৩৪ বছর ধরে পত্রিকা বিলির কাজে লালমনিরহাটের নুর
Published: 16th, November 2025 GMT
ঝড়–বৃষ্টি–শীত উপেক্ষা করে ৩৪ বছর ধরে লালমনিরহাট শহরে বাইসাইকেল চালিয়ে পত্রিকা বিলির কাজ করছেন নুর ইসলাম (৫১)। বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দিনেও বিলি করেছেন পত্রিকা।
লালমনিরহাট শহরের পূর্ব থানা পাড়ার বাসিন্দা নুর ইসলাম। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিন শতাংশ জমিতে ১৯৯১ সালে টিনের চৌচালা ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। ২০০০ সালের দিকে নিজের জমানো অর্থের সঙ্গে ধারদেনা করে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারে অভাব–অনটনের কারণে পড়াশোনা এগোয়নি। বাবা রকিব আলম ও বড় ভাই সাকির আলম পত্রিকা বিলির কাজ করতেন। তাঁদের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯১ সালে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন নুর ইসলাম।
স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার নুর ইসলামের। পত্রিকা বিলির কাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তাঁর ছেলে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে (বাণিজ্য বিভাগে) পড়ছেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে লালমনিরহাট শহরের আদর্শ ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেন। ছোট মেয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে সিপি স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
নুর ইসলাম বলেন, ‘আর্থিকসহ পারিপার্শ্বিক কারণে আমি লেখাপড়া তেমন একটা শিখতে পারিনি। তবে আমার সন্তানদের যত কষ্ট হোক না কেন, ওরা যত দূর পড়তে চায়, আমি পড়াতে চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।’
প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে এজেন্টের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে বিলির কাজ শুরু করেন নুর ইসলাম। দুপুর দুইটার মধ্যে অধিকাংশ পত্রিকা বিলি হয়ে যায়। বেলা তিনটার মধ্যে অবশিষ্ট কিছু পত্রিকা বিলি শেষ করে বাসায় চলে আসেন। করোনার আগে ২০০ কপির বেশি জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্রিকা বিলির কাজ করতেন। এখন সংখ্যাটা কমে ২০০ কপির নিচে চলে এসেছে।
নুর ইসলাম বলেন, শহরের অফিস–আদালতে এখনো ছাপা পত্রিকা পড়া হয়। সাধারণ মানুষও পত্রিকা নেন, তবে মুঠোফোনে পত্রিকা পড়ার সুযোগ থাকায় ছাপা পত্রিকার পাঠক দিন দিন কমে আসছে। এতে তাঁর আয় কমে গেছে। তবে তিনি পত্রিকা বিলির কাজ বাদ দিতে চান না। এটা তাঁর নেশা ও পেশা।
লালমনিরহাট শহরের থানা পাড়ার বাসিন্দা সুহাস চন্দ্র সরকার (৬৭) বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার প্রথম দিন থেকে নুর ইসলাম এখন পর্যন্ত আমাদের বাসায় প্রথম আলো দিয়ে আসছেন। রোদ–বৃষ্টি–শীত–গরম এমনকি করোনার সময়েও তিনি পত্রিকা নিয়ে হাজির হয়েছেন একটা বাইসাইকেল চালিয়ে।’
লালমনিরহাটের প্রথম আলো পত্রিকার এজেন্ট সাজিদ আলম বলেন, নুর ইসলাম নিবেদিতপ্রাণ তাঁর কাজের প্রতি। তাঁর বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দিনও পত্রিকা বিলির কাজ করেছেন। এমনটা খুব একটা দেখা যায় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল র ক জ কর ন র ইসল ম প রথম শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৪ বছর ধরে পত্রিকা বিলির কাজে লালমনিরহাটের নুর
ঝড়–বৃষ্টি–শীত উপেক্ষা করে ৩৪ বছর ধরে লালমনিরহাট শহরে বাইসাইকেল চালিয়ে পত্রিকা বিলির কাজ করছেন নুর ইসলাম (৫১)। বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দিনেও বিলি করেছেন পত্রিকা।
লালমনিরহাট শহরের পূর্ব থানা পাড়ার বাসিন্দা নুর ইসলাম। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিন শতাংশ জমিতে ১৯৯১ সালে টিনের চৌচালা ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। ২০০০ সালের দিকে নিজের জমানো অর্থের সঙ্গে ধারদেনা করে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারে অভাব–অনটনের কারণে পড়াশোনা এগোয়নি। বাবা রকিব আলম ও বড় ভাই সাকির আলম পত্রিকা বিলির কাজ করতেন। তাঁদের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯১ সালে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন নুর ইসলাম।
স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার নুর ইসলামের। পত্রিকা বিলির কাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তাঁর ছেলে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে (বাণিজ্য বিভাগে) পড়ছেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে লালমনিরহাট শহরের আদর্শ ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেন। ছোট মেয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে সিপি স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
নুর ইসলাম বলেন, ‘আর্থিকসহ পারিপার্শ্বিক কারণে আমি লেখাপড়া তেমন একটা শিখতে পারিনি। তবে আমার সন্তানদের যত কষ্ট হোক না কেন, ওরা যত দূর পড়তে চায়, আমি পড়াতে চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।’
প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে এজেন্টের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে বিলির কাজ শুরু করেন নুর ইসলাম। দুপুর দুইটার মধ্যে অধিকাংশ পত্রিকা বিলি হয়ে যায়। বেলা তিনটার মধ্যে অবশিষ্ট কিছু পত্রিকা বিলি শেষ করে বাসায় চলে আসেন। করোনার আগে ২০০ কপির বেশি জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্রিকা বিলির কাজ করতেন। এখন সংখ্যাটা কমে ২০০ কপির নিচে চলে এসেছে।
নুর ইসলাম বলেন, শহরের অফিস–আদালতে এখনো ছাপা পত্রিকা পড়া হয়। সাধারণ মানুষও পত্রিকা নেন, তবে মুঠোফোনে পত্রিকা পড়ার সুযোগ থাকায় ছাপা পত্রিকার পাঠক দিন দিন কমে আসছে। এতে তাঁর আয় কমে গেছে। তবে তিনি পত্রিকা বিলির কাজ বাদ দিতে চান না। এটা তাঁর নেশা ও পেশা।
লালমনিরহাট শহরের থানা পাড়ার বাসিন্দা সুহাস চন্দ্র সরকার (৬৭) বলেন, ‘১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার প্রথম দিন থেকে নুর ইসলাম এখন পর্যন্ত আমাদের বাসায় প্রথম আলো দিয়ে আসছেন। রোদ–বৃষ্টি–শীত–গরম এমনকি করোনার সময়েও তিনি পত্রিকা নিয়ে হাজির হয়েছেন একটা বাইসাইকেল চালিয়ে।’
লালমনিরহাটের প্রথম আলো পত্রিকার এজেন্ট সাজিদ আলম বলেন, নুর ইসলাম নিবেদিতপ্রাণ তাঁর কাজের প্রতি। তাঁর বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর দিনও পত্রিকা বিলির কাজ করেছেন। এমনটা খুব একটা দেখা যায় না।