ফেইসবুকে সময় দেওয়ার চেয়ে বাবা মাকে সময় দেওয়া বেশি জরুরি : অতি. জেলা প্রশাসক
Published: 23rd, July 2025 GMT
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাশফাকুর রহমান বলেছেন, ফেইসবুকে সময় দেওয়ার চেয়ে তোমার মাকে সময় দেও বেশি, তোমার ভাইকে সময় দেও বেশি, তোমার বন্ধুকে সময় দেওয়ার চেয়ে তোমার বাবাকে সময় দেওয়া বেশি জরুরি।
তোমরা জখন বাসায় যাও তোমার বাবা,মার দিকে তাকাবে দেখবে কতো ভালো লাগে। বাবা,মাকে জড়িয়ে ধরবা দেখবে ভালো লাগবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের বিজ্ঞান ক্লাবের আয়োজনে ৪র্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, ভালো মানুষ হতে হবে, ভালো অফিসার হওয়ার চেয়ে, ভালো পলিটিশিয়ান হওয়ার চেয়ে, ভলো ব্যবসায়ী হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়াটাই ইনপটেন, ভালো মানুষ হওয়াটাই অনেক বেশি ইনপটেন।
আমাদের দেশে ভালো মানুষের অনেক অভাব, দায়ীত্বশীল মানুষ, একটা সুনাগরিক যে নিজেকে নিয়ে নিজে গর্ব করতে পারে।
তোমার মধ্যে এই ভাবনাটা থাকতে হবে যে আমি নিজেকে নিজের আচরন, নিজের কাজ নিজের চিন্তা নিয়ে গর্ব করতে পারি সেই মানসিকতায় তৈরি হওয়া।
সভাপতির বক্তব্য গিয়াসউদ্দিন ইসলামকি মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা,অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, মানবিক গুনাবলী যদি থাকে, আর যেই শিক্ষা আমরা অর্জন করলাম এটাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে এই শিক্ষার গুরুত্ব আছে।
শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা, আর জ্ঞান অর্জন করার পর সেটাকে ব্যবহার করা। অর্জিত জ্ঞান দুইভাবে ব্যবহার করা যায়, একটা হলো ভালো পথে, আরেকটা হলো খারাপ পথে।
এখন পছন্দ করে নিতে হবে সে এই জ্ঞান কোন পথে ব্যবহার করবে ভালো নাকি খারাপ। ভালো মানুষ হতে হবে, যে ভালো মানুষ হবে সে নিশ্চয়ই এ জ্ঞান ভালো পথে কাজে লাগাবে।
উক্ত অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের উপাধক্ষ্য মীর মোসাদ্দেক হোসেনের পরিচালানায় উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, আবুল হোসেন, শিষির ঘোষ অমর, রিফাত হোসেন, শিক্ষক আবু তাহের, আবু তালেব, উমর ফারুক, এইচ,এম,ফারুক, গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজ ৪র্থ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আবু সুফিয়ান শুভ প্রমূখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ফ সব ক ন র য়ণগঞ জ গ য় সউদ দ ন ইসল ম সময় দ ও
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩