পোশাক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নোটিশের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চায় এইচআরএফবি
Published: 24th, July 2025 GMT
সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক–সংক্রান্ত নির্দেশনাকে ‘পশ্চাৎপদ’ আখ্যা দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। এ ধরনের নির্দেশনা জারি ও পরে তা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ও তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ওই নির্দেশনা দেওয়া ও পরে প্রত্যাহারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এইচআরএফবি বলেছে, ওই নির্দেশনাটি নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং নারীদের ব্যক্তি, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং তাঁদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন, যা সংবিধানের ২৮(১), ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
এইচআরএফবির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাটি সংবিধানের সব নাগরিককে ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার অধিকারেরও লঙ্ঘন। এ ধরনের পশ্চাৎপদ নির্দেশনা জারি ও পরে তা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ও তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছে এইচআরএফবি।
এইচআরএফবির বিবৃতিতে সংগঠনটির ২৩ জন সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সংগঠনের এক্সপার্ট (বিশেষজ্ঞ) হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল ও রাজা দেবাশীষ রায়, এইচআরএফবির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক জেড আই খান পান্না, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য শাহীন আনাম, সারা হোসেন ও সঞ্জীব দ্রং এবং সদস্য ইফতেখারুজ্জামান, ফওজিয়া মোসলেম, খুশি কবির, শিপন কুমার রবিদাস, পল্লব চাকমা ও গীতা দাস।
এর আগে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী পোশাক পরতে হবে, আর কী পরা যাবে না, তা উল্লেখ করে নির্দেশনা জারি করে। গতকাল বুধবার রাতে এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে। পরে আজ দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিবৃতিতে নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার কথা জানানো হয়।
ওই নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার কথা বলা হয়। নারীদের শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস, অর্থাৎ ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়। পাশাপাশি ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেড স্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয় নারীদের। পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়। পরিহার করতে বলা হয় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।
জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি চায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামওবাংলাদেশ ব্যাংকে পোশাকবিষয়ক নীতিমালা করার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শম্পা বসু ও সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা নূরী আজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নীতিমালায় যে নির্দেশনা ছিল, তা পড়লে অবাক হতে হয়। সমালোচনার মুখে তারা এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করলেও এ ধরনের নির্দেশনা বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি অশনিসংকেত।
বিবৃতিতে মহিলা ফোরাম বলেছে, একদিকে নারীদের ফুটবল খেলায় হামলা হচ্ছে, নারী শিল্পীরা কোথাও গেলে মব সহিংসতা হচ্ছেন, একদল কূপমণ্ডুক রাজনীতিবিদ প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছেন, আরেক দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো পেশাদার প্রতিষ্ঠান নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য ঠিক করে দিতে চাইছে, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে নারীর স্বচ্ছন্দ বিচরণের রাস্তাকে অবরুদ্ধ করা।
এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একজন মানুষ কী পোশাক পরবেন, কোথায় যাবেন, কার সঙ্গে মিশবেন—এগুলো একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। নারী বলেই পুরুষতন্ত্রের দোহাই দিয়ে তার ওপর আপনার মর্জি চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানোর প্রত্যয় ছিল এই গণ–অভ্যুত্থানে। কিন্তু একের পর এক সেই প্রত্যয় ধ্বংস করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে একটি গোষ্ঠী।’
নারীর জন্য সব ক্ষেত্রে নানা রকম মনস্তাত্ত্বিক–সামাজিক বাধা ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে তাঁকে ঘরবন্দী করার অপপ্রয়াস চলছে বলেও অভিযোগ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। তাঁরা বলেছে, এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অবিলম্বে এই অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি দাবির পাশাপাশি নারীসমাজকে এসবের যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি রাখার আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র জন য হ র কর ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবহনশ্রমিকদের নির্বাচন কাল, চলবে না প্রাইম মুভারসহ কনটেইনারবাহী গাড়ি
আগামীকাল সোমবার কনটেইনার পরিবহনের গাড়িচালক ও সহকারীদের সংগঠন চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ট্রেলার, কংক্রিট মিক্সচার, ফ্ল্যাটবেড ও ড্রাম ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে কাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে এ–সংক্রান্ত নির্বাচন উপপরিষদ।
কাল সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, ডিপো ও বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার আনা-নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
বন্দরসচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কনটেইনার পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বন্দরে কনটেইনার ওঠানো-নামানো ও পরিবহনের কাজে ব্যাহত হবে। তাই পালাক্রমে ভোট দিয়ে যাতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, সে জন্য তাঁদের আহ্বান জানাই।’
প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে প্রতিদিন গড়ে রপ্তানি পণ্যবাহী দুই হাজার কনটেইনার ডিপোগুলো থেকে বন্দরে নেওয়া হয়। আবার আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোতে নেওয়া হয় এ ধরনের গাড়িতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সংগঠনটির সদস্যরা গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রেখে ভোট দিতে পারেন। তাহলে কাজের ক্ষতি হবে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির নির্বাচন উপপরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোটদানের সুবিধার জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চাইলে ভোট দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন যে কেউ। আশা করি দুপুরের পর থেকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
ওয়াহিদুজ্জামান জাহিদ বলেন, কনটেইনার পরিবহনের সাড়ে ৯ হাজার প্রাইম মুভার ট্রেলার রয়েছে। ভোটার হলেন ১০ হাজার ৪৫২ জন। তিন বছর মেয়াদে এই নির্বাচনে ২৫ পদে ৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।