ইইউতে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৮% বেড়েছে
Published: 25th, July 2025 GMT
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে (জানুয়ারি-মে) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে বাজারটিতে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।
ইউরোস্ট্যাটের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইইউর বাজারে মোট ৩ হাজার ৯৭১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১২ শতাংশ।
ইইউতে শীর্ষ দুই তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন ও বাংলাদেশ। তবে পোশাক রপ্তানিতে চীনের কাছাকাছি অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দুই দেশের রপ্তানির ব্যবধান ৪২ কোটি ডলার। চীন ও বাংলাদেশের পর ইইউতে অন্য বড় রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় গন্তব্য হচ্ছে ইইউ। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশ হয়েছে ইইউর বাজারে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ৯৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৮২৩ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
সামগ্রিকভাবে বাজারটিতে রপ্তানি বাড়লেও গত মে মাস ভালো যায়নি। ওই মাসে বাংলাদেশ ইইউতে ১৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের মে মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম।
মে মাসে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমলেও চীনের বেড়েছে। চীন রপ্তানি করেছে ১৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের ১৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানির তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইইউতে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে)) ১ হাজার ১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে চীন, যা গত বছরের একই সময়ের ৮৩৫ কোটি ডলারের রপ্তানির তুলনায় ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।
একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে গত এপ্রিল থেকে বাজারটিতে অস্থিরতা চলছে। চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে চীনের অনেক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইইউর বাজারে ঝুঁকছে। এ কারণেই ইইউতে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে বলে জানান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশি পণ্যে আরোপ করা ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কমানো না হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমবে। পাশাপাশি ইইউর বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ইইউর বাজারে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৮৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে তুরস্ক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। এ ছাড়া ভারত চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। গত মে মাসে ভারত ৫০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ শতাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম প ইইউর ব জ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র
দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি বাণিজ্য চুক্তি কাঠামোয় পৌঁছেছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ইইউর সব রপ্তানি ওপর শুল্ক থাকবে ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ইউরোপীয় বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যে শুল্ক থাকবে শূন্য শতাংশ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সময় রোববার (২৭ জুলাই) স্কটল্যান্ডের টার্নবেরিতে গলফ রিসোর্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়। ঘোষণা আসে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে একক শুল্ক আরোপ করা হবে। এই হারটি পূর্বঘোষিত ৩০ শতাংশ শুল্কের অর্ধেক, যা ট্রাম্প শুক্রবার থেকে কার্যকর করার হুমকি দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন:
ট্রাম্পের মধ্যস্থতার পরও কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাত অব্যাহত
পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক হতে চলেছে: ট্রাম্প
ভন ডার লায়েন এই চুক্তিকে ‘স্থিতিশীলতা আনার একটি বড় সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এই চুক্তি আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করবে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে।”
অন্যদিকে ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়’ চুক্তি আখ্যা দেন। ট্রাম্প আরো বলেন, “এটা একটি ভালো চুক্তি, সবার জন্যই লাভজনক। এটি আমাদের একত্রিত করবে।”
ভন ডার লায়েন ট্রাম্পকে “একজন কঠিন আলোচক, কিন্তু একইসঙ্গে একজন দক্ষ চুক্তিকারক” হিসেবে প্রশংসা করেন।
চুক্তির অংশ হিসেবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে, যার মধ্যে থাকবে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ও জ্বালানি খাতে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের খরচ। এই বিনিয়োগ ইউরোপকে রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন উরসুলা ভন ডার লায়েন।
বিমানের যন্ত্রাংশ, কিছু রাসায়নিক ও কৃষিপণ্যসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে কোনো শুল্ক বসানো হবে না। সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে একটি আলাদা চুক্তির ঘোষণা শিগগিরই আসতে পারে।
তবে বিশ্বব্যাপী স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
ইইউর পাশাপাশি, ট্রাম্প যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গেও ইতিমধ্যে শুল্ক চুক্তি করেছেন, তবে তিনি ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি।
এদিন, আলোচনার আগে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ১ আগস্টের পর আর কোনো সময়সীমা থাকবে না। যারা আলোচনায় ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য শুল্ক কার্যকর হবে। তবে বড় অর্থনীতিগুলোর জন্য ভবিষ্যতে আলোচনা চালু রাখা যেতে পারে।
ঢাকা/ফিরোজ