষ্ঠীতলাপাড়ার স্যানিটারি মিস্ত্রি আব্দুল খালেকের ছেলে। বাপ্পী ও বিপুল বন্ধু ছিলেন।
নিহতের বাবা আখতার হোসেন বলেন, ‘মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় বাপ্পীকে বছরখানেক আগে তালাক দেন সুমাইয়া। এরপর সুমাইয়াকে বিয়ে করে বিপুল। এতে বাপ্পী ক্ষিপ্ত হন এবং বিপুল ও সুমাইয়াকে হত্যার হুমকি দেন। এরপর বিভিন্ন সময় বাড়ির সামনে বোমাবাজির ঘটনাও ঘটান তিনি। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কৌশলে ফোন করে ডেকে নিয়ে বিপুলকে কুপিয়ে জখম করেন বাপ্পী ও তার সহযোগীরা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার কিছু সময় পর বিপুল মারা যায়।’
হাসপাতাল চত্বরে আহাজারি করতে দেখা যায় নিহত বিপুলের স্ত্রী সুমাইয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাপ্পী অনেক খারাপ ছেলে। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আমাদের ডিভোর্স হয়। পরে বিপুলের সঙ্গে পরিচয় হয় ও আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পর বাপ্পী ও তার পরিবার বিভিন্ন সময়ে আমাকে উত্ত্যক্ত করত। ফোন করে আজেবাজে কথা বলত। কয়েক মাস আগে আমার স্বামীকে লক্ষ্য করে বোমাও ছোড়ে। সে সময় সে প্রাণে বেঁচে যায়। কয়েকবার থানাতে অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা.
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে যায়। হামলাকারী তথ্য নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে পুলিশ এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জিসান হত্যা: আদালতে জবানবন্দি দিলেন ৩ আসামি
খুলনার দিঘলিয়ায় সাত বছরের শিশু জিসানকে হত্যা করেন প্রতিবেশী ফয়সাল। তার লাশ গুম করতে সহযোগিতা করেন অভিযুক্তের মা-বাবা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া থানার জিআরও এএসআই ইমাম আলী।
তিনি জানান, রবিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ফয়সাল ও তার বাবা-মাকে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের আদালত-১ এ হাজির করা হয়। সেখানে গ্রেপ্তারকৃতরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে প্রথমে ফয়সাল (২৬), এরপর তার বাবা জিএম হান্নান (৫২) ও সর্বশেষ তার মা মাহিনুর বেগম (৪৫) জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার
খুলনায় শিশু জিসান হত্যা: আসামির বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
এদিকে, সন্তান হারা জিসানের মায়ের আহাজারি যেন থামছে না। ১২ বছর বয়সী বড় ছেলে রাশেদকে জড়িয়ে একের পর এক বিলাপ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাজান তো কোনো অন্যায় করে নাই। আমার লগে ওদের কোনো শত্রুতা নাই। কেন ওরা আমার বাজানরে মাইরা ফালাইলো। কেমনে আমার বাজানরে খুন করল? আমি এইডার বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তিনি বলেন, “আমার বাবারে ওরা যে কষ্ট দিছে, আমিও ওগো সেই কষ্ট দিবার চাই। আমার বাবারে যেভাবে শাস্তি দিছে, আমিও ওদের সেভাবে শাস্তি চাই। আমি ওগো ফাঁসি চাই। আমার বাজান মসজিদ থেইক্যা নামাজ পইড়া বাহির হইছে বৃহস্পতিবারের দিন। ওই শয়তানও সঙ্গে নামাজ পড়ছে। নামাজ পইড়া দু’জন একসাথে বাহির হইছে। এরপর আমার বাবারে হাত ধরে লইয়া কাম করছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডল বলেন, “৯ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিশু জিসানকে ফয়সাল তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি দড়ি দিয়ে বেঁধে রান্নাঘর থেকে দা এনে কুপিয়ে হত্যা করেন জিসানকে। ঘটনাটি প্রথমে ফয়সালের মা মাহিনুর বেগম আঁচ করতে না পারলেও পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, তার ছেলে একটি শিশুকে হত্যা করেছে। এরপর তিনি ফয়সালের বাবা হান্নানকে খবর দেন।”
তিনি বলেন, “তারা উভয়ে জিসানের মরদেহ প্রথমে প্লাস্টিকের বস্তায় এবং পরবর্তীতে একটি চটের বস্তায় করে বাড়ির পূর্ব পাশের দেওয়ালের কাছে মাটি চাপা দেন। বিষয়টি যাতে কেউ আঁচ করতে না পারেন সেজন্য মাটির উপর রোদে শুকানোর জন্য পাটখড়ি সাজিয়ে রাখেন তারা।”
দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচএম শাহীন বলেন, ‘কি কারণে এবং কেন শিশু জিসানকে হত্যা করা করেছে এর উত্তর বের করার জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। বাদীর সাথে তাদের কোনো শত্রুতাও ছিল না। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ফয়সাল মাদকাসক্ত ছিলেন।”
অভিযুক্ত ফয়সালের চাচা জিএম আকরাম বলেন, “সরকারি সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফয়সাল এসএসসি পাস করে। এরপর স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে। ওদের স্বভাব চরিত্রের কারণে আমি খোঁজখবর রাখি না। মাঝেমধ্যে ওর মাথা ঠিক থাকতো না, পাগলামি করত।”
উল্লেখ্য, বড় ছেলে রাশেদ নানা নানির সঙ্গে ভোলায় থাকে। ছোট ছেলে জিসান বাবা-মায়ের সঙ্গে দৌলতপুর-দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের কোয়ার্টারে বসবাস করত। জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের মেকানিক্যাল বিভাগের শ্রমিক।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ