নোয়াখালীতে বিদ্যালয়ের শৌচাগার থেকে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
Published: 27th, November 2025 GMT
নোয়াখালীতে একটি বিদ্যালয়ের শৌচাগার থেকে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলার সদর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। আজ তার বার্ষিক পরীক্ষা ছিল।
ছাত্রীর পরিবার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়টি শৌচাগার থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসতে শোনে কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরপর অন্য সহপাঠীদের বিষয়টি জানানো হয়। পরে শৌচাগারের দরজা ভেঙে ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে ওই ছাত্রীর লাশ ঝুলতে দেখে শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষকেরা ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানতে চাইলে নিহত ছাত্রীর চাচা প্রথম আলোকে বলেন, আজ তাঁর ভাতিজির পরীক্ষা ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ঝুলন্ত লাশের বিষয়টি জেনেছেন। স্কুল থেকে তাঁর ভাতিজি আত্মহত্যা করেছে বলে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আরও খোঁজ নিচ্ছেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি দাপ্তরিক কাজে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে ছিলেন। ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত ছাত্রীর মা বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ছ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, প্রতিবাদে সহপাঠীদের অবস্থান
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থীকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকার একটি মেসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। পাশাপাশি উপাচার্য ও বিভাগীয় প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম শের আলী। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। আশুলিয়ায় একটি মেসে থাকেন তিনি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের অন্তু দেওয়ান ও তরিকুল; ২৮তম ব্যাচের মেহেদী হাসান ও লাবিব এবং ৩২তম ব্যাচের আশরাফুল ও আসাদ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কয়েকজন সহপাঠী বলেন, গতকাল বিকেলের দিকে শের আলীর মেসের সব শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত আসাদের মেসে দাওয়াত দেওয়া হয়। পরে দাওয়াত খাওয়ার উদ্দেশ্যে শের আলীসহ সাতজন গণ বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন মাজার এলাকায় যান। এরপর সেখান থেকে খিচুড়ি রান্নার উপকরণ কিনে তাঁরা আসাদের মেসে যান। একপর্যায়ে শের আলী ও মাহিমকে পেঁয়াজ ছিলতে বলেন আসাদ। শের আলী পেঁয়াজ ছিলতে অপারগতা প্রকাশ করে রসুন ছিলতে শুরু করেন। এ সময় আশরাফুল বিষয়টি নিয়ে শের আলীকে ধমক দিয়ে মারধরের ভয় দেখালে তিনি নিজের মেসে চলে যান।
সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শের আলীর বন্ধুদের মাধ্যমে রাত ৯টার দিকে আইন বিভাগের ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাহিদ তাঁকে আবার ওই মেসে ডেকে নেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে শের আলী ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষমা চান। রাত ১২টার দিকে সবাই মিলে খিচুড়ি খান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সবাই বিদায় নিয়ে মেসে ফিরতে চাইলে শের আলীকে অন্তু দেওয়ান অপেক্ষা করতে বলেন। বাকিরা চলে যান। পরে অন্তু দেওয়ান তাঁকে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে অশ্লীল কথা বলে চড়-থাপ্পড় মারেন। প্যান্ট খুলতে বলায় অস্বীকৃতি জানালে তরিকুল তাঁকে মারধর করেন। এরপর জোর করে শের আলীর প্যান্ট খুলে অন্তু দেওয়ান পেটে লাথি মারেন। মেহেদী হাসান ও আশরাফুল তাঁকে চড় মারতে থাকেন। পরে তাঁদের পায়ে ধরে মাফ চাইলে মারধর ও নির্যাতনের পর রাত দেড়টার দিকে তাঁরা শের আলীকে ছেড়ে দেন। বাইরে অপেক্ষারত বন্ধু মাহিমসহ কয়েকজন শের আলীকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শের আলীর সহপাঠীরা। পরে তাঁরা আইন বিভাগের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভুক্তভোগী শের আলী বলেন, ‘রাতে খিচুড়ি খাওয়ার পর সবাইকে যেতে বলা হয়। কিন্তু আমাকে একা আটকে রাখে। এরপর অন্তু ভাই অশ্লীল কথা বলে টানা ৫-৬টা চড়-থাপ্পড় মারে। এরপর বলে প্যান্ট খোল, যখন অস্বীকৃতি জানাই, তখন তরিকুল ভাই আবার আমাকে মারে। এরপর আমার প্যান্ট খুলে অন্তু ভাই পেটে লাথি মারে। ৩২ ব্যাচের মেহেদি ভাই, আশরাফুল ভাই দুজন আমাকে চড় মারতে থাকে। এরপর আমি তাদের পায়ে ধরি, মাফ চাই। সেখানে ১৫-২০ জন ছিল ৩২ ব্যাচের, তাদের পায়ে ধরে বলি আমার ভুল হয়ে গেছে। এরপর আমাকে ছাড়ে। সকালে ৩২ ব্যাচের লাবিব ভাই হাসপাতালে এসে এটা আর বাড়াতে চাও, নাকি শেষ করবা বলে হুমকি দেয়। আমি এই ঘটনার যথাযথ বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে অন্তু দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। মারধর করা হয়নি। মারধর বা নির্যাতনের অভিযোগটি মিথ্যা।’
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নকিব জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, রাতে ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসচিব কনক চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আইন বিভাগের শিক্ষকেরাসহ তাঁরা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। প্রক্টর ওই বিভাগের প্রধান। বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিষয়টির ব্যাপারে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।