আশির দশকের পেশা ‘মাইঠাল’ ও অন্যান্য
Published: 13th, July 2025 GMT
আশির দশকের জীবন যাত্রার উপযোগী এমন কিছু পেশা ছিলো যা এখন আর নেই। অথবা একেবারেই বিলুপ্তির পথে। সভ্যতা ও সমাজ গ্রহণ করে নিয়েছে অনেক নতুন পেশা। হারিয়ে যাওয়া সেই সব পেশা নিয়ে এই আয়োজন।
মাইঠাল: মাইঠালদের কাজ ছিলো মাটি কাটা। আগে বর্ষার দিনে বৃষ্টি এবং বন্যার পানি থেকে ঘর-বাড়ি রক্ষা করার জন্য প্রত্যেকটা বাড়ির ভিটা খুব উঁচু করা থাকতো। মাটি ফেলে প্রত্যেকটা বাড়ি ফসলের জমিন থেকে অনেক উঁচু করা হতো। যে কারণে বর্ষায় বৃষ্টিতে যে পরিমাণ মাটি ধুয়ে জলাশয়ে চলে যেত, প্রতি বছর ওই পরিমাণ বা তার বেশি মাটি তুলতে হতো। তা নাহলে বর্ষায় প্রত্যেকটা বাড়ি ডুবে যেত। অর্থাৎ বাড়িগুলো যাতে না ডোবে এজন্য প্রত্যেক বছরই প্রত্যেক বাড়িতেই মাটি ফেলতে হতো। এই কারণে সে সময় একটি পেশাজীবী শ্রেণি ছিলো, যাদেরকে স্থানীয় ভাষায় মাইঠাল বলা হতো। তাদের কাজ ছিলো মাটি কেটে বাঁশের ঝাকায় ভরে বাড়ির ভিটায় ফেলা। শীতকালে যখন জলশয় শুকিয়ে যেত তখন মাইঠালদের কাজ শুরু হতো এবং মোটামুটি বর্ষার আগ পর্যন্ত এই কাজ চলতো। তারা খুব ভোর বেলায় কাজ শুরু করতো। মোটামুটি সূর্য ওঠার পরেই মাটি কাটা বন্ধ করে দিত। আবার পরের দিন আসতো। গেরস্থের সঙ্গে তাদের একটা কন্ট্রাক থাকতো। এবং সেখানে একটা মাপ থাকতো-কোয়া অর্থাৎ কয় কোয়া মাটি কেটেছে সেই হিসেবে পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। মাটি কাটার জায়গায় একটা ঢিবির মতো থাকতো, তারা কত সময় কাজ করবে-সেই বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। তারা এই রোদের মধ্যে সাধারণত মাটি কাটতো। অনেক সময় ফজরের আজানের আগেই চলে আসতো। পূর্ণিমা থাকলে অনেক সময় রাতের বেলায়ও কাজ করতো।
করাতি: এখন যেমন স’মিল হইছে, তখনতো স’মিল ছিলো না। এই কাঠ কাটা এবং চেরাই করার জন্য পেশাজীবীরা ছিলো, তাদেরকে বলা হতো করাতি। তাদের কাছে বড় বড় করাত থাকতো। উপরে একজন আর নিচে দুইজন থাকতো-দেড় মিটার লম্বা এবং ধারালো। যিনি ওই কাঠের মালিক বা যিনি ওই কাঠ দিয়ে কাজ করবেন-সেই সূত্রধরের সঙ্গে আলাপ করে-তার চাহিদা অনুযায়ী কাঠ চেরাই করে দিতো। পরিমাপ ঠিক রাখার জন্য এক ধরণের কালো সুতা তেল আর কায়লা দিয়ে কালো রং বানিয়ে সেই রঙে সুতা চুবিয়ে তুলতো। এরপর সুতা ধরে টাস করে ছেড়ে দিতো। তখন একটা দাগ পড়ে যেত। তখন ওই দাগ বরাবর তারা কাঠ কাটতো। এদের জীবনযাপন খুব কঠিন ছিল। এরা গেরস্থ বাড়িতে কাজ করার সময় চিড়া-মুড়ি খেতো। এরা বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।
আরো পড়ুন:
বর্ষায় প্রাকৃতিক উপায়ে ঠোঁটের আদ্রতা ধরে রাখার ৪ উপায়
বাঁশ গাছ কতদিন বাঁচে?
সূত্রধর বা সুতার: একজন সুতার কোনো কোনো সময় একই বাড়িতে টানা একমাস, দেড় মাস কাজ করতো। দেখা যেত যে, আজ একটু কাজ করলো আবার পরের দিন আসলো, তখন আবার আরেকটু করতো। এই করতে করতে দেখা যেত যে একটা আলমারি বানালো বা একটা ড্রেসিং টেবিল বানালো। যার যেটা দরকার।
নাপিত: এখন যত সেলুন আছে, তখন এতো সেলুন বা পার্লার ছিলো না। যাদের চুল কাটা দরকার বা সেভ করা দরকার তাদের চুল কেটে দিতো বা সেভ করে দিতো। বিশেষত বিশেষত বাচ্চাদের চুল কাটার জন্য নাপিত বাড়িতে যেত। বাড়ির সব বাচ্চাদের সিরিয়াল দিয়ে বসিয়ে সবার চুল কেটে দিত। এই নাপিতরা অনেক সময় টাকাও নিতো আবার অনেক সময় ধানের মৌসুমে ধান নিতো।
বেহারা: যারা পালকি বহন করতো তাদেরকে বেহারা বলা হতো। বড় পালকির জন্য চারজন থাকতো। ছোট পালকি বা ডুলির জন্য দুইজন থাকতো। এরাতো এখন হারিয়ে গেছে।
সাইকেল মেরামতকারী বা সাইকেল মেকার: আগেতো এখনকার মতো বাজার-ঘাট ছিলো না, বর্ষার সময় সাইকেলগুলোকে যখন তিন-চার মাসের জন্য ঘরে তুলে রাখতে হবে তার আগে এর আলাদা যত্ন প্রয়োজন হতো। বর্ষার আগে গ্রামে সাইকেল মেকাররা আসতো। এবং একটি গ্রামে যত সাইকেল আসতো, সবগুলো এক জায়গায় করতো। সাইকেলের পাটর্সগুলো খুলে, তেল-গ্রিজ লাগিয়ে দিতো। যাতে জং না ধরে। এবং পরবর্তীতে যাতে সাইকেল ব্যবহারের উপযোগী থাকে। দেখা যেত যে সাইকেল মেকাররা যেদিন যে গ্রামে যেত-সেদিন ওই গ্রামেই সারাদিন কাজ করতো। এমনকি ওই গ্রামের লোকজন তাকে খেতে দিতো। সারাদিনে সাইকেলগুলো ওয়েলিং করতো।
কোচোয়ান: কোচায়ানরা ঘোড়ার গাড়ি চালাতো। দুই ঘোড়ার গাড়িতেই কোচোয়ানরা বেশি থাকতো। ওগুলোকে টমটম নামেও ডাকা হতো।
সহিস: সহিস হচ্ছে যারা শখের ঘোড়া পালতো, সেই ঘোড়া দেখভাল করতো।
গাছি: এরা খেঁজুর গাছ কেটে রস বের করতো বা তাল গাছ কেটে রস বের করতো। সাধারণত খেঁজুর গাছের ক্ষেত্রে শীতের শুরুতে গাছের ডালপালা ছেটে, কাণ্ড চেছে এরপর চোঙ্গা লাগিয়ে দিতো। তার মুখে ঠিলা লাগিয়ে দিতো সন্ধ্যায়। সকালে রসভর্তি ঠিলা নামিয়ে আনতো। অনেক সময় কাঁচা রস বিক্রি করতো আবার অনেক সময় গুড় তৈরি করতো।
হাজাম: এই হাজামরা তখন সুন্নতে খাতনা করাতো। এখন যেমন ডাক্তারের কাছে নিয়ে কিশোরদের সুন্নতে খতনা করানো হয় ওই সময় এটা কোনোভাবেই করানো হতো না। সবারই হাজামের মাধ্যমে করানো হতো। তারা অনেক সময় বিনিময় হিসেবে টাকা নিতো। আবার লুঙ্গি, গামছা উপহার হিসেবে দেওয়া হতো। সুন্নতে খাতনার পরে যখন অনুষ্ঠান করা হতো, ওই অনুষ্ঠানে সমাজের লোকজনের সঙ্গে হাজামকেও দাওয়াত দেওয়া হতো।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ক সময় ক জ কর বর ষ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন
২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এবারের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির এ ফল প্রকাশ করেন।
এখন এইচএসসির ফলাফল দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষাকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাবেন।
পরীক্ষার্থীরা তিনভাবে এইচএসসির ফলাফল জানতে পারছেন। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেন।
আরও পড়ুনএইচএসসি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণে মানতে হবে ৯টি নিয়ম১৪ অক্টোবর ২০২৫শিক্ষার্থীরা ফলাফল দেখবেন যেভাবে
১.
সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট (Result) কর্নারে ক্লিক করে বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের EIIN–এর মাধ্যমে ফলাফল ডাউনলোড করতে পারবেন। সব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে Result কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের EIIN এন্ট্রি করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবেন।
২.
পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফলাফল সংগ্রহ করতে পারবেন।
৩.
নির্ধারিত Short Code–16222–এ এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল পাবেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এসএমএসের মাধ্যমে HSC Board Name (First 3 Letters) Roll Year টাইপ করে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে শিক্ষার্থীদের।
উদাহরণ: HSC Dha 123456 2024 লিখে 16222–তে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা পত্রিকা অফিসে ফলাফল পাওয়া যাবে না বলে শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ২৬ জুন। লিখিত পরীক্ষা গত ১৯ আগস্ট শেষ হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২১ থেকে ৩১ আগস্ট। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেন।
আরও পড়ুনএসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, জানা যাবে তিনভাবে১০ জুলাই ২০২৫