আসামের সঙ্গে সিলেটের বহু অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে: নাহিদ
Published: 25th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এই বাংলার পক্ষে দাঁড়িয়েছে সিলেট। তবে, তখন আমরা আমাদের পূর্ণ সিলেট পাইনি। আসামের সঙ্গে সিলেটের বহু অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই পূর্ববঙ্গকে ঠকানো হয়েছে সেই বৃটিশ আমল থেকে। পাকিস্তান এবং আওয়ামী লীগ আমলেও সিলেটকে ঠকানো হয়েছে। সিলেটকে গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে ঠকানো হয়েছে।”
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে পদযাত্রা শুরু হয় এনসিপির।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনা আমাদের ওপর ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র চাপিয়ে গেছে: নাহিদ
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই শেষ হয়নি: নাহিদ
দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেটে ‘জুলাই পদযাত্রা’ করেছে এনসিপি)।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “সিলেট বাংলাদেশের আত্মপরিচয়। বহু জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। ১৯৪১ ও ১৯৭১ এমনকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিলেট বারবার রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা চায়, বাংলাদেশ বহু সংস্কতির বহু ভাষার দেশ হবে- সিলেট তার অন্যতম প্রতীক।”
জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেটের প্রবাসীদের অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, “সিলেটের প্রবাসীরা গণঅভ্যুত্থানে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা তাদের ভুলব না। এই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চায়, প্রবাসীরা বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণের অংশ হবে।”
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করেই এনসিপি উঠে এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এসেছি। এনসিপি কোনো চাঁদাবাজ কিংবা টেন্ডারবাজ দলের নাম নয়। সংকট থেকে সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়েই এনসিপি উঠে এসেছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী লেখক ও নেতারা এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তাদের প্রতিহত করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।”
সিলেটে এনসিপিকে শক্তিশালী করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অর্পিতা আপা, এহতেশাম ভাই, জুনায়েদ ভাইয়ের নেতৃত্বে আপনারা এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—পরবর্তী বাংলাদেশ হবে জনগণের বাংলাদেশ।”
সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশামুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, সিনিয়র মুখ্য-সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির, এনসিপির যুগ্ম সম্পাদক মর্তুজা সেলিমসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে সিলেটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নূর/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম এনস প র প রব স আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।